রিয়াদ: ৩ অক্টোবর শুক্রবার হজ। সৌদি আরবের মক্কা নগরী থেকে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক (আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির) ধ্বনি দিয়ে মিনায় সমবেত হচ্ছেন।
আর এর মাধ্যমে হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে গেছে। ৫ দিনব্যাপী বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে পবিত্র হজ সম্পন্ন হবে।
এ বছর বাংলাদেশি ব্যালটি হাজীরা মিনার ২২ নম্বর মোয়ালেলম তাবুতে অবস্থান করবেন। আর নন ব্যালটি হাজীরা থাকবেন মিনার ৪, ১৪, ১৮, ২২, ২৫, ৫৩, ৫৮, ৬৬, ৭১, ৭২, ৭৭, ৮০, ৮১, ৮৪, ৮৫, ৮৬, ৮৭, ৮৯, ৯০, ৯৩, ৯৫, ৯৫, ৯৮ ও ১১৫ নম্বর তাবুতে।
কোনো হাজী দলছুট হয়ে গেলে তার মোয়াল্লেম (গাইড) নম্বর দেখে পুলিশ বা দায়িত্বরত কর্মকর্তারা দলের অবস্থানস্থল চিহ্নিত করতে পারেন। মিনায় গিয়ে অনেক হাজী বিভিন্ন সমস্যার সম্মূখীন হন। তাই বাংলাদেশ হজ মিশনের আইটি সেলের পক্ষ থেকে হজযাত্রীদের মিনার মানচিত্রের ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাদের মাঝে মানচিত্র বিতরণ করা হয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মক্কায় অবস্থানকারী প্রায় ২০ লক্ষাধিক হাজীরা বুধবার রাত থেকেই মিনার পথে রওনা হয়েছেন। এজন্য মিনার পথে প্রচন্ড যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
বুধবার রাতেই অনেকে পৌছে গেলেও সব হাজীরা বৃহস্পতিবার মিনায় একত্রিত হবেন। এরপর শুক্রবার ফজরের নামাজ পড়ে হাজীরা রওনা হবেন আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশে।
হাজিরা মিনায় পাঁচ ওয়াক্ত কসর নামাজ আদায় করবেন এবং শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করবেন। শুক্রবার ফজরের পর তারা আরাফাতের উদ্দেশে যাত্রা করবেন।
শুক্রবার আরাফাতে হজের খুতবা শুনবেন এবং এক আজানে জুমা ও আসরের (জুহরাইন) নামাজ আদায় করবেন।
সন্ধ্যায় (সূর্যাস্তের পর) তারা মুজদালিফার উদ্দেশে আরাফাতের ময়দান ত্যাগ করবেন।
মুজদালিফায় পৌঁছে আবারো এক আজানে আদায় করবেন মাগরিব ও এশার নামাজ। সেখান থেকে জামারায় (প্রতীকী শয়তান) নিক্ষেপের জন্য কঙ্কর (ছোট পাথর) সংগ্রহ করবেন।
মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে রাতযাপনের পর ১০ জিলহজ (শনিবার) সকালে সূর্যোদয়ের পর জামারায় পাথর নিক্ষেপের জন্য রওনা দেবেন হাজিরা।
সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে যাওয়ার আগে পূর্বে (দুপুরের আগে) জামারাতুল আকাবায় (বড় শয়তান) ৭টি পাথর নিক্ষেপ করবেন তারা।
জামরাতুল আকাবায় পাথর নিক্ষেপের পর আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় হাজিরা পশু কোরবানি করবেন। এরপর মাথা মুণ্ডন করে এহরাম খুলে পোশাক পড়বেন হাজিরা। একে তাহাল্লুলে আসগর বলা হয়।
তারপর তাওয়াফে ইফাদা (কাবাঘর তাওয়াফ) এবং সায়ী (সাফা-মারওয়ায় সাত চক্কর) শেষ করে ফের মিনায় ফিরে যাবেন।
১১ ও ১২ জিলহজ (রোব এবং সোমবার) মিনায় অবস্থান করে সূর্য হেলে পড়ার পর প্রতিদিন ছোট, মধ্য ও বড় জামারায় পাথর নিক্ষেপ করে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের আগে মিনা ত্যাগ করবেন হাজিরা।
যারা ১২ তারিখ সূর্যাস্তের আগে মিনা ত্যাগ করতে পারবেন না, তারা ১৩ তারিখ মঙ্গলবার সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত মিনায় অবস্থান করবেন এবং জামারায় ১১ ও ১২ তারিখের মতো পাথর নিক্ষেপ করবেন।
এরপর বুধবার মক্কায় অবস্থান করে বিদায়ী তাওয়াফ সম্পন্ন করে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করবেন হাজিরা। আর যারা মদীনা জিয়ারত করবেন না তারা মদীনার উদ্দেশে মক্কা ত্যাগ করবেন।
এদিকে নির্বিঘ্নে হজ সম্পন্ন করার জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষ বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। মক্কা ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশসহ নিরাপত্তা বাহিনীর লক্ষাধিক সদস্য। এর মধ্যে আছে পাঁচ হাজার দাঙ্গা পুলিশ। অস্ত্রসজ্জিত সহস্রাধিক যানসহ আধুনিক যান নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় টহল দিচ্ছে পুলিশ। ভিড়ের চাপে পদপিষ্ট হওয়াসহ যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় নিয়োজিত রাখা হয়েছে হাজার হাজার কর্মী। কোনো ধরনের দাঙ্গা ও সন্ত্রাস মোকাবেলায় বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে হেলিকপ্টার। দায়িত্ব পালন করছেন চিকিৎসকসহ ২৫ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী। এ ছাড়া হাজীদের পথ দেখানোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ১৪ হাজার নারী-পুরুষ কর্মী সহযোগিতার জন্য নিয়োজিত রয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০১৪