গর্ভে সন্তান জন্ম দিতে হলে সহবাসের প্রয়োজন, এটাই প্রচলিত নিয়ম। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বলছেন, সহবাস ছাড়াই অন্তঃসত্ত্বা হওয়া সম্ভব।
যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল মেডিক্যাল স্কুলের অবস্টেট্রিক্স অ্যান্ড গাইনিকোলজি অ্যান্ড রিপ্রোডাক্টিভ সায়েন্সেসের ক্লিনিক্যাল প্রফেসর মেরি জেন মিনকিন বলেন, যৌনমিলন ছাড়াই নারী অন্তঃসত্ত্বা হতে পারেন।
টেক্সাসের গাইনি চিকিৎসক জেসিকা শেফার্ড বলেন, এভাবে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম, কারণ শরীরের বাইরে শুক্রাণু খুব অল্পসময় বেঁচে থাকতে পারে। তারপরও এটা (ভার্জিন প্রেগন্যান্সি) সম্ভব হতে পারে এবং এরকম ঘটনা ঘটেছেও।
যৌনমিলন ছাড়া গর্ভধারণ যেভাবে সম্ভব
গর্ভধারণ করতে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলন প্রয়োজন, যা সাধারণত পুরুষাঙ্গ যোনিতে প্রবেশের পর বীর্যপাত হলেই ঘটে থাকে। তবে মার্কিন চিকিৎসক জেসিকা শেফার্ড বলছেন, কখনও কখনও নারী-পুরুষের অন্তরঙ্গ মুহূর্তে যোনির আশপাশে বীর্যপাত হলেও শুক্রাণু-ডিম্বাণুর মিলন ঘটতে পারে। কিংবা পুরুষ হস্তমৈথুন করার পরপরই নারীর গোপনাঙ্গ স্পর্শ থেকেও।
ডা. মেরি জেন মিনকিন বলেন, প্রথম কয়েক ফোঁটা বীর্যে প্রচুর শুক্রাণু থাকে, যা কোনোমতে জরায়ুমুখে পৌঁছাতে পারলেই একজন নারী অন্তঃসত্ত্বা হতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, অল্প বয়সী নারীদের ভার্জিন প্রেগন্যান্সির সম্ভাবনা বেশি থাকে। কেননা তাদের জরায়ু খুবই উর্বর। তাই জেনে রাখা ভালো যে, যোনিতে পুরুষাঙ্গের প্রবেশ ছাড়াও বাস্তবিকপক্ষে গর্ভধারণ ঘটতে পারে। পুরুষ সঙ্গী যোনিমুখে বীর্য ফেললেই এমন ঘটনা ঘটতে পারে। এর কারণ শুক্রাণুরা ভালো সাঁতার কাটতে পারে।
গবেষণায় যা উঠে এসেছে
এ বিষয়ে বিস্তর গবেষণা চালায় যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লনগিটুডিনাল স্টাডি অব অ্যাডোলেসেন্ট হেলথের ডাটা অ্যানালাইসিস। এই গবেষণায় অংশ নেন ৭ হাজার ৮৭০ জন নারী।
তাদের মধ্যে ৪৫ জন জানান, তাদের ভার্জিন প্রেগন্যান্সি হয়েছে, যার সঙ্গে ইন-ভাইট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) অথবা ইন্ট্রাইউটেরাইন ইনসেমিনেশনের (আইইউআই) মতো সন্তান জন্মদান প্রযুক্তির সম্পর্ক ছিল না।
নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ফেইনবার্গ স্কুল অব মেডিসিনের ক্লিনিক্যাল অবস্টেট্রিক্স অ্যান্ড গাইনিকোলজির অধ্যাপক লরেন স্ট্রেইচার বলেন, অনেক চিকিৎসকের কাছে অন্তঃসত্ত্বা নারীরা জানিয়েছেন, তারা এখনও ভার্জিন এবং তাদের হাইমেন অক্ষত।
হাইমেন হলো অতিরিক্ত টিস্যুর পাতলা পর্দা। বাংলায় এটাকে বলে সতীচ্ছদ পর্দা। হাইমেন নিয়ে কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে। প্রাচীনকালে অক্ষত হাইমেনকে সতীত্বের প্রতীক মনে করা হতো। এখনও অনেক ক্ষেত্রে এটার প্রচলন রয়েছে।
তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যাপক উন্নতির ফলে এখন জানা সম্ভব হয়েছে যে, যৌনমিলন ছাড়াও শারীরিক পরীক্ষা, শরীরচর্চা এবং আরও অনেক কারণে হাইমেন পর্দা ছিঁড়ে যেতে পারে।
অধ্যাপক লরেন স্ট্রেইচারের মতে, যদি কোনো নারীর হাইমেন অক্ষত থাকে এবং তিনি জানান যে কখনো সহবাস করেননি, তাহলে তার ভার্জিন প্রেগন্যান্সি সত্য হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২১
নিউজ ডেস্ক