ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

এবার ফিলিস্তিনে সহায়তা বন্ধের হুমকি ট্রাম্পের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩, ২০১৮
এবার ফিলিস্তিনে সহায়তা বন্ধের হুমকি ট্রাম্পের কট্টরস্বভাবী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

ঢাকা: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইংরেজি ২০১৮ সালের প্রথম দিনটি শুরু করেছিলেন এক কড়া টুইটে। পাকিস্তানকে সামরিক সহায়তা বন্ধ করার হুমকি দিয়ে। নববর্ষের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নতুন বছরের দ্বিতীয় টুইটবার্তায় ট্রাম্প এবার ক্ষোভ ঝাড়লেন ফিলিস্তিনের ওপর। হুমকি দিলেন সব আর্থিক সহায়তা বন্ধ করে দেবেন তিনি।

সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, বছরের প্রথম টুইটে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যেমন অবিরাম ‘মিথ্যাচার আর ঠগবাজি’র অভিযোগ তুলেছিলেন, দ্বিতীয় টুইটে ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে অনুরূপ অভিযোগের তর্জনী তুললেন ট্রাম্প। ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের অভিযোগ, ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি আলোচনা ও সংলাপের সব পথ বন্ধ করে বসে আছে।

তার ভাষায়, ‘ওরা আর আলোচনা চায় না; যুক্তরাষ্ট্র খামোকাই ওদের জন্য  কোটি কোটি ডলারের সাহায্য দিয়ে যাচ্ছে, অথচ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ওদের তরফে ন্যূনতম প্রশংসা বা শ্রদ্ধাটুকু পর্যন্ত নেই। ’’

লক্ষ্য করার বিষয়, ট্রাম্প যেদিন পাকিস্তানকে সামরিক সহায়তা বন্ধের হুমকি দিয়ে টুইট বার্তাটি দেন, ঠিক সেদিনই ঘণ্টাকয় পর হোয়াইট হাউস তা আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর করে। ট্রাম্প ও তার প্রশাসন আগে থেকে আঁটঘাট বেঁধেই যে তা করেছে তা স্পষ্ট। ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে তেমনটা হওয়ার আশঙ্কাই সত্য প্রমাণিত হতে যাচ্ছে। কেননা ট্রাম্পের টুইটের পর জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিক্কি হ্যালিও সে সুরেই মন্তব্য করে বলেছেন, ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থায় অর্থ দান বন্ধ করে দেবে যুক্তরাষ্ট্র।

টুইট বার্তায় ট্রাম্প আরও বলেন, ডিসেম্বরে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে বিতর্কিত স্বীকৃতি দেবার মধ্য দিয়ে জেরুজালেম ইস্যুকে আলোচনার টেবিল থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। এটা তিনি করেছেন নতুন শান্তি আলোচনার পথ প্রশস্ত করার জন্য।

যদিও স্বভাবে মুসলিম বিদ্বেষী ট্রাম্প আসলে ক্ষমতায় গেলে জেরুজালেমকে স্বীকৃতি দেবেন বলে নির্বাচনী প্রচারাভিযানে ইহুদি লবির কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই প্রতিশ্রুতিরই বাস্তবায়ন করলেন গত ডিসেম্বরে।  

ডিসেম্বরে ট্রাম্প যখন এই হঠকারি ও অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তটি ঘোষণা করেন তখন ইসরায়েলের অব্যাহত দখলদারির শিকার, ন্যায়বিচারবঞ্চিত ফিলিস্তিন স্বাভাবিকভাবেই প্রচণ্ড বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ফিলিস্তিনিরা তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলে, এই অন্যায় পদক্ষেপই বলে দেয় নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালনের যোগ্যতা যুক্তরাষ্ট্রের নেই।

ট্রাম্পের ওই অন্যায় পদক্ষেপ প্রাচ্যে-প্রতীচ্যে সবখানেই তুমুল নিন্দা কুড়ায়। যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় মিত্ররাও ট্রাম্পের পদক্ষেপের বিরোধিতা করে। আর জাতিসংঘে তা ব্যাপক নিন্দিত ও সমালোচিত হয়। ১২৮টি সদস্য রাষ্ট্র ট্রাম্পের নেয়া এই চরম উস্কানিমূলক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ভোট দেয়।

উল্লেখ্য, ট্রাম্পের অন্যায় পদক্ষেপের পরপরই ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস সাফ জানিয়ে দেন ট্রাম্প সরকার ভবিষ্যতে কোনো প্রস্তাব দিলে তিনি তা গ্রহণ করবেন না। তার ভাষায়, ‘যুক্তরাষ্ট্র শান্তি প্রক্রিয়ায় এক অসৎ ও পক্ষপাতদুষ্ট মধ্যস্থতাকারী হিসাবেই নিজের জাত চিনিয়েছে। ’

জেরুজালেমকে ‘‘ফিলিস্তিনের চিরদিনের রাজধানী’’ বলে আখ্যা দিয়ে মাহমুদ আব্বাস তখন বলে দেন, জেরুজালেমের ব্যাপারে তিনি এতোটুকু ছাড় দেবেন না।

যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রশাসন ফিলিস্তিনিদের প্রতি সবচেয়ে বিরূপ প্রশাসনগুলোর একটি। এছাড়া সবাই জানে, ব্যক্তিগতভাবেই ট্রাম্প বরাবরই কট্টর ফিলিস্তিন-বিরোধী; একই সঙ্গে তার মুসলিম-বিদ্বেষও সীমাহীন। তাছাড়া তিনি ফিলিস্তিনকে হুমকি দিতে গিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তিনি পাকিস্তানের প্রসঙ্গটি টেনে এনেছেন।  প্রকারান্তরে ফিলিস্তিনকেও তিনি ‘ঠগবাজ’ দেশ পাকিস্তানের কাতারে নামিয়েছেন অযাচিতভাবে।

ফিলিস্তিন-বিরোধী টুইটে যা যা বললেন ট্রাম্প
মঙ্গলবার সন্ধ্যার টুইটবার্তায় ট্রাম্প বলেন, আমরা অকারণে শুধু পাকিস্তানকেই যে শত শত কোটি ডলার দিই ব্যাপারটা এমন নয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ফিলিস্তিনের কথা। প্রতিবছর তাদের আমরা শত শত মিলিয়ন ডলার দিই। কিন্তু প্রতিদানে কিছুই পাই না। পাই না কোনো শ্রদ্ধা বা প্রশংসা। তারা ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসতে পর্যন্ত রাজি নয়, যা তাদের অনেক আগেই করা উচিত ছিল।
আমরা জেরুজালেম প্রসঙ্গটিকে, যা ছিল সবচেয়ে জটিল অংশ, আলোচনার টেবিল থেকে হটিয়ে দিয়েছি। তবে এজন্য ইসরায়েলকে আরো অনেক মূল্য দিতে হবে।

আর ফিলিস্তিনিরা তো আর শান্তি আলোচনায় বসতেই রাজি নয়। তাহলে আগামী দিনগুলোতে আমরা কিসের জন্য তাদের পেছনে কোটি কোটি ডলার খরচ করতে যাবো?

উল্লেখ্য, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থায় য়ুক্তরাষ্টই সবচেয়ে বড় তহবিলটির যোগান দেয়। অর্থাৎ মোট তহবিলের ৩০ শতাংশ। যার পরিমাণ ২০১৬ সালে ছিল ৩৭ কোটি ডলার।

সংবাদ সম্মেলনে নিক্কি হ্যালিরও কড়া বার্তা
জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিক্কি হ্যালি মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প প্রশাসনের নগ্ন ফিলিস্তিন-বিরোধিতার পরাকাষ্ঠা দেখান।

তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট মূলত যা বলেছেন তা হলো তিনি (ফিলিস্তিনিদের) বাড়তি কোনো অর্থ দিতে রাজি নন; অথবা তিনি অর্থ দেয়া বন্ধ রাখতে চান, যতক্ষণ না তারা (ইসরায়েলের সঙ্গে) শান্তি স্থাপনের জন্য আলোচনার টেবিলে ফিরে আসতে রাজি হয়।   

নিক্কি হ্যালি জাতিসংঘের সমালোচনা করে বলেন, জেরুজালেম প্রশ্নে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘে ভোটাভুটির ব্যাপারটা ‘পরিস্থিতির উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা’ পালন করেনি। ফিলিস্তিনিদের এখন সদিচ্ছার প্রমাণ দিয়ে দেখাতে হবে যে ,তারা আলোচনার টেবিলে ফিরে আসতে রাজি। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তারা তা করেনি, অথচ আমাদের কাছে ঠিকই সাহায্য চাইছে। কিন্তু আমরা তো আর এমনি-এমনি কোনো সাহায্য তাদের দেবো না!’

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৮
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।