ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

খাদ্যে ভেজাল মেশানো ইসলামের দৃষ্টিতে জঘন্য অপরাধ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১০ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৯
খাদ্যে ভেজাল মেশানো ইসলামের দৃষ্টিতে জঘন্য অপরাধ ছবি : প্রতীকী

ভেজাল পণ্য ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যে সয়লাব হয়ে গেছে দেশ। অথচ খাদ্যে ভেজাল মেশানো সমাজবহির্ভূত, অনৈতিক ও অত্যন্ত গর্হিত কাজ। ইসলামে এমন অমানবিক কাজ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও চরমভাবে নিন্দিত। কারণ এতে প্রতারণা-ধোঁকাবাজি, অবৈধ পন্থায় অন্যের অর্থ উপার্জন, ভেজালমিশ্রিত খাদ্য বিক্রয়ের সময় মিথ্যা কথা ও মিথ্যা কসম করা, মানুষকে কষ্ট দেওয়া এবং শারিরীকভাবে অন্যকে ক্ষতিগ্রস্থ করা ইত্যাদি জড়িত থাকে।

পণ্যে ভেজাল মেশানো প্রতারণা
খাদ্যে ভেজাল দেওয়া মানে ক্রেতার প্রতারণা করা। ইসলামে ধোঁকাবাজি, চালচতুরি ও প্রতারণা ইত্যাদি নিষিদ্ধ।

এ প্রসঙ্গে আবু হুরায়রাহ (রা.) বর্ণনা করেন, একবার রাসুল (সা.) বাজারে এক খাদ্যস্তুপের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি খাদ্যস্তুপের ভিতরে হাত প্রবেশ করিয়ে দেখলেন ভেতরের খাদ্যগুলো আর্দ্র-ভেজা। তিনি খাদ্য বিক্রেতার নিকট জানতে চাইলেন, এটি কেমন কথা? সে বলল, বৃষ্টিতে ভিজে গেছে হে আল্লাহর রাসুল! রাসুল (সা.) বললেন, তাহলে তুমি খাদ্যগুলো উপরে রাখোনি কেন, যাতে মানুষ দেখতে পেত। অতপর নবী (সা.) বললেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতারণা করবে, সে আমার উম্মত নয়। ’ (মুসলিম, হাদিস নং: ১০২)

খাদ্যে ভেজাল দিয়ে যে অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করা হয়, তা অবৈধ পন্থায় অর্জিত। অবৈধ পন্থায় অন্যের সম্পদ ভোগ নিষিদ্ধ। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করো না। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৮)

যারা খাদ্যে ভেজাল মেশায় তাদের ইবাদত কবুল হয় না
খাদ্যে ভেজাল দাতাদের ইবাদত কবুল হয় না। কারণ রুজি-রুটি হালাল হওয়া ইবাদত কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত। অথচ ভেজাল দাতাদের উপার্জিত অর্থ অবৈধ বা হারাম। হারাম খাদ্যের মাধ্যমে যে রক্ত-মাংস তৈরি হবে, সে রক্ত-মাংসের শরীরের মাধ্যমে কৃত কোনো ইবাদত কবুল হয় না। এ প্রসঙ্গে আবু হুরায়রাহ (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে নবী (সা.) বলেন, ‘এক ব্যক্তি দীর্ঘ সফরে থাকা অবস্থায় এলোমেলো চুল ও ধূলো-মলিন দেহ নিয়ে আকাশের দিকে দুই হাত তুলে দোয়া করে বলে, হে আমার রব! বলে দোয়া করে, অথচ সে যা খায় তা হারাম। যা পান করে, তা হারাম। যা পরিধান করে, তা হারাম এবং হারামের দ্বারাই সে পুষ্টি অর্জন করে। তবে তার মুনাজাত কীভাবে কবুল হতে পারে!’ (মুসলিম, হাদিস নং: ১০১৫)

যে খাদ্য-পণ্যে ভেজাল দেয় সে মহাপাপী
যেসব ব্যবসায়ী খাদ্যে ভেজাল তৈরি করে, তারা মহাপাপী। তাদের সম্পর্কে নবী (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয় কেয়ামতের দিন ব্যবসায়ীদের মহাপাপীরূপে ওঠানো হবে, তবে যারা সততার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করেছে তারা ছাড়া। ’ (তিরমিজি, হাদিস নং: ১২১০)

খাদ্যে ভেজাল দেওয়ার একটি সহজ অর্থ হলো- সত্যের সঙ্গে মিথ্যার সংমিশ্রণ। ভালোর সঙ্গে মন্দের মিশেল। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা সত্যের সঙ্গে অসত্যের মিশ্রণ ঘটাবে না। জেনেশুনে সত্য গোপন করো না। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ৪২)

মিথ্যা কসমকারী বিক্রেতাদের সঙ্গে আল্লাহ কথা বলবেন না
আমাদের বাজার-ঘাটে সাধরণত দেখা যায়, যারা খাদ্যে ভেজাল মেশান, তারা অনেক সময় মিথ্যা কসম করেন। পণ্য বিক্রি করতে শপথ করে বলেন, ‘আল্লাহর কসম! এটি একদম খাঁটি’ ইত্যাদি। এভাবে মিথ্যা কসম করে পণ্য বিক্রয়কারী সম্পর্কে হাদিসে ভয়ঙ্কর শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘কেয়ামতের দিন আল্লাহ তিন ব্যক্তির সঙ্গে কোনো ধরনের কথা বলবেন না। তাদের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করবেন না ও তাদের পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি। তাদের একজন হলো, যে তার ব্যবসায়িক পণ্য মিথ্যা কসম খেয়ে বিক্রয় করে। ’ (মুসলিম, হাদিস নং: ১০৬)

সত্যিকারের মুমিন অন্যকে কষ্ট দেয় না
যারা খাদ্যে ভেজাল মেশান, তারা মানুষের ও দেশের ক্ষতিকারক-দুশমন। কারণ খাদ্যে ভেজাল মেশালে শুধুমাত্র মানুষের মানসিক ও আর্থিক ক্ষতিই হয় না; বরং ক্ষেত্রবিশেষে মানুষ ফরমালিন, কার্বাইড ইত্যাদি বিষাক্ত কেমিক্যালযুক্ত খাবার খেয়ে বিভিন্ন জটিল অসুখে আক্রান্ত হতে পারেনা। আবার অনেক সময় অভাবী ও অসহায় মানুষ চিকিৎসা না করতে পেরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তেও পারেন।  

আবু হুরায়রাহ (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘মুসলমান তাকে বলা হবে ওই ব্যক্তিকে, যার মুখ ও হাত থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে এবং মুমিন হলো ওই ব্যক্তি, যার পক্ষ থেকে অন্য মানুষের প্রাণ ও সম্পদের কোনো শঙ্কা না থাকে। (বুখারি, হাদিস নং: ১০; মুসলিম, হাদিস নং: ৪০)

শুধুমাত্র আইন প্রণয়ন করে বা শাস্তির বিধান করে খাদ্য-ভেজাল রোধ সম্ভব নয়। এজন্য দরকার মানুষের নৈতিকতাবোধ এবং পরকালীন জবাবদিহিতার বোধ জাগ্রত করা। একজন সত্যিকারের মুমিন খাদ্যে ভেজাল মেশাতে পারে না। অস্বাস্থ্যকর খাদ্য খাইয়ে মানুষকে অসুস্থ করতে পারে না। অন্যকে কষ্ট দিতে পারে না।

ইসলাম বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।