সোমবার (১৮ নভেম্বর) লোকসভার শীতকালীন অধিবেশনে বিলটি তোলার কথা রয়েছে। এ নিয়ে ইতোমধ্যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে কলকাতা, আসাম, ত্রিপুরা, মনিপুরসহ বিভিন্ন বাঙালি ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যে।
এর আগেও একবার লোকসভায় নাগরিক তালিকা সংশোধনের প্রস্তাব তুলেছিল বিজেপি। তবে, রাজ্যগুলোতে তুমুল বিক্ষোভের মুখে সেটি পাস হওয়ার সময় পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয় সরকার। সোমবার আবারও সংশোধনী নাগরিক বিল উত্থাপনকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে আসামসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলো।
১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিলের এ প্রস্তাবে বলা হয়, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের নির্যাতিত হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও জৈন ধর্মাবলম্বীরা ভারতে নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারবে। সেক্ষেত্রে যারা ২০১৪ সালের মধ্যে ভারতে স্থায়ী হয়েছে, তাদেরই শুধু নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। আর বাঙালিদের ক্ষেত্রে প্রমাণ করতে হবে তারা ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের মধ্যে ভারতে প্রবেশ করছে, নয়তো তাদের যুদ্ধে পালিয়ে যাওয়া নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত করা হবে।
এ নিয়ে প্রবল আপত্তি জানিয়েছে বিরোধী দল কংগ্রেস ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের স্থানীয় সরকারগুলো। কারণ, চলতি বছরের আগস্টে আসামে ভারতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) কমিটি চূড়ান্ত তালিকা থেকে প্রায় ১৯ লাখ স্থানীয় বাসিন্দার নাম বাদ পড়েছে, যাদের সিংহভাগই মুসলিম ধর্মাবলম্বী। বিরোধীদলগুলোর দাবি, কট্টর হিন্দুত্ববাদী মোদী সরকার ধর্ম নিরপেক্ষ ভারতে বেছে বেছে মুসলিম অধিবাসীদের অবৈধ চিহ্নিত করছে।
এদিকে, এই ১৯ লাখ অধিবাসী নিজেদের ভারতীয় বলে প্রমাণ করতে না পারলে তাদের রাষ্ট্রহীন ঘোষণা করা হবে। ২০১৮ সালে এনআরসির প্রথম খসড়া প্রতিবেদনে এর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৮০ লাখ। পরে, মানবাধিকার সংস্থা, রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রীসহ জনসাধারণের বিক্ষোভের মুখে চূড়ান্ত তালিকায় সেই সংখ্যা নামিয়ে আনা হয় ১৯ লাখে। আর এদের বেশিরভাগই বাঙালি মুসলিম।
বলা হচ্ছে, ৩৭০ ধারা বিলোপ বিলের মতো এটিও যদি পার্লামেন্টে পাস হয়ে যায়, তবে ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের মতোই আসামের মুসলিম অধিবাসীরাও নির্যাতনের শিকার হবে।
এর আগে, শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) আসামের নাগরিকপঞ্জি সংশোধনের বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক মার্কিন কমিশন (ইউএসসিআরআইএফ)। এতে বলা হয়, মুসলিমদের রাষ্ট্রহীন করতেই নাগরিক তালিকাকে হাতিয়ার বানিয়েছে ভারত সরকার। দেশটিতে নাগরিকদের ধর্মীয় স্বাধীনতা কমছে এটি তারই প্রমাণ বলে জানায় তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৯
কেএসডি