চলতি বছরের এপ্রিলে বোমা বিস্ফোরণে আড়াই শতাধিক মানুষের প্রাণহানির শোক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি শ্রীলঙ্কাবাসী। সেইসঙ্গে গত বছরের রাজনৈতিক অস্থিরতার রেশ তো রয়েই গেছে দলগুলোতে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে দ্বীপরাষ্ট্রটির আসন্ন নির্বাচনের খবর। বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অষ্টম জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে ৩৫টি রাজনৈতিক দল। তবে জনজরিপ যাছাই-বাছাই করে ধারণা করা হচ্ছে, তুমুল লড়াই হবে সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসের ভাই গোটাবায়ে রাজাপাকসে ও ক্ষমতাসীন ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) উপ দলনেতা ও মন্ত্রী সাজিথ প্রেমাদাসার মধ্যে। গোটাবায়ে রাজাপাকসে লড়ছেন সিংহলিজ বুদ্ধিস্ট ন্যাশনাল পার্টির (এসএলপিপি) পক্ষ হয়ে।
মাহিন্দা রাজাপাকসের আমলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন গোটাবায়ে। শ্রীলঙ্কার সংখ্যালঘু তামিল ও কট্টর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যকার রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের অবসানের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। যদিও সেনাবাহিনীর সঙ্গে আঁতাত, নৃশংসতা ও দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
অপরদিকে, শ্রীলঙ্কায় সংখ্যালঘু ও নিম্নবর্ণ থেকে নির্বাচিত প্রথম প্রধানমন্ত্রী রানাসিংহ প্রেমাদাসার ছেলে সাজিদ প্রেমাদাসার জনপ্রিয়তা সংখ্যালঘুদের মধ্যে বেশি। তবে কট্টর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ে ততটা সুবিধাজনক অবস্থান তৈরি করতে পারেননি তিনি। শ্রীলঙ্কার মন্থর অর্থনীতিকে গতিশীল করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রচারণা চালিয়েছে তার দল ইউএনপি।
গোটাবায়ের প্রচারণায় প্রাধান্য পেয়েছে সহিংসতামুক্ত নিরাপদ পরিবেশ তৈরি ও সন্ত্রাস নির্মূল অভিযান বিষয়ক স্লোগান। চলতি বছরের ইস্টার সানডের নির্মম হত্যাকাণ্ডকে তুলে ধরে জোর প্রচারণা চালাচ্ছে এসএলপিপি।
এদিকে, শ্রীলঙ্কার নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে দক্ষিণ ভারত মহাসাগরে প্রভাব বিস্তারকারী রাষ্ট্র ভারত ও চীন। মহাসাগরের বেশিরভাগ জলসীমাই যেহেতু দ্বীপরাষ্ট্রটির মালিকানায় রয়েছে, তাই চীন-ভারত দু’দেশই চায় শ্রীলঙ্কায় নিজেদের পছন্দের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হোক।
সেক্ষেত্রে মোদী সরকার চায় প্রেমাদাসাই যেন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তবে সিংহল নেতাদের ধারণা গোটাবায়ে রাজাপাকসে হেরে গেলে বেইজিংয়ের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে টানাপড়েনে পড়বে নব-নির্বাচিত সরকার।
এদিকে, আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে রাজধানী কলম্বোসহ গোটা দেশ। যেকোনো সহিংসতা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। জনসাধারণ যেন নিজ প্রার্থীকে ভোট দিতে এসে হেনস্থার শিকার না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৯
কেএসডি/