ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

অনলাইন বিজ্ঞাপনই জনপ্রিয় হচ্ছে

শেরিফ আল সায়ার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১২
অনলাইন বিজ্ঞাপনই জনপ্রিয় হচ্ছে

কোনো অজানা অচেনা শহরে সফর। কিছুই চেনা নেই।

থাকা-খাওয়ার কোনো তথ্যই হাতের কাছে নেই। অনেকটাই তথ্যশূন্য সফর।

ঠিক সে মুহূর্তে মোবাইল ফোনই ভরসা। গুগল সার্চে ঢুকে যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছেন, সে স্থানটির নাম দিয়ে সার্চ দিন। চটজলদি হাজারো তথ্য পেয়ে যাবেন অচেনা শহরটি সম্পর্কে। পাবেন অসংখ্য নামী-দামী হোটেলের তথ্যও। আপনার কাছাকাছি একটি হোটেলের নামও উঠে আসবে মোবাইল স্ক্রিনে। সেখানে ‘কল’ নামে একটি অপশন থাকবে। এতে ক্লিক করলেই সেই হোটেলে কল চলে যাবে।

এভাবেই গুগল অর্থ উপার্জন করছে। এ ‘কল’ আইকনটাই তাদের বিজ্ঞাপন। যে হোটেলে কল চলে গেল সেই হোটেল প্রতিমাসে গুগলকে টাকা দেয়।

বিশ্বের সব বড় বড় প্রতিষ্ঠান এখন তাদের বিজ্ঞাপন মানুষের কাছে পৌছে দিতে চাচ্ছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট এসব ডিভাইসে বিজ্ঞাপন তৈরি নিয়েই ব্যাপক কাজ শুরু হয়েছে।

অথচ ক`বছর আগেও প্রিন্ট মিডিয়ার বিজ্ঞাপনের রমরমা অবস্থা ছিল। এরপর অনলাইন বিজ্ঞাপন এসে কিছুটা বিপাকে ফেলেছে প্রিন্ট মিডিয়াকে। তারপরও প্রিন্ট মিডিয়া সামাল দিয়ে উঠছিল। কিন্তু বর্তমান অবাধ তথ্যনির্ভর প্রযুক্তিবিশ্বে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সব তথ্য তুলে ধরার সুযোগ নিতে চাইছে যেকোনো প্রতিষ্ঠান।

কারণ মোবাইল ফোনে একইসঙ্গে ক্রেতার লোকেশন ট্র্যাক করা যায়। এমনকি প্রতিষ্ঠানটি কোথায়  বা পণ্যটি কোথায় পাওয়া যাবে তার ম্যাপও মোবাইলের মাধ্যমে দিয়ে দেওয়া যায়। সঙ্গে তো ক্যালান্ডার অ্যালার্টও দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই মোবাইল বিজ্ঞাপনের বাজার জমে উঠছে--- বিশেষজ্ঞেরা এমনটাই মনে করছেন।

জরিপে উঠে এসেছে, এ বছর মোবাইলবিশ্বে এখন পর্যন্ত বিজ্ঞাপনে খরচ হয়েছে ২ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। মোবাইল অ্যাড তৈরিকৃত প্রতিষ্ঠান ফ্লাওয়ার্স ডটকমের সভাপতি ম্যাকক্যান এ বিষয়ে বলেছেন, মোবাইল ফোন হলো আমাদের বর্তমান ও  ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি। এখন থেকেই জনপ্রিয় সব প্রতিষ্ঠান মোবাইল ফোনে বিজ্ঞাপন দেওয়া শুরু করে দিয়েছে। এর মধ্যে গুগল, অ্যাপল এবং ফেসবুক অন্যতম।

শুধু তাই নয়, মোবাইলে অ্যাড স্পেসের জন্য খরচও অত্যন্ত কম। প্রিন্ট মিডিয়ারও চেয়ে অনেক কমে নির্দিষ্ট সংখ্যাক ক্রেতার কাছে পৌছে যাচ্ছে হালফিল তথ্য। এ ছাড়াও যেসব প্রতিষ্ঠান অনলাইন কিংবা মোবাইলে বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন তারাও জানতে পারছে বিজ্ঞাপনটি কাজে আসছে কি না। কিংবা ক`জন তার তথ্যটি একবার হলেও ক্লিক করে দেখছেন। এতে করে বিজ্ঞাপনে অর্থ ব্যয় পরিপূর্ণতা পাচ্ছে। যা প্রিন্ট মিডিয়ার বিজ্ঞাপনে কখনই সম্ভব নয়।

ক`দিন আগেই ফেসবুক সূত্র জানিয়েছে, মোবাইল ফোনের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাদের প্রতিষ্ঠান ১৫ কোটি মার্কিন ডলার আয় করেছে। যা মোট মুনাফার ১৪ ভাগ। প্যানডোরা থেকেও জানানো হয়, মোট মুনাফার ৫৮ ভাগ এসেছে মোবাইল ফোনের বিজ্ঞাপন থেকে।

এ হিসাবে পিছিয়ে নেই গুগলও। তারাও মোবাইল ফোনের বিজ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে আয় করেছে মোট আয়ের ৫৬ ভাগ। এদিকে টুইটার এ বিষয়ে কোনো তথ্য না দিলেও ভবিষ্যতে মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই সব প্রতিষ্ঠান অর্থ উপার্জন করবে বলে জানিয়েছে।

তবে এখনো এগিয়ে আছে গুগল। প্রযুক্তিবিশেষজ্ঞরাও বলছেন, মোবাইল ফোনে বিজ্ঞাপন যত জনপ্রিয় হবে, গুগলের আয়ও তত বাড়বে। কারণ অধিকাংশ প্রযুক্তিপ্রেমী যেকোনো তথ্যের জন্য গুগলের ওপরই প্রথম নির্ভর করেন।

গুগলের তথ্য মতে, খাবার দোকানের তথ্য খুঁজতে গিয়ে ৩০ ভাগ মানুষ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে গুগলে ঢুকেছেন। আর  ২৫ ভাগ মানুষ মোবাইল ফোন দিয়ে গুগলে এসেছেন বিভিন্ন ফিল্মের তথ্যের সন্ধানে।
তবে গুগল মূলত এগিয়ে গেছে ‘ক্লিক টু কল’ বিজ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে। এ বিজ্ঞাপনটি শুরু হওয়ার পর থেকে  ‘স্টারউড হোটেলে’র মোবাইল বুকিং বেড়েছে ২০ ভাগ।

তবে গুগলের প্রধান নির্বাহী ল্যারি পেজ সব মন্তব্য উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, ``আমরা চাই না কেউ কারও জায়গা দখল করুক। এটা মোবাইল বনাম ডেস্কটপ যুদ্ধ নয়। তবে আমরা অচিরেই এমন কিছু নিয়ে কাজ করবো যা একই সঙ্গে মোবাইল, ডেস্কটপ এবং টিভিতে বিজ্ঞাপন হিসেবে ব্যবহারযোগ্য। ``

অনেকেই মনে করছিলেন গুগুলের চেয়ে ফেসবুক এগিয়ে। কিন্তু ফেসবুক পিছিয়ে আছে কিছু কারিগরি কারণে। যেমন ফেসবুকের ওয়েব অ্যাডগুলো থাকে পেইজের ডান পাশে। কিন্তু মোবাইলের মাধ্যমে যারা ফেসবুকে ঢুকেন তারা স্ক্রিনে সে অংশটা দেখতে পান না। তবে বর্তমানে ফেসবুকে তাদের নিউজফিডে বিজ্ঞাপন পরিচালনা করছে।

যখন বিজ্ঞাপন নিয়ে সারাবিশ্বে আলোচনা-সমালোচনা তখন প্রযুক্তিপ্রেমীদের মনে করিয়ে দেয় মিশেল মোরিজের এক বিখ্যাত উক্তি। যিনি গুগল ও লিঙ্কডইনের মতো প্রতিষ্ঠানে অর্থায়ন করেছেন। তিনি বহু বছর আগে একবার বলেছিলেন, ``মানুষ কখনই বিজ্ঞাপনের দিকে নজর দেয় না। কোন পণ্যের কত দাম তা তারা বাজারে গিয়েই দেখে। কিন্তু তারপরও বিজ্ঞাপনদাতাদের অন্য কোনো পথ নেই। তাদের সে পথেই যেতে হবে, যে পথে মানুষ হাঁটে। ``

বাংলাদেশ সময় ১৩৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১২
সম্পাদনা: সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।