ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

শীতে কাবু স্মার্টফোন, বন্ধুত্বে আপনজন

সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৩
শীতে কাবু স্মার্টফোন, বন্ধুত্বে আপনজন

শীতে শুধু তক নয়, আধুনিক সময়ের চিরসঙ্গী মোবাইল কিংবা স্মার্টফোনও আদ্রতায় কাবু হয়ে পড়ে। যন্ত্রের মন্ত্র থমকে যায় তীব্র শীতে।

বাংলাদেশে শীত মৌসুমি হলেও বিশ্বের বহু দেশেই শীতাবহ চিরস্থায়ী। তাই শীত মৌসুমেও সার্বক্ষণিক স্মার্টফোন সচল রাখতে কিছু সুকৌশল মেনে চললেই এ অবস্থা থেকে রেহাই মিলবে।

শীতের তীব্রতায় হাতে গ্লাভস পড়ে স্মার্টফোনের টাচস্ক্রিনে কোনোভাবেই কার্যসিদ্ধি করা যাবে না। তবে সাম্প্রতিক সময়ে গ্লাভস পড়েও টাচস্ক্রিন পণ্যতে কাজ করা যায় এমন প্রযুক্তির উন্নয়নে কাজ করছে বিখ্যাত ব্র্যান্ডগুলো। তা ছাড়া শীতে শরীরের তাপমাত্রা থেকে স্মার্টফোন এবং ট্যাব উচ্চ তাপমাত্রা গ্রহণ করে ইলেকট্রিক শক্তি গ্রহণ করে।

এমনকি শীতকালে শরীরে পরিহিত পোশাক থেকেও টাচস্ক্রিন পণ্য বাড়তি এবং প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা গ্রহণ করে। অন্যদিকে টাচস্ক্রিনের কিছুটা ওপর থেকেও যেন আঙুলের কর্মনির্দেশনা গ্রহণ করতে পারে টাচস্ক্রিন এমন কারিগরি দক্ষতারও মানোন্নয়নে গবেষণা চলছে।

বিশ্বের পশ্চিম এবং উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত দেশগুলোতে শীতের তীব্রতা তুলনামূলক বেশি। এখানে টাচস্ক্রিন ঘরানার পণ্যগুলো দ্রুতই শীতাবহে কাবু বনে যায়।

এমনকি কখনো কখনো স্মার্টফোন একেবারেই অচলও হয়ে পড়ে। তখন এ পরিস্থিতিতে দুঃস্বপ্নের মতো অনুভূতি তাড়া করে। হাতেই ফোন আছে কিন্তু তা কোনো কাজে আসছে না এমন অবস্থা মোটেও সহনীয় নয়।

এখনো বিশ্বের বর্ণিল মডেলের স্মার্টফোনগুলো নানামুখী কারিগরি দোষে দুষ্ট। তীব্র শীতের মতো আবহাওয়াজনিত বৈরী পরিস্থিতি সামলে নিতে অ্যাপল ব্র্যান্ডের ৫সি মডেল সর্বনিম্ন ৪ থেকে সর্বোচ্চ ১১৩ ডিগ্রি তাপমাত্রায় সব ধরনের কার্যসম্পাদনে অবিচল থাকতে পারদর্শী।

কিন্তু বিশ্বের বহু ব্র্যান্ডের টাচস্ক্রিন ঘরানার স্মার্টফোন এবং ট্যাবে এ ধরনের সুবিধা এখনও অনুপস্থিত। এক্ষেত্রে ব্র্যান্ডের বিচারে অ্যাপল সত্যিকার অর্থেই এগিয়ে আছে। তবে অ্যাপল ব্র্যান্ডের পরামর্শ হচ্ছে যেকোনো স্মার্টফোন এবং ট্যাব তৈরিতে ৩২ ডিগ্রি তাপমাত্রাকে আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করা। কারণ এ তাপমাত্রাতেই একটি টাচস্ক্রিন স্বাচ্ছন্দ্যে তার সব ধরনের কলাকৌশল দেখাতে পারে।

এ মুহূর্তে বিশ্বব্যাপী প্রচলিত সব ধরনের স্মার্টফোনে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি ব্যবহৃত হচ্ছে। জেরেমি কাওয়াতারস্কি। এ প্রযুক্তির ব্যাটারি দ্রুতই শীত কাতর। অর্থাৎ মাত্রাতিরিক্ত ঠান্ডায় এ ব্যাটারি টাচস্ক্রিন পণ্যকে শক্তি সঞ্চার করতে ব্যর্থ হয়। ফলে এ ধরনের ব্যাটারি পরিচালিত স্মার্টফোন এবং ট্যাব দ্রুতই ইলেকট্রিক শক্তির সরবরাহের ঘাটতিতে অচল হয়ে পড়ে। তবে এ সমস্যা সাময়িক। সামান্য শরীরী উত্তাপে ব্যাটারির শক্তি পুনরায় ফিরে আসে।

এ প্রসঙ্গে সিআরপি সেলফোন বিশেষজ্ঞ জেরেমি কাওয়াতারস্কি বলেন, যদি শীতের তীব্রতায় ব্যবহৃত ফোন কিংবা ট্যাব হুট করেই বন্ধ হয়ে যায়। তখন সামান্য উত্তাপ ছাড়া ফোন/ট্যাব দ্রুত রিস্টার্ট না করা। শীতে ফোন বা ট্যাব বন্ধ হয়ে গেলে তৎক্ষণাৎ তা চালু না করে খানিক হাতের স্পর্শে রেখে তবেই চালু করা। নতুবা ফোন বা ট্যাবের ব্যাটারির দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।

টাচস্ক্রিনের প্রধান বৈশিষ্ট্য এলসিডি পর্দা। এটি উচ্চমাত্রার ব্যাটারিতে সচল থাকে। বলতে গেলে স্মার্টফোন এবং ট্যাবের মতো টাচস্ক্রিনকেন্দ্রিক পণ্যের প্রতিটি অংশই উচ্চমাত্রার ইলেকট্রনিক শক্তিতে সচল থাকে।

শীতে টাচস্ক্রিন কাজ না করলে তার ওপর অতিরিক্ত চাপ এবং টাচ করলে টাচপণ্যটি হ্যাং হয়ে যেতে পারে। এতে টাচস্ক্রিনের নষ্ট হয়ে যেতে পারে কিংবা অপারেটিং সিস্টেমকে সাময়িক বিকল করে দিতে পারে।

শীতের আবহে টাচপণ্যটি যেন স্থবির হয়ে না পড়ে সেজন্য আইফোনের পেছনে ঠান্ডা সহনীয় একটি বিশেষ লেয়ার আছে। ফিনল্যান্ডের আবহে বছরের সব সময়ই গড়ে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকে। দেশটির সরকার ভোক্তাদের টাচপণ্য ব্যবহারে এ ধরনের সমস্যায় সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে।

শীতে ঘরের বিছানা, টেবিল কিংবা গাড়িতে টাচপণ্য রাখার চেয়ে সব সময় পকেটে তা স্বয়ংক্রিয় থাকে। অর্থাৎ মানব শরীর থেকে টাচপণ্য বিপদে প্রয়োজনীয় তাপ নিতে পারে। তবে অপ্রয়োজনে টাচপণ্য সচল রাখার বদলে একে রাতে একেবারে বন্ধ করে রাখাই শ্রেয়।

এতে একদিকে ফোনের ব্যাটারি সাশ্রয় হয়। অন্যদিকে পণ্যটি হুট করে বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা এড়িয়ে যাওয়া যায়। এ কৌশলে ফোন বন্ধ থাকলে তা শরীরের কাছাকাছি অবস্থায় উত্তাপ গ্রহণ করে পারে। এতে স্বাস্থ্যগত ক্ষতির সম্ভাবনাও কম থাকে।

এ ধরনের পরামর্শ মহাকাশ অভিযাত্রীদের জন্যও দেওয়া হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আবহাওয়ার বৈরী অবস্থায় প্রযুক্তিতে কীভাবে সব সময় সক্রিয় রাখতে এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকে নাসা।

তাই শীতকালে কিংবা আবহাওয়ার অস্বাভাবিক শীতল অবস্থায় ব্যাটারির ব্যাকআপ আর যেকোনো অবস্থায় জরুরি ফোন কলের প্রয়োজনে সতর্ক থাকার পরামর্শ মেনে চলা উচিত।

বাংলাদেশ সময় ০২৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।