ঢাকা, সোমবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

ইসলাম

আমেরিকার প্রথম মসজিদ গড়ে ওঠে ৮৭ বছর আগে

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৬
আমেরিকার প্রথম মসজিদ গড়ে ওঠে ৮৭ বছর আগে

বিশ্বের মুসলমানদের কাছে মক্কা-মদিনা ও বায়তুল মোকাদ্দাসের আলাদা এক গুরুত্ব রয়েছে। রয়েছে এই তিনটি স্থান সম্পর্কে ধর্মীয় নির্দেশনাও।

তবে ধর্মীয়ভাবে গুরুত্ব না রাখলেও প্রত্যেক দেশেই এমন কিছু স্থান রয়েছে, সেগুলো নিয়ে ওই এলাকার মুসলমানরা গর্ব করে। তাদের আবেগকে অালোড়িত করে।

ঠিক তেমনই একটি জায়গা রয়েছে আমেরিকান অভিবাসী মুসলমানদের জন্যে। যেটা নিয়ে তারা গর্বিত। জায়গাটি আমেরিকার নর্থ ড্যাকোটা অবস্থিত। এই বিশেষ স্থানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক মর্যাদা। মুসলমান অভিবাসীরা আমেরিকায় আসা শুরু করলে তারা এমন একটি জায়গা খুঁজছিল, যাকে তারা তাদের এলাকা বলতে পারে, নিজেদের মতো করে থাকতে পারে, ইবাদত-বন্দেগির জন্য মসজিদ বানাতে পারে। তারা সে জায়গাটি খুঁজে পায় এই নর্থ ড্যাকোটায়।

প্রথম আগতদের চোখে পশ্চিম নর্থ ড্যাকোটার একটি স্মৃতিচিহ্ন। এটি ছয় মাইল দূরত্বের স্ট্যানলির মানুষের কাছেও ছিল অপরিচিত। অপরিচিত ছিল তাদের কাছেও যারা সেখানে তাদের পুর্বপুরুষদের উপসনা করতো এবং তাদের কেউ মারা গেলে সেখানে কবর দিত। এখানেই নির্মিত হয়েছে আমেরিকার প্রথম মসজিদ। মসজিদ নির্মাণের কাল ১৯২৯ সাল।

ফাদার উইলিয়াম শেরম্যান। একজন ঐতিহাসিক গবেষক। তিনি আমেরিকায় প্রথম মুসলিম বসবাসকারীদের নিয়ে একটি বই লিখেছেন। ওই বইয়ে তিনি বর্ণনা করেন, ‘বসতি গড়ে ওঠার সময়ে মানুষ এখানে আসতে শুরু করে উন্মুক্ত ভূমির কারণে। ’

বর্তমানে লেবানন যেমন, তেমন ভূমির আশাতেই ঔপনিবেশিকরা এখানে ছুটে আসে। লেবানন অঞ্চলটি ছিল সিরিয়ায় কিন্তু ওসমানি খিলাফতের অন্তর্ভুক্ত। প্রায় তিনশত মুসলিম পরিবার নর্থ ড্যাকোটায় আসেন। সেসব অধিবাসীদের মাঝে ছিলেন আলী ওমর, যিনি ওসমানি খিলাফতের সৈন্য ছিলেন। কিন্তু ওসমানি খিলাফতের হয়ে যুদ্ধ করতে রাজি ছিলেন না। তাই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন। তিনি ১৯০৯ সালে নর্থ ডাকোটায় আসেন। কিন্তু তার আসার আরও ২০ বছর পর আমেরিকায় প্রথম কোনো মসজিদ স্থাপিত হয়। আর সেটি নির্মিত হয় এখানেই।

কারণ শুরুর দিকে তারা পরিপূর্ণ গোষ্ঠী হয়ে ওঠতে পারেনি যার ফলে একটি মসজিদ স্থাপন করা যায়। মসজিদটি প্রথম স্থাপন করা হয় ১৯২৯ সালে যেখানে মুসলিম ঔপনিবেশিকরা তাদের ধর্মের চর্চা করতো।

স্থায়ী কোনো ইমাম ছাড়াই পরিচালিত হতে থাকা মসজিদটি ১৯৩০ সালের দিকে ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়ে। এর অন্যতম কারণ ছিল খরা ও অর্থনৈতিক মন্দা। যার প্রভাব মুসলিম জনসংখ্যার ওপর পড়ে। সেজন্য অনেকেই পশ্চিম উপকূলের দিকে পা বাড়ায় কাজের আশায়। তারপর অনেকেই ধরে নিয়েছিল, আদি এই মসজিদটা বন্ধ হয়ে গেছে এবং প্রার্থনাকারীরা নর্থ ড্যাকোটার এই ঐতিহাসিক স্থাপনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু ৮০ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর, মুসলিমদের আনাগোনায় এ জায়গাটি আবার প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পায়।

মুসলিম ঔপনিবেশিকদের উত্তরসূরিরা আবার এ ভূমির বুকে পদচিহ্ন ফেলেন। তারা জড়ো হন উইলস্টন, বিসমার্ক, রেড ভ্যালিতে। তারপর থেকে এই অধিবাসীরা অন্য আদি নর্থ ডাকোটাবাসীদের সঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করে ভিন্ন নজির সৃষ্টি করেন।

আমেরিকা জুড়ে বসবাসকারী মুসলমানরা প্রায়ই এখানে আসেন আমেরিকায় স্থাপিত স্থাপিত প্রথম এই মসজিদটি একনজর দেখতে। মসজিদটি এখন রক্ষণাবেক্ষণ করেন এই এলাকায় আদি বসতি স্থাপনকারী মুসলিমদের সন্তান ও তাদের নাতি-নাতনিরা।

মসজিদটিকে একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে নর্থ ড্যাকোটা সরকার যেন স্বীকৃতি দেয় তারা সে ব্যাপারে আলোচনা করছেন। এবার অপেক্ষার পালা।



বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৬
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।