ঢাকা: মানুষ্যবিহীন যান (ড্রোন) আকাশে উড়াতে আরও নতুন ধাপে এগুচ্ছে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রোন টিম।
বাংলাদেশে প্রথমবারের মত তারা তৈরি করেছেন হেক্সাকপ্টার ও অক্টোকপ্টার ড্রোন।
গ্রাউণ্ড কন্ট্রোল স্টেশন থেকে এখন দেশের আকাশ সীমায় কয়েক ঘণ্টা উড়তে সক্ষম ‘‘মিলিটারি ড্রোন’’ তৈরির কাজ চলছে।
ড্রোন টিমের প্রধান সৈয়দ রেজওয়ানুল হক নাবিল বৃহস্পতিবার রাতে বাংলানিউজকে এই তথ্য জানান।
তিনি বলেন, নিজস্ব প্রযুক্তিতে দেশের প্রথম গ্রাউণ্ড কন্ট্রোল বেইজড ড্রোন তৈরির কাজ চলছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসেই সাস্ট ড্রোন টিম নিজস্ব গ্রাউণ্ড স্টেশন ও সফটওয়্যারের মাধ্যমে ফিক্সডউইং এবং মাল্টিরোটর ড্রোন উড়াতে সক্ষম হয়।
এমনকি তারা অটোনোমাস সিস্টেমেও ড্রোন উড়িয়েছেন। বিদেশ থেকে কিনে আনা দামি দামি আরসি কন্ট্রোলার দিয়ে ড্রোন উড়াতে যখন অনেকেই ব্যস্ত তখন সাস্ট ড্রোন টিম যতটা সম্ভব নিজস্ব প্রযুক্তির ড্রোন তৈরি করছে।
বাংলানিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকারে নাবিল জানান, এ বছরের জানুয়ারি থেকে ড্রোন নিয়ে গবেষণা শুরু করেন তিনি। ড্রোন গবেষণা প্রজেক্টের তিনি টিম লিডার।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র সৈয়দ রেজওয়ানুল হক নাবিল এখন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন।
তার সঙ্গে শাবির ড্রোন টিমে আর চারজন শিক্ষার্থী কাজ করছেন তারা হলেন, রবি কর্মকার, আখলাকুজ্জামান আশিক, মারুফহোসেন রাহাত ও তোহা। এছাড়াও ১৪ জনের একটি জুনিয়র টিম তাদের সঙ্গে কাজ করছে।
ড্রোন প্রজেক্টের তত্ত্ববধানে রয়েছেন ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
নাবিল বলেন, প্রথমে শুধুমাত্র ফিক্সড উইং এয়ারক্রাফট আরসি কন্ট্রোলারের মাধ্যমে উড়িয়ে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নিরিক্ষা দিয়েই গবেষণা শুরু করা হয়। এরপর তারা সেটাকে ড্রোনে পর্যায়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়।
নাবিল বলেন, কোনো আনমেন্ড এয়ারক্রাফট তখনই ড্রোন হয় যখন সেটি কোনো নির্দিষ্ট কাজ করতে পারে এবং যা গ্রাউণ্ড কন্ট্রোল স্টেশন থেকে পরিচালনা করা যায়।
এই উদ্দেশেই সাস্ট ড্রোন টিম কাজ করতে শুরু করে। ফিক্সড উইং এয়ারক্রাফটের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের মাল্টিরোটর এয়ারক্রাফট তৈরি করা হচ্ছে।
ড্রোন দুইভাবে চালনা করার পদ্ধতি উল্লেখ করে নাবিল বলেন, পোর্টেবল ও গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশন থেকে ড্রোন উড়ানো হচ্ছে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের ওপরে ড্রোন কন্ট্রোল স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। এর নির্মাণ সম্পন্ন হলে এখানে বসেই বাংলাদেশের যে কোনো জায়গায় ড্রোন উড্ডয়ন সম্ভব হবে বলে মনে করেন নাবিল।
তিনি জানান, পোর্টেবল স্টেশন থেকে ১০ কিলোমিটার দূর পযন্ত ড্রোন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। তবে ভালো বাজেট পেলে এর রেঞ্জ আরো বৃদ্ধি করা সম্ভব।
পোর্টেবল স্টেশন ব্যবহার করে ড্রোনের মাধ্যমে এরই মধ্যে দেশে প্রথমবারের মতো পণ্য আনা নেওয়ার কাজ করেছেন তিনি।
তিনি জানান, এই মুহূর্তে তারা ড্রোন কন্ট্রোল স্টেশন থেকে টানা উড়তে পারে এমন মিলিটারি ড্রোন তৈরির কাজ করছেন।
শাবির ড্রোন টিমের লিড প্রোগ্রামার রবি কর্মকার বলেন, আমরা ড্রোনের জন্য বিশেষ ধরনের কিছু যোগাযোগ পদ্ধতি বাস্তবায়ন করছি যার মাধ্যমে দেশের যে কোনো জায়গায় বসে ড্রোন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
তবে গোপনীয়তার কারণে এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রকাশ করছে না ড্রোন টিম।
সাস্টের ড্রোন টিম বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ও পুলিশের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
তাছাড়া ড্রোন দিয়ে কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পণ্য পৌঁছে দেওয়ার কাজ করতে চাইলে তাও করতে ইচ্ছুক সাস্ট ড্রোন টিম।
বাংলাদেশ সময়: ০৬১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৪