ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

বিনোদনে ইন্টারনেট, কফিনে ভিডিও বিপণি!

সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০১৩
বিনোদনে ইন্টারনেট, কফিনে ভিডিও বিপণি!

দুনিয়া কাঁপানো সর্বোচ্চ জনবহুল প্রচারমাধ্যম এখন ইন্টারনেট। এ প্রযুক্তির সুবাদে অনেকটা হুট করেই বদলেছে জীবনের স্বাচ্ছন্দ্য আর ব্যবসা তত্ত্বের সেকেলে আদল।

বিশ্বের হাজারো আর জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল ঘর বেঁধেছে ছোট্ট স্মার্টফোন আর ল্যাপটপের খুদে বিনোদন আঙিনায়।

আজ থেকে নয় বছর আগেও যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত বিনোদন ডিস্কের ব্র্যান্ডশপ ব্লকবাস্টারের নয় হাজার বিপণিকেন্দ্র ছিল। কিন্তু সময় আর প্রযুক্তি বৈপ্লবিক আবর্তে এ সংখ্যা এখন কয়েক শ দাঁড়িয়েছে। ব্লকবাস্টারের অর্থায়ন প্রতিষ্ঠান ডিশ নেটওয়ার্ক এ কথা সুস্পষ্ট করেছে। ঋণের দায়ে ২০১১ সালে বিনোদন ডিস্কের খুচরা বিক্রেতা হিসেবে ব্লকবাস্টারের অনেকগুলো বিপণি শাখা একেবারেই বন্ধ করতে হয়।

এ ব্যবসায় ধস নামিয়েছে ইন্টারনেটভিত্তিক হাজারো বিখ্যাত চ্যানেল এবং চলচ্চিত্র বিপণন মাধ্যম ‘নেটফিলিক্স’। শুধু চ্যানেল আর পছন্দের চলচ্চিত্র দেখা নয়, ইচ্ছামতো ডাউনলোডও করা যাবে যৎসামান্য অর্থের বিনিময়ে। চাইলে ইমেইলে অর্ডার করে ঘরে বসেও মিলবে কাঙ্ক্ষিত চলচ্চিত্রের ডিস্ক।

প্রসঙ্গত, ১৯৮২ সালে বিনোদন দুনিয়ায় চমক আনে ভিসিআর। একই সঙ্গে ছবি দেখা আর রেকর্ডের সুবিধা পাওয়‍া যায় এ পণ্যেয়। এরপর ছবির মানোন্নয়নে আসে ডিভিডি আর ব্লুরে ডিস্ক। এখন সে সবের পালাও গুটিয়ে গেছে। এসেছে অবাধ ইন্টারনেট দুনিয়ার অবিচ্ছেদ্য হাতছানি।

হাল আমলে একে একে ল্যান্ডফোনের পরে মোবাইল ফোনে জুড়েছে টুজি, থ্রিজি আর ফোরজি নেটওয়ার্ক। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশেও এখন থ্রিজি গুটি গুটি পায়ে এগোচ্ছে।

এ অভিনব নেটওয়ার্কের স্মার্টফোনে নিমিষেই দেখা যাবে যেকোনো চাহিদার চলচ্চিত্র আর ছবি। এ জন্য সামান্য কিছু বাড়তি ব্যয় গুনতে হবে। এ কাজে মাউসের এ ক্লিকই যথেষ্ট। একে ই-কমার্সের জাদু বললেও ভুল বলা হবে না।

যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এমনকি অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত দেশে একে একে ব্যবসা গুটিয়ে এনেছে ডিভিডি বিপণিগুলো। এ তালিকায় অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত স্টোর লংরিচের নামও আছে। অন্যদিকে গুটিয়ে যাওয়া এ ভিডিও স্টোরগুলোর তালিকায় একেবারে সদ্য আলোচনায় এসেছে বিখ্যাত মুভি শপ ব্লকবাস্টারের নাম।

অর্থাৎ ইন্টারনেটের অপ্রতিরোধ্য উত্তাপে ছন্দ হারিয়ে ফেলেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত আর জমজমাট সব ভিডিও বিপণিগুলো। হাজার কোটি ডলারের ব্যবসা এখন মৃত্যুর প্রহর গুনছে। আর এ ব্যবসার নব্য মহারাজ হয়ে আর্বিভূত হয়েছে ইন্টারনেট।

অনেকেই বিশ্লেষকই প্রশ্ন তুলেছেণ ডিভিডি বিপণিগুলো একেবারে গুটিয়ে আসতে আর কতটা সময় আছে। বিশ্বের বেশিরভাগ বাজার পণ্য গবেষকের কাছে এ সম্ভাব্য সাল ২০১৫। বিশেষজ্ঞদের কেউ আবার বলছেন যেখানে ইন্টারনেট নেই, এমনকি ধীর গতির ইন্টারনেটের সীমাবদ্ধতা আছে সেসব দেশে ছোট পরিসরে হলেও টিকে থাকতে পারে ডিভিডি বিপণিগুলো।

এ বছরের জুন মাসের পর থেকেই ধস নামতে শুরু করেছে ডিভিডি ব্যবসায়। কারণ এখন অনলাইনে সহজেই, ইচ্ছামতো আর সাশ্রয়ী দামে চলচ্চিত্র, টিভি সিরিয়াল, নাটক আর বহুল আলোচিত মুহূর্তগুলো ডাউনলোড করেই সরাসরি উপভোগ্য। ফলে ডিভিডি আর ব্লুরে ডিস্কের বিপণন প্রতিষ্ঠানের প্রতি বিমুখ হয়ে উঠছে বিশ্বের কোটি কোটি বিনোদনপ্রেমীরা।

এ প্রসঙ্গে বিনোদন মাধ্যমের গবেষক ক্রেইগ স্কুলম্যান বলেন, ডিজিটাল ডাউনলোড এবং পে টিভি পুশ এখন সময়ের জনপ্রিয় বিনোদন গণমাধ্যম। গত পাঁচ প্রতি বছরে গড়ে ১৫ ভাগ করে এ ব্যবসার মুনাফা এবং প্রসার কমতে শুরু করেছে।

এরই মধ্যে শুধু অস্ট্রেলিয়াতে ৩৫০টি ডিভিডি এবং ব্লুরে ডিস্ক ঘরানার ব্যবসা এবং এক হাজারেরও বেশি ভিডিও বিপণি বন্ধ হয়ে গেছে।

এ শিল্পের ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে ক্রেইগ বলেন, নিত্যনতুন প্রযুক্তি সুবিধার কল্যাণে বিনোদন শিল্প এখন নতুন রূপে আর্বিভূত। একে শিল্পকে নতুন প্রজন্মের বিনোদন স্টাইল এবং আধুনিক ব্যবসার মডেল হিসেবেই ব্যাখ্যা করছেন বাজার গবেষকেরা।

এরই মধ্যে ভিসিআর মাধ্যমে ভিডিওচিত্র দেখার বয়স ৪০ বছর পেরিয়ে গেছে। অন্যদিকে সর্বশেষ সংযোজন কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপে ভিডিওচিত্রের উপস্থিতির বয়সও এক দশক হয়ে গেছে। এখন এসেছে ইন্টারনেট দুনিয়ার রাজত্ব।

আসছে দু-এক বছরের মধ্যেই ইন্টারনেটের থ্রিজি কিংবা ফোরজি গতির বিপরীতে ডিভিডি ফিল্ম বিপণিগুলো ক্রমেই ব্যবসা হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়বে। এভাবেই ইন্টারনেটের আধিপত্য বিস্তার ডিভিডি এবং ব্লুরে ডিস্কের সংস্কৃতিকে ঠেলে ইতিহাসের পাতায় নিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।