এবারও ঈদে বাড়িতে যাবেন জাকির হোসেন। সরকারি এ চাকরিজীবি মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন বেশ আগে থেকেই।
কারণ ঈদে বাড়ির যাওয়ার ট্রেনের টিকিট এবার তিনি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে পারবেন। অফিস বন্ধের পর ১৫ নভেম্বরের ট্রেনে তিনি বাড়ি ফিরবেন। আর নিয়ম অনুযায়ী ৬ নভেম্বর তাকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে টিকিট কাটতে হবে।
আগেভাগে সব ঝক্কিঝামেলা শেষ করতে ৫ নভেম্বর বিকেলে ফার্মগেটের গ্রামীণফোন গ্রাহক সেবাকেন্দ্র থেকে সব ধরনের পরামর্শ গ্রহণ করেন জাকির হোসেন।
ঈদে ট্রেনের টিকিট ছাড়া হবে রাত ১২টায়। বেলা সাড়ে ১১টা বাজতে না বাজতেই মোবাইল ফোন ও পরিবারের ৩ সদস্য নিয়ে জাকির প্রস্তুত। ১২টা বাজতেই টিকিট কাটার নিয়ম দেখে দেখে মোবাইল ফোনের বাটন চাপতে শুরু করলেন জাকির হোসেন।
তবে মোবাইল ফোনে নতুন এ পদ্ধতি তাকে স্বস্তি দিচ্ছে। পর পর কতগুলো ধাপ অতিক্রম করে শেষ ধাপে এসে ডিসকানেক্ট হয়ে গেল পুরো প্রোগ্রামটি। এভাবে ১০ থেকে ১৫ বার এ চেষ্টা করতে ঘড়িতে বেজে গেল রাত সাড়ে ১২টা।
পরিবারের অন্য সবার মনের ভেতরও কেমন যেন অজানা উৎকণ্ঠা। সবাই চিন্তায় পড়ে গেল এবার বাড়িতে যাওয়া হবে তো! একের পর এক চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত হতাশ হলেন জাকির হোসেন। একসময় টিকিটের চিন্তা বাদ দিয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়েন।
তবে জাকির সাহেবের কেমন যেন ঘুম আসছে না। ঘুমের মধ্যে সে আবার টিকিট কাটার চেষ্টা করতে থাকেন। এভাবে রাত পেরিয়ে ভোর। সাড়ে ৬টার দিকে অনেকটা বিফল হয়েই আবারও চেষ্টা শুরু করেন তিনি। এবারের চেষ্টা তার বিফলে যায়নি।
এবার প্রথমেই পেয়ে গেলেন ট্রেনের ৪টি টিকিটের ‘করফারমেশন’ বার্তা। তবে সেখানে আসেনি ট্রেনের সিট নম্বর। এজন্য তাকে আরও বেশকিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। করফারমেশন বার্তা পেয়ে মনে একটু শান্তি পেলেও সিট নম্বর পাওয়া নিয়ে আবারও উৎকণ্ঠা। অবশেষে সকাল ৯টায় পেলেন সিট নম্বর। আবারও ফার্মগেটের গ্রামীণফোন গ্রাহক সেবাকেন্দ্র থেকে সংগ্রহ করলেন বহু প্রত্যাশিত ট্রেনের ৪টি টিকিট।
এ গল্পটা শুধু একজন জাকির হোসেনের কথা। তার মতো হাজারো ট্রেনযাত্রীকে এভাবেই টিকিট সংগ্রহ করে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। মোবাইল সেবাদাতাদের নেটওয়ার্ক সিস্টেমের বিড়ম্বনার পড়ে এভাবেই টিকিট কাটছেন ঈদে ঘরে ফেরা মানুষ।
মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এভাবে টিকিট বিক্রির সিদ্ধান্তটি সবার কাছে সুখবর মনে হলেও এখন তা কিছুটা বিড়ম্বনায় মধ্যেই রয়ে গেছে। টিকিট নিশ্চিতের কঠিন এ পদ্ধতি অনেক মোবাইল ফোনে ব্যবহারযোগ্য নয় বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। তাই এ সিস্টেম সাধারণ জনগণের জন্য আরও সহজবোধ্য করে তুলতে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ একান্ত কাম্য।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৭৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৬, ২০১০