ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ইসলাম

ওমরার নামে মানব পাচার!

নীতি-নৈতিকতা বলে কিছু রইল না

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৫
নীতি-নৈতিকতা বলে কিছু রইল না

ধর্ম মন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বলেছেন, কিছু সংখ্যক হজযাত্রী হজ ভিসা নিয়ে সৌদি আরব যাওয়ার পর দেশে ফেরত না এসে বহির্বিশ্বে অবস্থান করে দেশের ভাবমর্যাদা ও স্বার্থ ক্ষুণ্ন করছে। সংসদে প্রশ্নোত্তরে গতকাল সোমবার (২৩ নভেম্বর) এ তথ্য জানান ধর্ম মন্ত্রী।



ধর্মমন্ত্রী আরও বলেন, যে সব হজযাত্রী দেশে ফিরছেন না, জাতীয় হজ ও ওমরা নীতিমালার আলোকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

এর আগে (১৮ নভেম্বর, বুধবার) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ধর্ম মন্ত্রী জানান, ওমরার নামে মানবপাচারের অভিযোগে ৬৯টি হজ এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।

গত বছর সৌদি আরবে ওমরার নামে মানবপাচারের অভিযোগ উঠেছিল যে ১০৪টি হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে তাদের মধ্যে ৯৫টিকে শাস্তি দিয়েছে সরকার। শাস্তি হিসেবে ৬৯টি হজ এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। জামানত বাজেয়াপ্তসহ জরিমানাও করা হয়েছে এসব এজেন্সিকে। এছাড়া শুধু জরিমানা করা হয়েছে ২৬টি এজেন্সিকে। নয়টি এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি।

মন্ত্রী বলেন, গত বছর বাংলাদেশ থেকে ওমরা করতে ১১ হাজার ৪৮৫ জন সৌদি আরব গিয়ে ফেরত আসেননি। বিষয়টি সৌদি আরবের ওমরা কর্তৃপক্ষ আমাদের অবহিত করে। তারা জানায়, ওমরার নামে কিছু এজেন্সি মানবপাচারে জড়িত। এরপর সৌদি কর্তৃপক্ষ ওমরার জন্য বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধ রাখে। ’

সম্প্রতি সৌদি আরবের হজ মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে সৌদি গেজেটে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়, নভেম্বর মাস থেকে ওমরা মৌসুম শুরু হবে (যা সাধারণত হিজরি সনের সফর মাসের প্রথম দিন শুরু হয় এবং রমজান মাসের শেষ পর্যন্ত চলে)। ওই খবরে সৌদি হজ মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বলা হয়, নাইজেরিয়া, উগান্ডা ও তুরস্ক ছাড়া সব দেশকে ওমরা ভিসা প্রদান করা হবে। কিন্ত বাস্তবতা হলো, এখনও বাংলাদেশিদের ভিসা প্রদান শুরু হয়নি।

মানবপাচারের বিচার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ সৌদি সরকার। এ কারণে খুলছে না ওমরার দুয়ার। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ওমরাযাত্রীরা ওমরা পালনের জন্য আরবি সফর মাসের প্রথম দিন থেকেই মক্কা-মদিনায় উপস্থিত হচ্ছেন। বাংলাদেশিদের জন্য ওমরা ভিসা বন্ধ থাকায় প্রকৃত ওমরা পালনকারীরা ওমরায় যেতে পারছেন না।

এমনকি গত রমজান মাসে বিশ্বের সকল দেশের মুসলমানরা ওমরা পালনের সুযোগ পেলেও একমাত্র বাংলাদেশের মুসলমানরা সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এ অবস্থা একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান দেশের জন্য অবশ্যই লজ্জাজনক ও মানসিক পীড়াদায়ক।

গত ওমরা মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ ওমরা ভিসাধারী চাকরি সন্ধ্যানকারী বাংলাদেশে ফেরত না আসায় দুদেশের মধ্যে সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। ওমরার নামে সৌদিতে চাকরি সন্ধ্যানকারীদের পাঠিয়ে এক শ্রেণীর অসাধু এজেন্সির মালিকরা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এর ফলে এখন শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে পুরো জাতিকে।

বিষয়টি সরকারের জন্য অবশ্যই বিব্রতকর। সরকার পরিস্থিতি উত্তরণে কাজ করছে। কিন্তু এরপরও বলা যাচ্ছে না, বাংলাদেশি ওমরাযাত্রীদের ভিসা কবে নাগাদ শুরু হবে।

ওমরা বঞ্চিত মাওলানা ফজলুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত কিছু অসাধু হজ এজেন্সির লোভের খেসারত দিতে হচ্ছে ধর্মপ্রাণ মানুষকে। গত রমজান মাসে বহু চেষ্টা করেও ওমরা করতে পারিনি। টাকা জমা দিয়ে বসে আছি। এতদিন শুনেছি মানুষ আর যাই হোক, ধর্মীয় বিষয়ে স্বার্থ কম দেখে, এখন দেখি অবস্থা পুরোপুরি ভিন্ন। এখানে দুর্নীতি আরও বেশি। মানুষের নৈতিকতা বলে আর কিছু রইল না। ’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হজ এজেন্সির মালিক বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, ‘আপাতত বাংলাদেশি ওমরাযাত্রীদের জন্য ওমরা ভিসা চালুর সম্ভাবনা নেই। যদিও বিভিন্ন হজ এজেন্সি ইতোমধ্যেই প্রচারণা শুরু করেছেন ওমরার। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশি ওমরাযাত্রীদের ভিসা ইস্যুর কার্যক্রম কবে নাগাদ শুরু হবে তা নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছেন না। এখনও ভিসা আবেদনের অনলাইন সিস্টেম বন্ধ। ’

আল আবরার এভিয়েশনের মালিক মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী বাংলানিউজকে বলেন, ‘কতিপয় অসাধু এজেন্সির অপরাধের জন্য প্রকৃত ওমরাযাত্রীরা সৌদি যেতে পারছেন না। গত এক বছর ধরে ওমরা ভিসা বন্ধ। অনেকেই ওমরায় যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টির জন্য মহান রাব্বুল আলামীনের কাছে কান্নাকাটিও করছেন। এভাবে চলতে থাকলে নিরপরাধ এজেন্সিগুলো ব্যবসায়িকভাবেও ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। আমরা চাই, অভিযুক্ত অসাধু হক এজেন্সির মালিকদের বিচারের আওতায় এনে দেশের ভাবমূর্তি রক্ষা করা হোক। ’

মদীনা এয়ার ট্রাভেলসের মালিক ফজলুর রহমান জানান, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এবার ওমরা পালনে আগ্রহীর সংখ্যা বেশি।

বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ ওমরা পালন করতে যান। এর মধ্যে রমজান মাসেই যায় ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ।

সংসদে ধর্ম মন্ত্রীর বক্তব্য এবং গত সপ্তাহে অভিযুক্ত এজেন্সিগুলো বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা চলমান ঘটনার ভয়াবহতারই প্রকাশ।

আমরা আশা করি, অভিযুক্ত এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার প্রেক্ষিতে ওমরা ভিসা নিয়ে ভ্রাতৃ-প্রতীম সৌদি আরব তাদের অবস্থান নরম করে বাংলাদেশিদের ভিসা প্রদানে উদ্যোগী হবে।

সেই সঙ্গে সরকারের আরও সতর্ক হতে হবে, ভষিষ্যতে যেন ওমরার নামে আর কোনো এজেন্সি চাকরির সন্ধানকারীদের পাঠাতে না পারে সে ব্যাপারে সজাগ থাকবে।


বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৫
এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।