প্রায়ই সাবমেরিন কেবল কাটা পড়ার কারণে বাংলাদেশ নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে দেশজুড়ে ভোক্তান্তি পোহাতে হয় ইন্টারনেট গ্রাহকদের।
এরই মধ্যে বিকল্প এবং দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল স্থাপনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ মুহূর্তে চলছে বিকল্প সাবমেরিন কেবল স্থাপনের গাইডলাইন তৈরির কাজ। বিএসসিসিএল প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন এ বিষয়ে বাংলানিউজকে দিয়েছেন একান্ত সাক্ষাৎকার। এ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শরিফুল ইসলাম ও মনোয়ারুল ইসলাম
সিমিউইফোর সাবমেরিন কেবল কনসোর্টিয়ামের সদস্য বাংলাদেশ। এ কনসোর্টিয়ামে ১৪টি দেশের ১৬টি পার্টি আছে। এদের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। সিমিউইফোর কনসোর্টিয়ামের সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশের ইন্টারনেট গতি আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। সঙ্গে বর্হিবিশ্বের সঙ্গে টেলিযোগাযোগ খরচটাও কমে এসেছে।
উল্লেখ্য, একটি মাত্র সাবমেরিন কেবলের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় তাৎক্ষণিক কারিগরি ত্রুটির কারণে প্রায়ই বর্হিবিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, ব্যাকআপ সুবিধা নিশ্চিত করতেই বিকল্প সাবমেরিন কেবল স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অচিরেই তথ্যপ্রযুক্তির মানোন্নয়ন, বহির্বিশ্বের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ এবং বিদ্যমান ইন্টারনেট গতি বাড়াতে বাংলাদেশ নতুন একটি সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বলে জানান।
একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এ মুহূর্তে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি) সাবমেরিন কেবল স্থাপনের কাজ শুরু করতে প্রয়োজনীয় গাইডলাইন নিয়ে কাজ করছে। এ গাইডলাইনগুলো সরকারি অনুমোদনের পর পুরো প্রকল্প বাস্তবায়নে ১৫ থেকে ১৮ মাস সময় প্রয়োজন হবে।
এরই মধ্যে প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল স্থাপনের জন্য বিএসসিসিএল সরকারের কাছে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ের সম্ভাব্য খরচের সুপারিশও করেছে বলে তিনি জানান।
প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন বলেন, এ নতুন সাবমেরিন কেবল দেশের বিকল্প সাবমেরিন কেবল হিসেবে কাজ করবে। অর্থাৎ এ মুহূর্তে বাংলাদেশের একমাত্র সাবমেরিন কেবল সিমিউইফোর কোনো কারণে কারিগরি ত্রুটির সম্মুখীন হলে সে সময় অবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ রক্ষা করবে প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল।
এ সম্পর্কে তিনি জানান, নতুন সাবমেরিন কেবল পুরনো সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে আন্তঃসংযোগে ব্যবহৃত হবে। আর দুটি কেবলের রুটও হবে ভিন্ন ভিন্ন। তাছাড়া নতুন কেবলটিকে এমনভাবে স্থাপন করা হবে যেন একটি কেটে গেলে অন্যটির মাধ্যমে পুরো দেশের তাৎক্ষণিক ব্যবহৃত ব্যান্ডউইথে কোনো ঘাটতি না হয়। এটি ব্যাকআপ হিসেবেও কাজ করবে।
প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন দেশের ইন্টারনেট গতি বাড়ার প্রশ্নে বাংলানিউজকে বলেন, বিকল্প দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল স্থাপনে দেশের ইন্টারনেট গতি তুলনামূলকভাবে বাড়বে। তার ভাষ্যমতে, নতুন কেবলে নতুন ব্যান্ডউইথ যুক্ত হবে যা ইন্টারনেটের প্রচলিত গতিকে আরও গতিশীল করবে। এর ফলে ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ কী পরিমাণ কমবে এ বিষয়ে অবশ্য তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
তবে সরকারের ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের মূল্য আরও কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এছাড়াও দেশব্যাপী স্কুল কলেজগুলোতে একটি নির্দিষ্ট স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট দেওয়া যায় কিনা এ নিয়েও সরকারের পরিকল্পনা আছে।
তার ভাষ্যমতে, এ মুহূর্তে উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। যা ডিজিটাল বাংলাদেশে গড়তে সহায়ক হবে। অচিরেই সরকার এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে কাজ শুরু করবেন বলেও তিনি জানান।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৮১৮, অক্টোবর ২৫, ২০১০