ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

৪৪ শতাংশ মানুষ ‘তথ্য অধিকার’ সম্পর্কে জানে না

রহমত উল্যাহ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৬ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০১৪
৪৪ শতাংশ মানুষ ‘তথ্য অধিকার’ সম্পর্কে জানে না

ঢাকা: দেশের ৪৪ শতাংশ জনগণ তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কে কিছু জানে না। এর ফলে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি (এসএসএনপি) বাস্তবায়িত হচ্ছে না।



সম্প্রতি সমুন্নয় নামে এক বেসরকারি সংগঠনের সারাদেশের জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।

জরিপ তুলে ধরে সংগঠনের সমন্বয়কারী দিলরুবা ইয়াসমিন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, সরকার দারিদ্র দূরীকরণে এসএসএনপি বাস্তবায়ন করে আসছে। বর্তমানে এসএসএনপি খাতের আওতায় ৯৫টি কর্মসূচি ও প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।

বছরে ১৬ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি প্রায় ৬ কোটি ৮ লাখ জনগণের সুফল ভোগ করে থাকেন।

এরমধ্যে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন কর্মসূচি (ইজিপিপি), দুস্থ মহিলা উন্নয়ন কর্মসূচি (বিজিডি), বয়স্ক ভাতাসহ বেশ কয়েকটি সম্পর্কে জনগণ জানে।

তথ্য অধিকার সম্পর্কে জ্ঞান ও তথ্যের নির্দিষ্ট ব্যক্তি (ডেজিগনেশন পার্সন) না থাকায় অধিকাংশ কর্মসূচি ও প্রকল্প সম্পর্কে জনগণ জানে না। তথ্য অধিকার সম্পর্কে না জানার ফলে বেশিরভাগ সুফলভোগী এসব অধিকার থেকে বঞ্চিত।

২০০৯ সালে সরকার তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করে।

তিনি বলেন, জরিপে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অধীনে ৪১ শতাংশ নারী ও ৫৯ শতাংশ পুরুষ অংশ নেন। এদের মধ্যে ৫৫ শতাংশ নারী-পুরুষ এসব কর্মসূচির তথ্য ইউপি সদস্য থেকে পেয়েছেন।

১০.২ শতাংশ এসব কর্মসূচি নির্বাচন সম্পর্কে কিছু জানেন না। অর্থাৎ ৯০ শতাংশ উপকারভোগী নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কে কিছুই জানে না। এক্ষেত্রে তথ্য জানলে নির্বাচনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকত।

তিনি আরো বলেন, ১৭ শতাংশ ইউপি অফিসে তথ্য জানতে গিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫৫ শতাংশ সহজে ও ৪২ শতাংশ বিলম্বে তথ্য পেয়েছেন।

৭৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারী কোন অফিসে কোন তথ্য পাওয়া যাবে নিশ্চিত করে বলতে পারেনি। এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট ব্যক্তি বা স্থান থাকা উচিত বলে মত দিয়েছেন তারা।

৬৩ শতাংশ তথ্য অধিকার সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে লিফলেট/পোস্টারের মাধ্যমে প্রচারণা, ৪৯ শতাংশ এনজিও’র মাধ্যমে প্রচারণা এবং ৪৫ শতাংশ রেডিও/টিভির মাধ্যমে প্রচারণা চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

এসএসএনপি বিষয়ক তথ্য নিশ্চিতে তথ্য কর্মকর্তা নিয়োগে ৫৩ শতাংশ, জন সমাগম স্থানে বরাদ্দ ঘোষণা ৫০ শতাংশ ও উন্মুক্ত সাথে তথ্য প্রদর্শনের (টাঙানো) পক্ষে মত দিয়েছেন ৪৪.৪ শতাংশ অংশগ্রহণকারী।

৫৩.১ শতাংশ অংশগ্রহণকারী এসএসএনপিসহ তথ্য অধিকার সম্পর্কে জেনেছেন এনজিও’র মাধ্যমে। ৩৬ শতাংশ প্রতিবেশির মাধ্যমে। ১৬.৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী এসএসএনপিসহ সব তথ্য স্থানীয় এনজিও’র মাধ্যমে সরবরাহের মত দিয়েছেন।

৭৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারী তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়ন সম্ভব হলে জনগণের জন্য তথ্য পাওয়া বহুগুণে সহজ হয়ে যাবে বলে মত দিয়েছেন।

জরিপে বিভিন্ন উপজেলা, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, সদস্য ও সমাজসেবা কর্মকর্তা তথ্য অধিকার সম্পর্কে জনগণ জানে না বলে স্বীকার করেছেন।

তারা বলেছেন, দপ্তরগুলোতে তথ্য কর্মকর্তা ও সম্পদের অভাব রয়েছে। কতৃর্পক্ষ তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বতঃপূর্ত হলেও সুনির্দিষ্ট কাঠামোর কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।

সুপারিশ তুলে ধরে তিনি বলেন, তথ্য অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা গেলে ইজিপিপিতে ২.৬৭ লাখ এবং ভিজিডিতে ১.০৯ লক্ষ উপকারভোগীকে অন্তর্ভুক্ত যাবে।

তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কে তথ্য সচিব ফরহাদ হোসেন বলেন, মাত্র পাঁচ বছর হলো তথ্য অধিকার আইন হয়েছে। এতে বেশিরভাগ মানুষ এ আইন সম্পর্কে জানে না। তবে সরকার এনজিও ও গণমাধ্যমের মাধ্যমে এ আইন সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে চেষ্টা করছে।

প্রধান তথ্য কমিশনার মো. ফারুক বলেন, সারাদেশের ইউপি সচিবরা ডেজিগনেটেড তথ্য কর্মকর্তা। তবে আগামী ৫ বছরের মধ্যে ৫০ হাজার তথ্য কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে ৫ হাজার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে তথ্য অধিকার সম্পর্কে ১২ হাজার সরকারি কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

এ আইন সম্পর্কে জনগণকে আরো সচেতন করতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।  

এ সম্পর্কে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, কোনো সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তথ্য দিতে অপারগতার অভিযোগ পাওয়া গেলে শাস্তি দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে ৫৭২টি অভিযোগের মধ্যে ৫১৪টির নিষ্পত্তি ও শাস্তি দেওয়া শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এসএসএনপি খাতে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে সরকার।

কোন খাতে কত বরাদ্দ তা জনগণকে জানাতে ও তথ্য অধিকার সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে গণমাধ্যমের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৩ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।