ঢাকা: রোববার সকাল দশটা দশ মিনিটে এই শতকের অন্যতম একটি বাইনারি মুহূর্ত অতিক্রম হবে। এ সময় ও দিনটিকে লিখতে হবে ১০.১০ মিনিট, ১০.১০.১০।
বিশেষ এই মুহূর্তটি ঢাকায় উদযাপনের জন্য বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার এন্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) কর্মসূচি ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
বাইনারি মুহূর্ত উদযাপন অনুষ্ঠানের সমন্বয়কারী বিপ্লব ঘোষ রাহুল শনিবার বাংলানিউজকে জানান, বাইনারি মুহূর্তে অর্থাৎ সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল প্রাঙ্গন থেকে শুরু হয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফে চত্ত্বরে শেষ হবে।
শিক্ষার্থীদের জন্য গণিত ও আইটি প্রতিযোগিতা, কুইজ ও উপস্থিত বক্তৃতার মাধ্যমে বাইনারি মুহূর্তটি উদযাপিত হবে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, ‘বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বাইনারি মুহূর্ত উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া বুয়েটের উপাচার্য ড. এস এম নজরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন। ’
বেসিসের সাধারণ সম্পাদক ফোরকান বিন কাশেম বলেন, ‘বাইনারি সংখ্যা এবং এর প্রায়োগিক ব্যবহারের ফসল তথ্যপ্রযুক্তি মানব সভ্যতাকে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। ’
বাইনারি সংখ্যা কি?
সবাই জানে কম্পিউটারে শুধু ০ ও ১ সংখ্যা দিয়ে সকল কাজ সম্পাদিত হয়। কিন্তু এর কারণ পরিষ্কারভাবে অনেকেরই জানা নেই। অবশ্য প্রোগ্রামার বা কম্পিউটার ইন্জিনিয়ারদের সবাই এ সম্পর্কে জানেন।
দৈনন্দিন কাজে যে সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করি তার ভিত্তি হল ১০, একে ডেসিমাল পদ্ধতি বলা হয়। বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতির ভিত্তি ২। এখন প্রশ্ন হল সংখ্যার ভিত্তি বলতে কি বোঝানো হচ্ছে? ধরা যাক ডেসিমাল পদ্ধতিতে একটি সংখ্যা ১২৮। সংখ্যাটির প্রতিটি অংকের একটি করে স্থানীয় মান আছে।
১২৮.১ কে আমরা লিখতে পারি এভাবে ১২৮.১ = একশত + বিশ + আট + দশমিক এক = ১*১০০ + ২*১০ * + ৮*১ + ২ *০.১ = ১*১০^২ + ২ *১০^১ + ৮ * ১০০ + ৮*১০^-১ ডেসিমাল পদ্ধতিতে এভাবেই ১০ এর ঘাত দ্বারা যেকোনো সংখ্যাকে প্রকাশ করা হয়, বাইনারি পদ্ধতিতে প্রকাশ করা হয় ২ এর ঘাত দ্বারা।
ডেসিমাল পদ্ধতিতে ১১ কে বাইনারিতে লেখা হয় ১০১১, এবার দেখুন ১০১১ = ১*২^৩ + ০*২^২ + ১*২^১ + ১*২^০।
প্রতিটি বাইনারি অংককে বিট বলা হয়। ১১০১ একটি ৪ বিট সংখ্যা, ১১১১০১০১ হলো একটি ৮ বিট সংখ্যা। পরপর ৮টি বিটের সিকোয়েন্সকে বাইট বলা হয়।
কম্পিউটারে কেন বাইনারি সংখ্যা ব্যবহার করা হয়?
কম্পিউটারে ইলেকট্রনিক সার্কিটে তথ্য সংরণ করা হয়। সার্কিটগুলো দুই অবস্থায় থাকতে পারে “চালু”, অথবা “বন্ধ”। বন্ধ অবস্থা ০ এবং চালু অবস্থা ১ দ্বারা নির্দেশিত হয়। ধরা যাক ১১ সংখ্যাটিকে কম্পিউটারের একটি মেমরি সেলে সংরণ করতে হবে। ইনপুট দেবার পর কম্পিউটার ১১ কে রূপান্তরিত করে বাইনারি ১০১১ এ প্রকাশ করবে যা একটি ৪-বিট সংখ্যা। ৪-বিটের মেমরি সেলে ৪টি সার্কিট থাকে (টেকনিক্যাল ভাষায় যাদের নাম ফিপ-ফপ)।
ইংরেজি বা বাংলা শব্দ টি কিভাবে মেমোরিতে সংরক্ষন করা হয়?
এখানেও বাইনারি! ASCII Code, UNICODE শব্দগুলো সবার পরিচিত। প্রতিটি অরের জন্য একটি বাইনারি কোড আছে। যেমন ধরুন আপনি “ন” অরটি সংরণ করতে চান। ন এর ASCII code হলো ০১১০০০১০ যা কম্পিউটারের আগে থেকেই জানানো থাকে। আপনি ‘ন’ ইনপুট দিলে কম্পিউটার ০১১০০০১০ কে মেমরি সেলে সংরণ করবে, এক্ষেত্রে নূন্যতম ৮-বিট মেমরি সেল দরকার। এভাবে প্রতিটি ক্যারেক্টারের unique কোড দ্বারা কম্পিউটার ইনপুট সনাক্ত ও সংরণ করে। ASCII হলো ৮ বিটের কোড , Unicode হলো ১৬ বিটের কোড।
কম্পিউটারে যে কাজই করা হোক না কেন, সেটাকে ডিকোড করে ০ ও ১ এ পরিণত করা হয়। মনিটরের সুন্দর wallpaper কম্পিউটারের কাছে বিভিন্ন সার্কিটে বিদ্যুতের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি, ০ বা ১! আমরা কম্পিউটারের মেমরিতে সংরক্ষিত যে গান শুনি তাও কিন্তু ০ ও ১।
বাংলাদেশ সময়: ২৩১০ ঘণ্টা, ৯ অক্টোবর ২০১০