ভারতে প্রতি বছর অনেক সংখ্যক গবাদিপশু ট্রেনের ধাক্কায় মারা যায়। ২০২২ সালে ১৩ হাজার গবাদিপশু ট্রেনের ধাক্কার শিকার হয়েছে।
২০১৯ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ট্রেনের সঙ্গে গবাদিপশুর ধাক্কার ঘটনা ২৪ শতাংশ বেড়েছে। ওই বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে ১০ হাজার ৬০৯টি গবাদিপশুর ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। ১৭টি রেলওয়ে অঞ্চলের ৯টির তথ্য পেয়েছে বিবিসি।
ভারতে ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা লেগে গবাদিপশুর মৃত্যু নতুন কিছু নয়। গত কয়েক বছরে এসব মৃত্যু বেড়েছে। দেশটিতে আরও পরিমাণে ট্রেন চালু হচ্ছে, এর মধ্যে রয়েছে দ্রুতগতির ট্রেনও।
২০১৯ সালে সেমি-হাই স্পিড বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনার শিকার হয়। এর মাত্র একদিন আগেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ট্রেনটি উদ্বোধন করেন। সেই সময় রেলওয়ের এক মুখপাত্র জানান, ট্রেনটি রেললাইনে গবাদিপশুর সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে থাকতে পারে।
গেল অক্টোবরে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেন পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটে গবাদিপশুর সঙ্গে তিনবার ধাক্কা খায়। এতে ক্ষয়ক্ষতি ও শিডিউলে বিলম্ব হয়। গেল সপ্তাহে আরেকটি ফ্ল্যাগশিপ ট্রেন পরীক্ষামূলক যাত্রায় গবাদিপশুর সঙ্গে ধাক্কা খায়।
ভারতে হাজারো লোকজন তাদের গবাদিপশুকে ঘাস খাওয়ার জন্য রেললাইনের পাশে চড়াতে দেয়। অনেক গবাদিপশুর মালিকই রেললাইনের পাশে বাস করে যাতে তারা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সহজেই যেতে পারে।
ভারতে রয়েছে ৬৭ হাজার ৫৪৬ মাইলের বিশাল রেল নেটওয়ার্ক। অনেক গ্রামাঞ্চলে রেললাইন জনবসতির মধ্যে দিয়েই চলে গেছে। অনেকক্ষেত্রে লাইনের পাশে কোনো বেড়াও নেই। এতে গবাদিপশু রেললাইনের ওপর দিয়ে অবাধে ঘুরে বেড়াতে পারে। এই গবাদিপশু চড়ানো অনেকক্ষেত্রেই শেষ হয় ট্রেনের ধাক্কায়।
ভারতের শক্তপোক্ত ট্রেন অনেকক্ষেত্রে এসব দুর্ঘটনা সয়ে যেতে পারে। তবে নতুন নতুন অনেক ট্রেনের সামনের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তা মেরামতেরও প্রয়োজন পড়েছে।
যাত্রীদের জন্যও এসব দুর্ঘটনা অনেকক্ষেত্রে অসুবিধার সৃষ্টি করে।
গেল অক্টোবরে রেলওয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এসব দুর্ঘটনা প্রতিকূলভাবে রেলের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করে করে। একই সঙ্গে রেল দুর্ঘটনা ঘটে, পাশাপাশি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ট্রেন-গবাদিপশুর সংঘর্ষে যাত্রীদের নিরাপত্তা হুমকিতে পড়ে। রেল চলাচলে ব্যাঘাত ঘটতে পারে এবং রেলওয়ে সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
২০২২ সালে দুটি প্রধান রেলওয়ে অঞ্চল ১৩০ কোটি রুপি খরচ করে ট্রেন ও রেললাইন মেরামতে। এর মধ্যে গবাদিপশুর সঙ্গে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে কত পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে, সেই তথ্য নেই।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব সংসদে বলেন, যেসব অঞ্চলে গবাদিপশু রেললাইনে উঠে পড়ে, সেসব অঞ্চলে রেললাইনের পাশে বেড়া নির্মাণ করা হচ্ছে। তিনি জানান, রেললাইনের আশপাশে ঘাস ও আবর্জনা পরিষ্কারে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রী জানান, প্রধান প্রধান শহরে অ্যাপ্রোচ রোড উন্নত করা হচ্ছে গবাদিপশুর মালিকদের রেলপথের বদলে ভিন্নপথে চলাচলে উৎসাহিত করতে।
৩৮৬ মাইল দীর্ঘ মুম্বাই-আহমেদাবাদ রুটের পাশে ধাতব বেড়া নির্মাণ করা হচ্ছে যাতে গবাদিপশু রেললাইনের ওপরে উঠে যেতে না পারে। এতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ট্রেন চলাচল করতে পারবে।
বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলেন, ভারতের আঁকাবাঁকা রেললাইনের পাশে বেড়া নির্মাণ অনেকটাই অসম্ভব। রাকেশ চোপড়া নামে সাবেক এক রেল কর্মকর্তা বলেন, রেললাইনের পাশে বেড়া নির্মাণ করা কার্যকর কোনো সমাধান নয়। রেলওয়ের লোকজনও এটি জানে। দুর্ঘটনা কমাতে চাইলে অন্য কিছু ভাবতে হবে।
রেললাইনে গবাদিপশু নিয়ে এর মালিকদের চলাচলে জরিমানা ও মামলা দায়ের করা যেতে পারে। এই সংক্রান্ত একটি আইন ইতোমধ্যে রয়েছে। অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ ছয় মাস পর্যন্ত জেল ও এক হাজার রুপি জরিমানার বিধান রয়েছে।
রেলওয়ে পশ্চিম বিবিসিকে জানিয়েছে, ২০১৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১৯১টি মামলা হয়েছে এবং ৯ হাজার ১০০ রুপি জরিমানা আদায় করা হয়েছে। স্পষ্টতই জরিমানা কোনো শক্ত প্রতিরোধক নয়।
রেলওয়ের সাবেক কর্মী অরুনেন্দু কুমার বলেন, রেললাইনের পাশে বেড়া নির্মাণ কার্যকর সমাধান। তবে এতে খরচ বেশ।
গবাদিপশু-ট্রেন সংঘর্ষ এড়ানোর সমাধানে রেললাইনের পাশে বসবাসকারী লোকজনকে নিয়ে কাজ করা যেতে পারে। তাদের সচেতন করে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, যেসব অঞ্চলে রেললাইনে গবাদিপশু বেশি পরিমাণে চলাচল করে, সেসব অঞ্চল চিহ্নিত করে করিডোর নির্মাণ করে দেওয়া যেতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০২৩
আরএইচ