কমেডিয়ান থেকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ভলোদিমির জেলেনস্কি। ইতিহাসের কঠিনতম সময়ে ইউক্রেনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।
দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের মাধ্যমে জেলেনস্কিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চান রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণ রাখতে চান নিজের হাতে। এ জন্য পুতুল এক প্রশাসককে ইউক্রেনের ক্ষমতায় বসাতে ‘নীল নকশা’ করেছে মস্কো। তারা ক্ষমতায় চান ভিক্টর ইয়ানুকোভিচকে।
ইউক্রেনের বর্তমান সরকারের আগে কিয়েভের প্রেসিডেন্ট ছিলেন ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ। তিনি ছিলেন রুশপন্থি। পাশাপাশি পুতিনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবেও তাকে চিনত বিশ্ব রাজনীতি। কিন্তু ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে দুবার ক্ষমতাচ্যুত হন ইয়ানুকোভিচ। কিয়েভের এক অনলাইন সংবাদমাধ্যমের দাবি, রাশিয়া নাকি ইতোমধ্যেই ভিক্টরকে ইউক্রেনের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট পদে বসানোর প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে।
ইয়ানুকোভিচের জন্ম ১৯৫০ সালের জুলাইয়ে ইয়েনাকিয়েভো এলাকায়। তার বাবা একজন ধাতুশ্রমিক, মা নার্স। যৌবনেই ভয়ংকর অপরাধ করায় তাকে দুবার জেলে যেতে হয়। যদিও নিজের জন্মপঞ্জীতে ওই সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন ইয়ানুকোভিচ। পূর্ব ইউক্রেনের এক প্রধান খনি শিল্পের পরিবহণ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করা ইয়ানুকোভিচ ২০০০ সালে অর্থনীতিতে ডক্টরেট করেন।
এরপর নিজের রাজ্য দোনেৎস্কের গভর্নর নিযুক্ত হন। সেই সময় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ছিলেন লিওনিদ কুচমা। তিনি ২০০২ সালে ভিক্টর ইয়ানুকোভিচকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ করেন। ২০০৪ সালে তিনি প্রেসিডন্ট পদে নির্বাচিত হন। কিন্তু, নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে কিয়েভে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়, যা ‘কমলা বিক্ষোভ’ নামে পরিচিত। সেই সময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন খোলাখুলিই ভিক্টর ইয়ানুকোভিচকে সমর্থন করেন।
মস্কোর কাছের মানুষ হিসেবে যাতে তার পরিচিতি গড়ে না ওঠে, ইয়ানুকোভিচ সেই চেষ্টা বহুবার করেছেন। কিন্তু তারপরও ইউক্রেনের বিপদজনক আর্থিক পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে ইয়ানুকোভিচ অস্বীকার করেন। কারণ, হিসেবে জানান যে, এই চুক্তি করলে মস্কোর সঙ্গে তার বর্তমান বাণিজ্য মার খাবে।
২০০৬-০৭ সালে ফের প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচিত হন ভিক্টর। হয়ে ওঠেন ইউক্রেনের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ। ২০১০ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী ইউলিয়া তিমোশেঙ্কোকে পরাজিত করে তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। প্রেসিডেন্ট থাকাকালে তিনি ইউক্রেনের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সুসম্পর্ক বজায় রাখার ওপর বিশেষ জোর দেন।
২০১৩ সালের নভেম্বর স্বাক্ষরের ঠিক আগে তিনি একটি চুক্তি খারিজ করে দেন। এর জেরে তার বিরুদ্ধে ২০০৪ সালের থেকেও বড় বিক্ষোভ হয়। মাসের পর মাস বিক্ষোভ চলে। যাকে ঘিরে ১৮ এবং ২২ ফেব্রুয়ারি রক্তাক্ত হয় ইউক্রেন। উর্দিধারী স্নাইপারদের গুলিতে ৪৮ ঘণ্টায় ৮৮ জন প্রাণ হারান। এরপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের চাপে ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ পার্লামেন্টের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তে বাধ্য হন। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইউক্রেন ছেড়ে রাশিয়ায় পালিয়ে যান ইয়ানুকোভিচ।
সেই ভিক্টর ইয়ানুকোভিচকে আবার ক্ষমতায় দেখতে চান পুতিন। তার মাধ্যমেই ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণ রাখতে চান নিজের হাতে। এ কারণেই ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছেন পুতিন। এই যুদ্ধে এরই মধ্যে ১০ লাখের বেশি মানুষ ইউক্রেনে ছেড়ে পাশের দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। অনেক হতাহতের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০২২
জেএইচটি