ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

অনলাইনে নাটোরের কাঁচাগোল্লা

আইসিটি রিপোর্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৩
অনলাইনে নাটোরের কাঁচাগোল্লা

বিখ্যাত কাঁচাগোল্লার কথা উঠলেই চলে আসে নাটোর। তবে এখন আর নাটোরে গিয়ে কাঁচাগোল্লা কেনার ঝক্কি নেই।

দেশের যেকোনো এলাকা থেকে অনলাইনে বসেই কিনতে পাড়বেন নাটোরের কাঁচাগোল্লা।

কাঁচাগোল্লার সুখ্যাতি দেশের অনাচে-কানাচে ছড়িয়ে দিতে নাটোরের একদল তরুণ নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। তাদের তৈরি (http://natorerkachagolla.com) এ সাইটে গেলেই নাটোরের তৈরি কাঁচাগোল্লা কিছু তথ্য পাওয়া যাবে। সঙ্গে দাম ও পরিমাণ আছে।

চাইলে অনলাইনেও অর্ডার দিতে পারেন আবার (০১৭৮৯ ৭৮৭ ২৬২) এ নম্বরে ফোন করে। শুধু সাইটের বাইরেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নাটোরের কাঁচাগোল্লা (www.facebook.com/NatorerKachaGolla) নিয়ে তথ্যতেও বিকিকিনি চলছে হরদম।
Manuly-1
বাংলাদেশে বেশ কয়েক বছর ধরেই অনলাইনে কেনাকাটা জনপ্রিয় হচ্ছে। বিশেষ করে রাজধানীতে এ ধরনের কেনাকাটার চাহিদা বেশি। যানজট আর কর্মব্যস্ত জীবনে নির্ধারিত জায়গায় সঠিক জিনিস কেনা সম্ভব হয়ে ওঠে না।

তাই অনলাইন কেনাকাটার ওপড় ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়ছে। ঢাকায় থাকেন রফিকুল ইসলাম। তিনি বললেন, কয়েক দিন আগে বন্ধুদেরকে বাসায় দাওয়াতে গিয়েছিলাম। খাবারের সঙ্গে মিষ্টির আইটেমে পেলাম কাঁচাগোলা।

এটা সম্ভব হয়েছে নাটোরের কাঁচাগোল্লা অনলাইনে কেনার মধ্যে দিয়ে। নাটোরের মাহমুদ চাকরি করেন কেরানীগঞ্জে। তিনি জানালেন, কেরানীগঞ্জে ভাল কাঁচাগোল্লা পাওয়া যায় না। তাই নাটোর গেলে কাঁচাগোল্লা সঙ্গে নিয়ে আসি। আর এখন তো অনলাইনে কেনা যাচ্ছে নাটোরের কাঁচাগোল্লা। তাই যখন খেতে ইচ্ছা হয় অনলাইনে অর্ডার করি।

চট্টগ্রামে ব্যবসায়ী মনির হোসেন বললেন, আমি আগে কখনো কাঁচাগোল্লা খাইনি। এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে কাঁচাগোল্লার খাওয়ার সুযোগ হলো। এরপর থেকে ওই বন্ধুকে নাটোর থেকে কাঁচাগোল্লা আনার কথা প্রায় বলতাম। এখন তাই অনলাইনেই কাঁচাগোল্লা কিনছি।

এ অনলাইন শপের উদ্যোক্তা রাকিব মোস্তফা রনি বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশে এভাবে কেনাকাটার ধারণা থাকলেও আমাদের দেশে এ সংস্কৃতি খুব বেশি দিনের নয়। তাই নাটোরের কাঁচাগোল্লা দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেই এ ওয়েবসাইটের চিন্তা আসে।

ইতিহাসে কাঁচাগোল্লা

কাঁচাগোল্লা গোল নয়, লম্বা নয়, আবার কাঁচাও নয়। তবুও নাম তার কাঁচাগোল্লা! এ নামেই দেশ-বিদেশে পরিচিত। আনুমানিক আড়াই শ বছর আগে নাটোরের কাঁচাগোল্লার কথা ইতিহাসে পাওয়া যায়। সুপ্রাচীন কাল থেকে মিষ্টি রসিকদের রসনা তৃপ্ত করে আসছে এ মিষ্ট‍ান্ন।

তবে ১৭৫৭ সাল থেকে এ মিষ্টির পরিচিতি ছড়াতে থাকে। কাঁচাগোল্লার স্বাদ রসগোল্লা, পানিতোয়া, এমনকি অবাক সন্দেশকেও হার মানিয়ে দেয়। এতে আছে সুমিষ্ট কাঁচা ছানার গন্ধ। যা অন্য কোনো মিষ্টিতে পাওয়া যায় না। ধীরে ধীরে মিষ্টি রসিকেরা এর প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকেন।
Manuly-220
প্রসঙ্গত, ১৭৬০ সালে অর্ধবঙ্গেশ্বরী বাংলার দানশীলা শাসনকর্তা রানী ভবাণীর রাজত্বকালে কাঁচাগোল্লার সুখ্যাতি দেশ-বিদেশে ছড়াতে থাকে। ওই সময় নাটোরে মিষ্টির দোকান হাতেগোনা। এসব দোকানে বিখ্যাত কাঁচাগোল্লা ছাড়াও অবাক সন্দেশ, রাঘবশাহী, চমচম, রাজভোগ, রসমালাই, পানিতোয়া মিষ্টি পাওয়া যেত।

তবে এসবের মধ্যে সুখ্যাতি পায় কাঁচাগোল্লা। ফলে সে সময় রাজা-জমিদারদের মিষ্টিমুখ করতে ব্যবহৃত হতো কাঁচাগোল্লা। এমনকি বিলেতের রাজ পরিবার অবধি এ কাঁচাগোল্লার ঘ্রাণ ছড়িয়েছে। এ মিষ্টি ভারতবর্ষেও সুনাম কুঁড়িয়েছে।

রাজশাহী গেজেট পত্রিকাতেও কাঁচাগোল্লার সুখ্যাতির কথা লিপিবদ্ধ আছে। কলকাতার বিভিন্ন পত্রপত্রিকাতে সেই সময় কাঁচাগোল্লার সুখ্যাতি নিয়ে প্রতিবেদন লেখা হয়। কলকাতা এবং নাটোর শহরের যোগাযোগে কাঁচাগোল্লার কথা ভারত, ইংল্যান্ড ছাপিয়ে তৎকালীন বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পরে। এভাবেই কাঁচাগোল্লা পায় আন্তর্জাতিক পরিচিতি পায়।

নাটোর শহরের নির্দিষ্ট কিছু দোকান ছাড়া এ মিষ্টি কিনলে ঠকে যাওয়ার ভয় আছে। ভ্রাম্যমান হকারদের কাছ থেকে কাঁচাগোল্লা কিনলে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। হকাররা দামও যেমন বেশি নিতে পারে, আবার নকল কাঁচাগোল্লা দিতে পারে। সুতরাং নির্দিষ্ট দোকান থেকেই কাঁচাগোল্লা কেনা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

বাংলাদেশ সময় ২০০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৩
সম্পাদনা: সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর/আরকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।