ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

রোবট রবিনের পর ‘সেবক নিয়ে শুভ’র নতুন স্বপ্ন

মুশফিক সৌরভ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৫ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২১
রোবট রবিনের পর ‘সেবক নিয়ে শুভ’র নতুন স্বপ্ন দুই রোবটের মাঝে শুভ কর্মকার। ছবি: বাংলানিউজ

বরিশাল: সোফিয়াকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে মানবাকৃতির রোবট ‘রবিন’ উদ্ভাবন করে আলোচনায় আসেন বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের শুভ কর্মকার। তবে, এবার নতুন উদ্ভাবন নিয়ে নিজের রোবোটিক্স জ্ঞানকে আবারও সবার সামনে তুলে ধরেছেন বরিশাল নগরের অমৃত লাল দে কলেজের একাদশ শ্রেণির এই ছাত্র।

 

তার উদ্ভাবিত নতুন রোবটটির নাম রাখা হয়েছে ‘সেবক’। যে কিনা চিকিৎসাকেন্দ্রীক বিভিন্ন ধরনের কাজ করবে। বিশেষ করে চিকিৎসক ও রোগীর সহায়তায় এটি বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে বলে জানিয়েছেন করেছেন উদ্ভাবক শুভ কর্মকার।

তিনি বাংলানিউজকে জানান, রোগ সংক্রমণ নিরোধ এবং ডাক্তার বা রোগী যত দূরত্বেই থাকুক সু-চিকিৎসা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রোবটটি কাজ করবে। পাশাপাশি রোগীর অক্সিজেন সেচ্যুরেশন লেভেল কমে গেলে, রোবটটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজেই অক্সিজেন উৎপাদন করে ১৫/২০ মিনিট মাস্কের সাহায্যে রোগীকে তা দিয়ে সাহায্য করতেও পারবে। আবার করোনার মতো ঝুঁকিপূর্ণ ও সংক্রমিত রোগীর ব্যবহৃত মাস্কসহ বাহ্যিক বিভিন্ন বর্জ্য রোবটটি তার শরীরে থাকা ইউভি রশ্মির মাধ্যমে জীবাণুমুক্ত করতে পারবে।  

শুভ কর্মকার বলেন, ২০১৮ সালে বিখ্যাত রোবট সোফিয়া বাংলাদেশ ভ্রমণে এলে তাকে দেখেই মূলত অনুপ্রাণিত হই। আর তা থেকেই স্কুলছাত্র থাকাকালীন সময়েই রোবট ‘রবিন’ উদ্ভাবনের কাজে হাত দেই। সোফিয়া ইংরেজিতে কথা বললেও রবিন বাংলায় কথা বলতে পারতো এবং বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরও দিতে পারতো। কোথাও আগুন লাগলে বা গ্যাস লিকেজ হলে সংকেত পাঠাতে পারতো। ফলে মানবাকৃতির ওই রোবটটি বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলো।  

এদিকে আমাদের দেশসহ সারা বিশ্ব মহামারি করোনার মতো একটি সংক্রমণের সঙ্গে লড়াই করছে। সংক্রমণ ছড়িয়ে পরায় প্রতিদিন বহু মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এক্ষেত্রে উদ্ভাবনের মাধ্যমে কিভাবে সাহায্য করা যায় সেই চিন্তাধারা থেকেই নতুন প্রকল্পে হাত দেওয়া। তিন মাসের প্রচেষ্টায় নতুন তৈরি রোবটটি চিকিৎসাকেন্দ্রীক কাজ করবে বিধায় এটির নাম রাখা হয়েছে ‘সেবক’।

তিনি বলেন, রোবটটিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এমনভাবে করা হয়েছে। সংক্রমিত ব্যধিতে আক্রান্ত ব্যক্তি, যাদের কাছে স্বাভাবিক মানুষের যাওয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ, তাদের কাছে এ রোবটটি যেতে পারবে অনায়াসে। পাশাপাশি রোগীর হাতে ওষুধসহ সুরক্ষা সামগ্রী পৌছে দিতে পারবে। দূরত্ব যাই হোক না কেন রোগীর সঙ্গে চিকিৎসকের ইন্টারনেটের সহায়তায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলিয়ে প্রেসকিপশন নেওয়া-দেওয়ার কাজটিও করতে পারবে। সেসঙ্গে কোনো রোগীর অক্সিজেন প্রয়োজন হলে নিজেই তা উৎপাদন করে ১০-১৫ মিনিট সাপোর্টও দিতে পারবে। পাশাপাশি রোবটটি তার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কাজে খাটিয়ে সঙ্গহীন রোগীকে সঙ্গ দিতে পারবে। এছাড়া রোগীর বর্জ্য রোবট সেবকের শরীরে থাকা ডাস্টবিনে ফেলা হলে ইউভি রশ্মির মাধ্যমে তা জীবাণুমুক্ত করে ফেলবে। সেক্ষেত্রে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি নেই।

তিনি বলেন, রোবটটিকে আমার চিন্তাধারার মডেল হিসেবে আমি উপস্থাপন করেছি। যেটাকে আরও ডেভেলপ করা সম্ভব। আর এমনভাবে একটি রোবট তৈরি করা হলে সে প্রকৃতপক্ষেই চিকিৎসক এবং রোগীর মধ্যে যোগাযোগের একটি মাধ্যম হয়ে কাজ করতে পারবে। এক্ষেত্রে রোগী তার প্রয়োজনীয় সেবা পাবে আবার চিকিৎসকও নিরাপদ দূরত্বে থেকে চিকিৎসা দিতে পারবে।

বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের কালুপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সন্তোষ কর্মকারের ছেলে শুভ কর্মকার। গৈলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক শেষ করে ভর্তি হয়েছে বরিশাল নগরের অমৃত লাল দে মহাবিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন।

২০১৮ সালের ১৫ মে জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় বৈজ্ঞানিক যন্ত্রের উদ্ভাবন বিষয়ক জাতীয়পর্যায়ে দ্বিতীয় হয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছ থেকে পুরস্কার লাভ করেন রবিনের উদ্ভাবক শুভ কর্মকার। ২০১৯ সালের ২৭ জুন ৪০তম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের হাত থেকে পুরস্কার নেয়। এছাড়াও সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ-২০১৯ এ বিজ্ঞান বিষয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে ১ম হয়ে জাতীয় পর্যায়ে অংশ নিয়ে ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির হাত থেকে ‘বছরের সেরা মেধাবী’ পুরস্কার নেয় শুভ কর্মকার। তারই ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় রোবট উদ্ভাবন করলো এই কিশোর বিজ্ঞানী।

ভবিষ্যতেও রোবট নিয়েই কাজ করতে চাওয়া শুভ কর্মকার বাংলানিউজকে বলেন, রোবোটিক্স নিয়ে পড়াশুনা ও এ বিষয়ে জানতে আমার খুবই ভালো লাগে।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে বাংলাদেশ যেন রোবট বা কম্পিউটার প্রযুক্তিতে এগিয়ে থাকতে পারে, সে প্রত্যাশার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, রোবট নিয়ে কাজ করে দেশ ও জাতির জন্য ভালো কিছু করতে চাই। নতুন রোবট ‘সেবক’র কাজকর্ম তুলে ধরার পাশাপাশি আমার প্রথম উদ্ভাবিত রোবট রবিনের প্রযুক্তিগত আরও আধুনিক ও উন্নত করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।  

আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আরও দুই জন ছাত্র দু’টি রোবট উদ্ভাবন করেছেন। এরমধ্যে পালপাড়ার সুজন পালের উদ্ভাবিত ‘বঙ্গ’ ও ভদ্রপাড়ার শাওন সরদার সোলাইমান উদ্ভাবন করেন ‘মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট’।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০২ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২১
এমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।