ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

জাহান্নামের সহজ পথ!

তামীম রায়হান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৪
জাহান্নামের সহজ পথ!

আমরা অহরহ পত্র-পত্রিকায়, পথেঘাটে কিংবা যানবাহনে বিজ্ঞাপন দেখি, সহজ উপায়ে ইংরেজি শিক্ষা, সহজ উপায়ে ধনী হওয়াসহ নানাবিধ শর্টকাট পদ্ধতিতে সাফল্যের বাহারি নোট-নোটিশ।

ওই শর্টকাট পথ ধরে কেউ কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছে কি-না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

তবে একটি বিষয় খুব সহজেই আপনাকে অন্যত্র পৌঁছে দেবে। কী সেই বিষয় ও কোন সে গন্তব্য! আমরা সবাই অহরহ সেই বিষয়টিতে লিপ্ত ও প্রতিনিয়ত ওই গন্তব্যের দিকে ধাবিত। মিথ্যা ও অসততা।

সাধারণের বেলায় আমরা বলে থাকি, তিনি মিথ্যা কথা বলেছেন। আর অসাধারণদের বেলায় বলি, তিনি অসত্য বলেছেন কিংবা তার কথাটি সত্য নয়।

কোনো অবাস্তব বিষয়কে বাস্তব করে বলা কিংবা ঘটেনি এমন বিষয়কে ঘটেছে বলে দাবি করার নাম মিথ্যা। যে নামেই এর প্রকাশভঙ্গি হোক, সবার গন্তব্য একই কেন্দ্রে নির্ধারিত। সহজ কথায়, জাহান্নামে যাওয়ার সবচেয়ে সহজ এবং শর্টকাট পথ ও পদ্ধতি হচ্ছে মিথ্যা বলা।

এতো গেল পরকালের কথা। কিন্তু এ পার্থিব সংসারে! সামান্য মিথ্যা আপনার সব পরিচয়, অর্জন ও সাফল্য ধুলোয় মিশিয়ে দিতে যথেষ্ট। দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব কিংবা আস্থার সম্পর্ক বিনষ্টে এর চেয়ে কার্যকরী উপাদান আর নেই।

হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কখনো মিথ্যা বলবে না। মিথ্যা পাপের দিকে নিয়ে যায়। আর পাপ মানুষকে জাহান্নামে পৌঁছে দেয়। কোনো বান্দা যখন সবসময় মিথ্যা বলে ও মিথ্যা নিয়েই ভাবে, তখন আল্লাহ পাকের কাছেও সে মিথ্যাবাদী হিসেবে পরিচিতি পেয়ে যায়। (বুখারি ও মুসলিম)

পৃথিবীর কোনো ধর্ম কিংবা কোনো শাস্ত্র অথবা মতবাদে মিথ্যা বলার বৈধতা নেই। মানুষে মানুষে বিশ্বাস ও আস্থার প্রথম ভিত্তি সত্য ও সততা। একটি মিথ্যা থেকে শুরু হতে পারে ব্যাপক দ্বন্দ্ব ও ধ্বংসের সূচনা। পৃথিবীর ইতিহাসে অজস্র হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসলীলার মূলে রয়েছে একটি মিথ্যা। সেই মিথ্যা থেকে ছড়ায় আরও অনেক মিথ্যার ডালপালা। এভাবেই সূচনা হয় ঝগড়া ও অবিশ্বাসের পথচলা।

নগদ কোনো লাভ বা উপকার পেতে কিংবা কোনো ক্ষতির হাত থেকে বাঁচার জন্য মানুষ মিথ্যা বলে। সে ভাবে, এতেই তার নিরাপত্তা রয়েছে। নগদ লাভের মোহে কাঁধে তুলে নেয় সুদূরপ্রসারী ক্ষতির দুর্ভাবনা।

অন্যের কাছে নিজের কথা আকর্ষণীয় ও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্যও মানুষ মিথ্যা কথা বলে। ভাবে, এটুকু মিথ্যা না মেশালে কথার আকর্ষণটা থাকবে না। সাময়িক এ মোহ বক্তাকে নিয়ে যেতে পারে স্থায়ী ক্ষতির অতল গভীরে।

এর বাইরেও মানুষ নানা কারণে মিথ্যা বলে। মিথ্যা প্রোপাগাণ্ডা ছড়ায় নিজের উদ্দেশ্য সাধনে। গোটা সমাজ তখন কলুষিত হয় মিথ্যার বিষবাষ্পে। সমাজের বিশুদ্ধতা ও মানুষ হিসেবে নিজেদের মর্যাদা ঠিক রাখার জন্যই ইসলাম সব ধরনের মিথ্যাকে হারাম ঘোষণা করেছে।

আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে সুরা বনি ইসরাইলের ৩৬ নম্বর আয়াতে বলেন, যে বিষয়ে তোমার জানা নেই, তার অনুসরণ করো না।

লোকদের হাসানোর জন্য মিথ্যা কৌতুক বলায় পারদর্শী লোকের অভাব নেই আমাদের সমাজে। এমন লোকদের প্রসঙ্গে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ওই লোক সত্যিই দুর্ভাগা, যে মানুষকে হাসানোর জন্য কথা বলে ও তাতে মিথ্যা মেশায়। সে বড়ই দুর্ভাগা, হতভাগা। (আহমদ, আবুদাউদ)

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কোনো মুমিন কি কৃপণ হতে পারে? তিনি বলেছিলেন, হ্যা, হতে পারে। আরও জানতে চাওয়া হলো, মুমিন ব্যক্তি কি ভীরু হতে পারে? তিনি বললেন, হ্যা, হতে পারে। কিন্তু যখন আরজ করা হলো, মুমিন কি মিথ্যাবাদী হতে পারে? নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম সাফ জানিয়ে দিলেন, কারো হৃদয়ে ঈমান ও মিথ্যা একসঙ্গে থাকতে পারে না। অন্য এক হাদিসে তিনি মুনাফেকের যে তিনটি নিদর্শন বর্ণনা করেছেন, সেগুলোর প্রথমটি হলো, সে যখন কথা বলে তখনই মিথ্যা বলে।

মিথ্যার ভয়াবহতা ও পরকালে এর পরিণতি অল্পকথায় বোঝানো সম্ভব নয়। স্বয়ং মিথ্যাবাদী যখন অন্যের কাছে মিথ্যা আশা করে না, তখন এর মন্দ দিকের সামান্য অংশ খুব সহজেই অনুমেয়। কাজেই, জীবনে চলার পথে যে কোনো প্রয়োজনে মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া থেকে বিরত থাকা শুধু মুসলমান বলে নয়, মানুষ হিসেবে আমাদের প্রথম কর্তব্য। সত্যবাদী মানুষ সবার কাছে প্রিয়, এখানেই তার প্রথম সাফল্য।

তবে প্রসঙ্গক্রমে জেনে রাখা প্রয়োজন, তিনটি ক্ষেত্রে মিথ্যার বৈধতা ইসলামে গ্রহণ করা হয়েছে। বিবদমান মানুষের মধ্যে মীমাংসা করে দেওয়ার জন্য, যুদ্ধক্ষেত্রে কৌশল হিসেবে ও স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করার জন্য।

তবে এসবের বেলায়ও সবার আগে নিজের বিবেককে অন্তত জিজ্ঞেস করে নিন, সত্যিই কি উদ্দেশ্য ও ফলাফলের মাপকাঠিতে এ মিথ্যা প্রয়োজনীয়!

আসুন, সাময়িক লাভ বা নিজের সামান্য নগদ ফায়দার জন্য মিথ্যার কলঙ্কে না গিয়ে সত্য ও সততার শুভ্রতায় নিজের ইহজগত ও পরকাল সাজিয়ে তুলি।

ইসলাম ডেস্ক মেইল: [email protected]
 
বাংলাদেশ সময়: ০৬৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।