বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট স্থাপনের পরিকল্পনা কী অবস্থায় আছে এ বিষয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার (বিটিআরসি) স্যাটেলাইট প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ক মেজর এমএ কাশেম (অব.) বাংলানিউজকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শরিফুল ইসলাম এবং মনোয়ারুল ইসলাম
বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট স্থাপনের সবশেষ অগ্রগতির প্রশ্নে স্যাটেলাইট প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ক মেজর এমএ কাশেম (অব.) বাংলানিউজকে বলেন, এ মুহূর্তে স্যাটেলাইট স্থাপনের সার্বিক বিষয় সমন্বয় করতে স্যাটেলাইট বিশেষজ্ঞ খোঁজার কাজ চলছে।
এ নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে বিশেষজ্ঞ না পাওয়ায় আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ খোঁজা হচ্ছে। এরই মধ্যে এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়ায় আগামী ১০ নভেম্বর থেকে বিটিআরসির নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দরপত্র আহ্বান করা হবে বলে স্যাটেলাইট প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ক মেজর এমএ কাশেম (অব.) বাংলানিউজকে জানান।
স্যাটেলাইটের সার্বিক প্রস্তুতি এবং অগ্রগতি সম্পর্কে সাবমেরিন কেবল সিস্টেমের পরামর্শক মেজর এমএ কাশেম (অব.) বাংলানিউজকে জানান, বর্হিবিশ্বের সঙ্গে টেলিযোগাযোগ সেবা নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে এবং স্যাটেলাইট সম্প্রচার সেবার মানোন্নয়নে ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আইটিইউ এর কাছে স্যাটেলাইট স্থাপনের জন্য আবেদন করে। এসময় ভিয়েতনাম একটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করায় বিটিআরসির একদল প্রতিনিধি ভিয়েতনামে যায়।
বিটিআরসির এ প্রতিনিধিদল ভিয়েতনাম থেকে স্যাটেলাইট সম্পর্কে বাস্তব ধারণা নিয়ে জেনেভায় অবস্থিত আইটিইউতে স্যাটেলাইট স্থাপনের বিষয়ে আলোচনা করে। জেনেভায় তারা একটি স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণও গ্রহণ করে বলে মেজর এমএ কাশেম (অব.) বাংলানিউজকে জানান।
এরপর বাংলাদেশের স্যাটেলাইট কমিটির প্রতিনিধিদল আইটিইউ এর বিশেষজ্ঞদের পরার্মশ নিয়ে মহাকাশে ১০২ ডিগ্রিতে স্যাটেলাইট স্থাপনের জন্য নিবন্ধন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে আসে।
আইটিইউ এর নিয়মানুযায়ী স্যাটেলাইটে বাংলাদেশ কোন কোন ফ্রিকোয়েন্সি কোন খাতে ব্যবহার করবে এ বিষয় আইটিইউয়ের কাছে আবেদন করা হয়েছে বলে স্যাটেলাইট প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ক মেজর এমএ কাশেম (অব.) বাংলানিউজকে জানান। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ সর্বমোট ৪৮টি ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহারের জন্য আইটিইউয়ের কাছে আবেদন করে।
কিন্তু আইটিইউ এর শর্তানুয়ায়ী স্যাটেলাইট ফ্রিকোয়েন্সি আবেদনের দুই বছরের মধ্যে এ ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করতে হয়। কারণ স্যাটেলাইট স্থাপনের আগে দু’বছরের জন্য নিবন্ধন করতে হয়। এ কারণে বাংলাদেশ দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ না নিলে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন থেকে পিছিয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেন মেজর এমএ কাশেম (অব.)।
তবে বিশেষজ্ঞ পাওয়া গেলে এ বিষয়টি দ্রুত সম্পাদন হবে বলেও তিনি জানান। এতে কেমন সময় লাগতে পারে এ প্রসঙ্গে স্যাটেলাইট প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ক মেজর এমএ কাশেম (অব.) বাংলানিউজকে জানান, একটি স্যাটেলাইট তৈরি, স্থাপন এবং উৎক্ষেপণে ন্যূনতম ৫ থেকে ৮ বছর সময় লাগে।
এ মুহূর্তে স্যাটেলাইট ভাড়ার প্রসঙ্গে স্যাটেলাইট কমিটির সমন্বয়ক মেজর এমএ কাশেম (অব.) বাংলানিউজকে জানান, একটি স্যাটেলাইট স্থাপণে ন্যূনতম ৩০০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ২১০০ কোটি টাকা) খরচ হয়। আর এর স্থায়িত্ব থাকে সর্বোচ্চ ১৫ বছর।
অন্যদিকে বিদেশি স্যাটেলাইট ভাড়া করে প্রয়োজনীয় সেবা গ্রহণ করতে বাংলাদেশকে প্রতি বছর ১১ থেকে ১৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করতে হচ্ছে। তাই বাংলাদেশ যদি একটি নিজম্ব স্যাটেলাইট স্থাপনে সামর্থ্য হয় তাহলে দেশের টাকা দেশেই থেকে যাবে। বিদেশি স্যাটেলাইট ভাড়া নেওয়ায় কোটি কোটি টাকা দেশের বাহিরে চলে যাবে না।
অন্যদিকে স্যাটেলাইটের যেসব ট্রান্সপন্টার অব্যবহৃত থাকবে তা নেপাল, ভূটান, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কার মতো প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছে ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উৎস তৈরির সম্ভাবনা আছে বলেও বাংলানিউজকে জানান স্যাটেলাইট কমিটির সমন্বয়ক মেজর এমএ কাশেম (অব.)।
এ মুহূর্তে স্যাটেলাইট স্থাপন এবং উৎক্ষেপণের কারিগরি সহযোগিতার প্রশ্নে মেজর এমএ কাশেম (অব.) বাংলানিউজকে জানান, এরই মধ্যে চীন আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা বাংলাদেশকে ১০৩ ডিগ্রিতে স্যাটেলাইট স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু ১০৩ ডিগ্রিতে স্যাটেলাইট স্থাপনের এ প্রস্তাব বাংলাদেশের জন্য সুবিধাজনক না হওয়ায় কোনো চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়নি।
এরই মধ্যে কানাডাও যোগাযোগ করেছে। আর রাশিয়াও আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাই স্যাটেলাইট স্থাপনে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করলে আগ্রহী সব দেশই আবেদন করতে পারে বলে স্যাটেলাইট সমন্বয়ক কমিটি সূত্র জানিয়েছে।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৮২২, নভেম্বর ৮, ২০১০