ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

দাবানল থেকে বাঁচতে রুশ বিমান চেয়ে ধর্না দেবে আমেরিকা? 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৮
দাবানল থেকে বাঁচতে রুশ বিমান চেয়ে ধর্না দেবে আমেরিকা?  রাশিয়ার অগ্নিনির্বাপক প্লেন বেরিয়েভ বিই-২০০। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব এভিয়েশনের নেতৃত্ব দিলেও এখনও দেশটি  কোনো অগ্নিনির্বাপক প্লেন তৈরি করেনি। যদিও প্রতি বছরই দেশটির বেশ কিছু এলাকা দাবানলে পুড়ছে। 

এই মুহূর্তে আগুনে পুড়ছে ক্যালিফোর্নিয়া। অঙ্গরাজ্যটিতে ছড়িয়ে পড়া পৃথক তিনটি দাবানলে এখন পর্যন্ত ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এখন পর্যন্ত নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে অন্তত তিন লাখ মানুষকে। বলা হচ্ছে, ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে অঙ্গরাজ্যটিতে।

এর আগে ২০১৭ সালে টেক্সাসে ৯ হাজার ৮২৭টি, ক্যালিফোর্নিয়ায় ৯ হাজার ৫৬০টি, উত্তর ক্যারোলাইনায় ৫ হাজার ১২৫টি এবং জর্জিয়ায় ৩ হাজার ৯২৯টি দাবানলে পুড়েছে এসব এলাকার ঘরবাড়ি। এছাড়া দেশটির কলোরাডো, ওয়াশিংটন, নিউ মেক্সিকো, আলাস্কা, অ্যারিজোনা, আইডাহো, উটাহ এবং ওয়াইওমিংয়েও রাজ্যও বিভিন্ন সময় দাবানলের কবলে পড়েছে।   

এদিকে প্রতি বছর দাবানলে পুড়লেও দেশটি আগুন মোকাবিলা করতে পুরোপুরি সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি। অগ্নিনির্বাপক প্লেনের ক্ষেত্রে বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে কানাডা, রাশিয়া ও জাপান।  

কানাডা তৈরি করেছে সিএল-৪১৫। যা ‘ওয়াটার বোম্বার’ হিসেবে পরিচিত। ৬ হাজার ১০০ লিটার পানির সঙ্গে অগ্নি প্রতিরোধক রাসায়নিক মিশিয়ে বহন করতে সক্ষম অগ্নিনির্বাপক প্লেনটি। এই প্লেনটি তৈরি হয়েছে অগ্নিনির্বাপক মিশনের জন্য। এর আগে সিএল-২১৫ মডেলের ছোট একটি প্লেন তৈরি করেছিল কানাডা। ওই ছোট অগ্নিনির্বাপক প্লেনের সফলতার পরে তৈরি করা হয়েছে সিএল-৪১৫। কানাডিয়ান এ প্লেনগুলো  বিশ্বব্যাপী ব্যবহার করা হচ্ছে। আর এই প্লেনগুলো আগুন নেভানোর ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকাও রাখছে।

জাপান তৈরি করেছে ইউএস-২ মডেলের অগ্নিনির্বাপক প্লেন। চারটি ইঞ্জিনবিশিষ্ট প্লেনটি বর্তমানে জাপানের প্রতিরক্ষা বাহিনী পরিচালনা করে। এর আগে জাপান তৈরি করে ইউএস সি-১৩০ মডেলের অগ্নিনির্বাপক প্লেন।  

অন্য এয়ারক্রাফটের তুলনায় ইউএস-২ ব্যয়বহুল। এটি অগ্নিনির্বাপনের পাশাপাশি যুদ্ধক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়। এর বিক্রয় মূল্য কমিয়ে যেখানে শিনমায়য়া ইউএস-২’র মূল্য ১১৩ মিলিয়ন ডলার সেখানে কানাডার সিএল-৪১৫’র মূল্য ২৬ মিলিয়ন ডলার আর রাশিয়ার বেরিয়েভের মূল্য ২০ মিলিয়ন ডলার।

চীনের এজি-৬০০ অগ্নিনির্বাপক প্লেনটি অনেককটা জাপানে তৈরি ইউএস-২ মডেলের মতোই।

এদিকে রাশিয়ার আছে বেরিয়েভ বিই-২০০ উভচর প্লেন। এটি আলাদা আটটি ট্যাংকে ১২ টন (১২ হাজার লিটার) পানি নিয়ে ছুটে যেতে পারে দাবানল আক্রান্ত এলাকায়। এই প্লেনটি এরইমধ্যে ইউরোপ-এশিয়ার বিভিন্ন দেশে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছে। এছাড়া এটি যাত্রী পরিবহনেও ব্যবহার করা যায়।

প্রতি বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দাবানল থেকে বাঁচতে ১ হাজার অগ্নিনির্বাপক প্লেন ইজারা নেয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্লেন ইজারা নিতে মার্কিনিদের ব্যয় বেড়েছে।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা, ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার উপর মার্কিন নজরদারিসহ আরও নানা ইস্যুতে দু’দেশের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। তবে বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানলে ভয়াবহতা বিবেচনায় পূর্বের তিক্ততা ভুলে রাশিয়ার অগ্নিনির্বাপক প্লেন ইজারা নিতে পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।  আর এজন্য রাশিয়ার ওপর থেকে বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার কথাও ভাবছে তারা।

এছাড়া এ মুহূর্তে ক্যালিফোর্নিয়ার আগুনের লাগাম টেনে ধরতে অগ্নিনির্বাপক প্লেনগুলোর মধ্যে রাশিয়ার বেরিয়েভ বিই-২০০ সেরা। এছাড়া বাজেটের দিক দিয়েও এটি বেশ সাশ্রয়ী।  

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন হয়তো এমন কোনো সুযোগ খুঁজছে যেখানে রাশিয়ার সঙ্গে ইতিবাচক সহযোগিতা সম্ভব। আগামী নভেম্বরের ৩০ থেকে ডিসেম্বরের ১ পর্যন্ত বুয়েনস আইরেসে জি-২০ সম্মেলনে মুখোমুখি হবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তখন এই ইস্যুটি নিয়ে আলোচনার হতে পারে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৮
এপি/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।