ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কান উত্সব ২০১৬

লাক্স-কান কথা

এটা অনেকটা স্বপ্নের মতো: তৌকীর আহমেদ

জনি হক, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১০ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৬
এটা অনেকটা স্বপ্নের মতো: তৌকীর আহমেদ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কান (ফ্রান্স) থেকে: কান চলচ্চিত্র উৎসবের ৬৯তম আসরে বাণিজ্যিক শাখা মার্শে দ্যু ফিল্মে মঙ্গলবার (১৭ মে) সন্ধ্যা ৬টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা) দেখানো হবে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড প্রযোজিত ছবি ‘অজ্ঞাতনামা’।

উৎসবের মূলকেন্দ্র প্যালে ডি ফেস্টিভ্যাল ভবনের চতুর্থ তলায় প্যালে আইতে এর প্রদর্শনী হবে।

এটি পরিচালক হিসেবে তৌকীর আহমেদের চতুর্থ ছবি। এ উপলক্ষে তিনি গত ১৩ মে থেকে আছেন কান সৈকতে। তার সঙ্গে কথা হলো বেশ কিছুক্ষণ।  

বাংলানিউজ: কান উৎসবের মতো মর্যাদাসম্পন্ন আয়োজনে আপনার ছবি দেখানো হবে, নিশ্চয়ই খুব আনন্দ হচ্ছে?

তৌকীর: নিঃসন্দেহে ভালো লাগছে। এটা শুধু আনন্দেরই নয়, অনেকটা স্বপ্নের মতো। আমরা সবসময়ই চাই, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে যেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরতে পারি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সময়-সুযোগের চেয়েও বড় কথা ব্যাপারটা কঠিন। কারণ আমরা যে বাজেটে ছবি বানাই বা যে স্বল্প পরিসরে আমাদের কাজ করতে হয়, তা নিয়ে আসলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পাল্লা দেওয়া সহজ নয়।

কান চলচ্চিত্র উৎসবের মার্শে দ্যু ফিল্ম শাখায় আবেদন করার সময়ও নিশ্চিত ছিলাম না, প্যালে ডি ফেস্টিভ্যাল ভবনে আমাদের ছবিটি দেখানোর সুযোগ পাবো কি-না। সুযোগ পাওয়ার পর মনে হলো এটা একটা ভালো প্ল্যাটফর্ম আমাদের জন্য।

কান চলচ্চিত্র উৎসব এমন একটা জায়গা যেখানে বিশ্বের ফিল্ম প্রফেশনালরা আসেন। সুতরাং তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করা বা ছবিটা সম্পর্কে একটু ধারণা দেওয়া, সর্বোপরি বাংলাদেশকে একটু পরিচিত করার বিষয়গুলো আমরা যতো বেশি আসবো ততোই হবে।

আমি আশা করি, আগামীতে আরও অনেক ছবি আসবে, তরুণ নির্মাতারাও আসবেন এখানে। এভাবে আসতে আসতে হয়তো একদিন আমাদের ছবি প্রতিযোগিতা বিভাগ পর্যন্তও পৌঁছে যাবে। সেজন্য আমাদের অবশ্যই কাজ করতে হবে।

বাংলানিউজ: মার্শে দ্যু ফিল্মে তো টাকা দিলেই ছবি দেখানো যায়, সে ক্ষেত্রে আপনাদের অর্জনটা তো অতো বড় নয়। তাই না?

তৌকীর: ব্যাপারটা অতো সহজ নয়। কারণ এর একটা প্রক্রিয়া আছে। কান শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মার্শে দ্যু ফিল্মের সংশ্লিষ্ট মিলনায়তন কিংবা প্রেক্ষাগৃহেই শুধু টাকা দিলে ছবি দেখানো যায়। কিন্তু উৎসবের মূলকেন্দ্র প্যালে ডি ফেস্টিভ্যাল ভবনের অভ্যন্তরে যেসব প্রেক্ষাগৃহ আছে, সেগুলোতে প্রদর্শনী করতে হলে শুধু টাকা হলেই চলে না। এজন্য ছবিটাও ভালো হতে হয়। আয়োজকদের পছন্দ হলেই কেবল এই ভবনে ছবি দেখানোর সুযোগ পাওয়া যায়।

অবশ্যই মার্শে দ্যু ফিল্ম কান উৎসবের কোনো প্রতিযোগিতা ভিত্তিক বিভাগ নয়। এসব বিভাগে ছবি থাকা অনেক গৌরবের। কিন্তু কানের প্রতিযোগিতায় তো আমাদের উপমহাদেশেরই কোনো ছবি নেই। শুধু ডিরেক্টরস ফোর্টনাইটে অনুরাগ কাশ্যাপের একটা ছবি আছে। মার্শে দ্যু ফিল্মে এবার ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চনের 'সর্বজিৎ' ছবিটিও দেখানো হয়েছে প্যালে আইতে।  

সুতরাং আমাদের জন্য প্যালে ডি ফেস্টিভ্যাল ভবনের ভেতরে প্যালে আইতে ছবি দেখানো অনেক মর্যাদার ব্যাপার। যদি প্রতিযোগিতায় ছবি পাঠাই, সেখানেও আমাকে ন্যূনতম একটা ফি দিতেই হবে। এই ভবনেও ছবি দেখাতে হলে ফি দিতে হয়। আপনাদের মতো যারা সাংবাদিক আছেন, তারা বাদে সবাইকেই ব্যাজ নিতে হলে ফি গুনতে হয়। ভবনে দেখানো আর হল ভাড়া নিয়ে ছবির প্রদর্শনী করা কিন্তু একই কথা নয়।

ব্যাপারটা সহজ নয় বলেই, কানের ৬৯টি আসরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে এর আগে কেবল তারেক মাসুদের 'মাটির ময়না' এসেছিলো। এরপর 'অজ্ঞাতনামা' এলো। হোক না বাণিজ্যিক শাখা। যেসব প্ল্যাটফর্মে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের প্রফেশনালরা আসেন, সেখানে যদি আমরা ছবি নিয়ে আসতে পারি, সেটা অনেকের নজর কাড়তে পারে। কিংবা এখান থেকে হয়তো পাঁচটি লিংক বা উৎসব কানেকশন অথবা পরিবেশনার সুযোগ হতে পারে।

‘সেজন্য আমার অনুজ নির্মাতাদের বলবো, আগামীতে এসব জায়গায় যেন আমরা আসতে পারি সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে। সেই মাপের ছবি যদি আমরা বানাতে পারি, তাহলে হয়তো একদিন আমরা আসলেই প্রতিযোগিতায় আসতে পারবো। কিন্তু ধাপে ধাপেই আমাদের যেতে হবে। আমাদের এ ধরনের পথ খুঁজে বের করতে হবে।

বাংলানিউজ :  এখানে এসে অন্যান্য দেশের ফিল্ম প্রফেশনালদের সঙ্গে কথা বলে বাংলাদেশের ছবির প্রেক্ষাপটে আপনার কী উপলব্ধি হচ্ছে?

তৌকীর: বাংলাদেশকে চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে আমাদের পরিচিত করতে হবে। আমি বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলেছি, আমাদের প্রদর্শনীতে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছি। সেটাও যে খুব সহজ তা কিন্তু না। কারণ অনেক প্রদর্শনী হচ্ছে চারদিকে। সুতরাং উৎসব পরিচালক, পরিবেশক বা ফিল্ম প্রফেশনাল বলেন, তাদের আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আমরা চেষ্টা করেছি যদি বিভিন্ন দেশের মানুষজন নিয়ে আমাদের ছবিটা দেখতে পারি। ব্যাপারটা কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে চ্যালেঞ্জিং। কারণ বাংলাদেশকে এখনও আমরা ওই অর্থে চলচ্চিত্রের দিক দিয়ে পরিচিত করতে পারিনি। এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু চেষ্টা করে যেতে হবে। লেগে থাকার কোনো বিকল্প নেই। মূল কথা হচ্ছে, আমাদের ভালো ছবি করতে হবে। ভালো ছবি এবং প্রচারণা- দুটো মিলিয়ে হয়তো একদিন বাংলাদেশের ছবি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি পাবে।

বাংলানিউজ : কান উৎসব দেখার অভিজ্ঞতা কেমন মনে হচ্ছে?
তৌকীর :
এ উৎসবের জৌলুস ও জাঁকজমক ব্যাপারটা অত্যন্ত আকর্ষণীয়। আমি এর আগে বার্লিন ও বুসান উৎসবে গিয়েছিলাম, কিন্তু সেগুলোর চেয়ে কানের জৌলুস আরও বেশি। এখানে হলিউড তারকারা যেমন আসছেন, তেমনি ফরাসিসহ সারাবিশ্বের তারকারাও আসছেন। স্পিলবার্গ, জর্জ ক্লুনির মতো বিখ্যাত তারকারা এসেছেন।

কান উৎসবের আরেকটি লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, বিভিন্ন দেশের প্যাভিলিয়ন আছে এখানে। এগুলোতে তারা নিজেদের ছবির মার্কেটিং বা প্রচারণা করেন। আমাদেরও জাতীয় পর্যায়ে এটা চিন্তা করা উচি‍ৎ। এখানে বাংলাদেশের পতাকাসহ প্যাভিলিয়ন থাকলে আরও ভালো লাগতো। এখানে অনেকে আসতেন, তাদের আমরা বাংলাদেশের ছবি সম্পর্কে বলতে পারতাম। অথবা কো-প্রোডাকশনের ফান্ড ও বিদেশে আমাদের ছবির পরিবেশনার জন্য আলোচনা করা যেতো। নেপাল ও শ্রীলঙ্কার মতো অপেক্ষাকৃত অনেক ছোট দেশেরও প্যাভিলিয়ন দেখলাম।

বর্তমান বিশ্বে যে কোনো জিনিসেরই প্রচারণা দরকার। আমি ঘরে বসে থাকবো আর লোকে আমাকে ডেকে নিয়ে যাবে তা কিন্তু সবসময় হবে না। বরং যেখানে গেলে আমার বা আমাদের ছবির ড্রিস্ট্রিবিউশন কিংবা প্রমোশন হতে পারে, সেখানে আমাদের যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে কানকে আমার মনে হয়েছে এটা কেন্দ্রস্থল। এই শহরে উৎসবটিকে লক্ষ্য রেখে লাখ লাখ লোক আসছে। সবাই যে ছবি নিয়ে আসছে বা চলচ্চিত্র পরিচালক, তা কিন্তু না। এখানে যারা ঘুরছেন সবার ছবি যে প্রতিযোগিতায় আছে ব্যাপারটা এমন নয়। বাদবাকি সবাই হয় মার্কেটে, নয়তো মার্শে দ্যু ফিল্মে কিংবা ইন্টারন্যাশনাল ভিলেজে নানানভাবে প্রচার করার চেষ্টায় আছেন।

এই ক'দিনে আমার সঙ্গে যদি দশটা লোকের পরিচয় হয়ে থাকে, ভবিষ্যতের জন্য কিন্তু এটা একটা ভালো লিংক। মিসরের কায়রোর উৎসব পরিচালক যখন আমার সঙ্গে কথা বলছেন, পরবর্তীতে কিন্তু তার ওখানে আমার অংশ নেওয়ার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। কম্বোডিয়ার উৎসব পরিচালকের সঙ্গে কথা হওয়ায় আমার আগামী ছবিকে ঢোকানোর একটা জায়গা তৈরি হলো। ইরান আর ভারতের কয়েকজনের সঙ্গেও কথা হয়েছে।

বিভিন্ন মতবিনিময়ের মাধ্যমে আসলে একজন চলচ্চিত্র নির্মাতার পার্সোনালিটি ডেভেলপ করারও ব্যাপার আছে। আমরা জানি ধর্মেও বলা আছে, জ্ঞানের জন্য ভ্রমণ করতে হবে। তো চলচ্চিত্রের তীর্থস্থান হচ্ছে কান। এখানে আসতে হবে এবং বারবারই আসতে হবে আসলে। কোথায় কোথায় আমাদের যেতে হবে, গিয়ে আমরা কী করবো, এসব ব্যাপারে আমাদের চোখগুলো আস্তে আস্তে খুলবে আশা করি।

 

বাংলানিউজ : এবার 'অজ্ঞাতনামা' নিয়ে কিছু বলুন?

তৌকীর: ‘অজ্ঞাতনামা’ মানুষের পরিচয়ের কথা বলে। আমরা বিশ্বের অনেক দেশেই শ্রমিক পাঠাই, জনশক্তি রফতানি করি। কিন্তু এই যে মানুষগুলো যাচ্ছে, এদের অভিবাসন খরচ এই অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি। কিন্তু এদের বেতন সবচেয়ে কম! কারণ এরা বেশিরভাগই অদক্ষ বা তাদের দক্ষতা কম। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, এরা জমিজমা, বাড়িঘর বেচে দিয়ে অনেক টাকা খরচ করে বিদেশে যাচ্ছে, গিয়ে অল্প টাকা বেতন পাচ্ছে এবং ওখানে যাওয়ার পরও তার কোনো অধিকার নাই। তার কোনো স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান নাই। নেই কোনো মানবাধিকার। সেই সঙ্গে অনেক ধরনের নির্যাতনের শিকার হয় তারা। এক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, গত ছয় বছরে ১৪ হাজার শ্রমিক মারা গেছে শুধু মধ্যপ্রাচ্যে। এর কারণ ওদের কোনো বিনোদন নাই, সেখানে চর্বিযুক্ত বিরিয়ানিই হয়তো তার বিনোদন। এ কারণে অচিরেই তাদের রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের মতো রোগ হচ্ছে। তাই মৃত্যুসংখ্যাটাও বেশি।

ছবিটিতে আমি বলতে চেয়েছি, আমাদের যে জনসংখ্যাকে রফতানি করছি, তারা তো ক্রীতদাস নয়, তারা মানুষ। আমরা যদি তাদের প্রতি আরেকটু খেয়াল রাখি, যদি আমরা তাদের প্রশিক্ষিত করে পাঠাতে পারি, তাহলে হয়তো তাদের এই দুর্দশাটা কমবে। পাশাপাশি বিদেশের সঙ্গে যদি আমরা রাষ্ট্রপক্ষের মাধ্যমে আলোচনা করতে পারি, আমার লোকের মানবাধিকার নিশ্চিত হবে। তাকে গুলি করে মেরে ফেলা বা বন্দি করে রাখা যাবে না।   জনশক্তি যদি আমাদের সম্পদ হয়ে থাকে, আমরা যদি তাদের সুবাদে বৈদেশিক মুদ্রা গুনি, তাহলে এই জনশক্তির প্রতি আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। এটাই আমার ছবির মূল ভাবনা।

বাংলানিউজ : এই ভাবনা আপনার মাথায় এলো কীভাবে?
তৌকীর:
আমি শুনেছিলাম, ময়মনসিংহের দিকে এক গ্রামে একটি মরদেহ এসেছিলো মধ্যপ্রাচ্য থেকে। কফিন খোলার পর দেখা যায়, যার মরদেহ বলা হয়েছে এটা তার নয়। ভেতরে অন্য কারও মরদেহ। এটা বলেছিলো আমাদের বাসায় কাজ করতে আসা এক নারী। তার কাছে জানতে চাইলাম, তারপর কী হলো? তিনি বললেন, 'তারপর তো আর জানি না। '

এরপর পাঁচ-ছয় বছর মাথার ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছিলো, তারপরে কী হয়েছিলো? আমি নিজে নিজেই একটা সমাধান তৈরির চেষ্টা করি। কেনো কীভাবে মানুষ যায় ওখানে এবং কি ঘটলে এরকম হয়। সেটা নিয়েই আসলে 'অজ্ঞাতনামা'র গল্প। এটা একটা ব্ল্যাক কমেডি। যেখানে মৃত্যু নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে, মানুষের কষ্টের কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু পুরোটাই হাস্যরসাত্মক পন্থায়। এর উপরিতলে হাসি, গভীরে আসলে কান্না। ২০১৩ সালের শেষদিকে 'অজ্ঞাতনামা' নামে একটি বই লিখি। পরের বছরের বইমেলায় এটি প্রকাশিত হয়। 'অজ্ঞাতনামা' শুরুতে মঞ্চনাটক হিসেবে লিখেছি, পরে ঠিক করি, এটা নিয়ে সিনেমা বানাবো।  

বাংলানিউজ: এখন তো সারাবিশ্বেই অভিবাসন সংকট চলছে। আপনার ছবির বিষয়বস্তু তো তেমনই মনে হচ্ছে।

তৌকীর: তা বলতে পারেন। এখন তো কেউ লিবিয়া থেকে গ্রিস যাচ্ছে, কেউবা লেবানন থেকে তুরস্ক যাচ্ছে, আবার কেউ কেউ বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া বা মধ্যপ্রাচ্যে যাচ্ছেন। সুতরাং এটা সমসাময়িক বিষয়। আমি সবসময়ই আসলে বিষয়ভিত্তিক ছবি করতে চাই। যেখানে কোনো ভাবনা আছে, যেটা আমাকে ভাবায়, মানুষকে ভাবাবে বা কিছু বলার চেষ্টা আছে সে ধরনের ছবি করতে চাই। চলচ্চিত্র হচ্ছে লার্জার দ্যান লাইফ অর্থাৎ জীবনের চেয়ে বড়। তাই আমি জীবনের গল্প বলতে চাই। জীবনের উদযাপনটাই আসলে মানুষ স্পর্শ করে বলে আমার মনে হয়।

বাংলানিউজ : আপনার সঙ্গে বিপাশা হায়াতও এসেছেন। কানে আপনাদের কেমন সময় কাটছে?

তৌকীর : অবসরে আমি আর বিপাশা ঘুরে ঘুরে দক্ষিণ ফ্রান্সের শহরটিকে দেখছি। সেদিন পোলার্ডের মিউজিয়াম দেখলাম। আমাদের হোটেল লো কার্নেট বলে একটি জায়গায়। সেখানকার কিছু আর্ট শপ ও ছোট ছোট গ্যালারিতে গিয়েছিলাম। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক দিয়েও কান বিশ্বের মধ্যে আকর্ষণীয় স্থান। কানকে মাথায় রেখেই ফ্রেঞ্চ রিভিয়েরা বলা হয় এখানটাকে। জায়গাটি দৃষ্টিনন্দন। এরকম একটি আসরে আমরা ছবি নিয়ে এসেছি বলে বিপাশাও সময়টা খুব উপভোগ করছেন।

আমরা এমনিতেও ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করি। বিভিন্ন সময়ে আমি আর বিপাশা কখনও বাচ্চাদের নিয়ে, কখনও বাচ্চাদের ছাড়া ঘুরে বেড়াতে চলে যাই। গত বছরটা যেমন আমরা মিসর ঘুরে দেখেছি ১২-১৩ দিন। এদিকে ইতালি, গ্রিস বা লন্ডন আগে অনেক ঘোরা হয়েছে। ফ্রান্সটা আমাদের ঘোরা বাকি ছিলো। উৎসবের সূত্র ধরে আমাদের প্যারিস ও কান বেড়ানো হয়ে গেলো। এখান থেকে আমরা নেপলসে যাবো।

বাংলানিউজ : নেপলসেও তো 'অজ্ঞাতনামা' যাচ্ছে শুনেছি?

তৌকীর: ঠিকই শুনেছেন। গলফ অব নেপলস ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রতিযোগিতা বিভাগে স্থান পেয়েছে 'অজ্ঞাতনামা'। আমাদের টা ছাড়া আরও সাতটি ছবি নির্বাচিত হয়েছে। উৎসবটি সাধারণত মৌলিক ও মুক্ত ছবিগুলোকে প্রাধান্য দেয়। ১৯ মে আমরা ওখানে চলে যাবো। আমার ছবির প্রদর্শনী হবে ২১ মে।

নেপলসে আমি আর বিপাশা আগে একবার গিয়েছিলাম। এবারের যাওয়ার উদ্দেশ্যটা ভিন্ন। এবার আমরা ছবি নিয়ে প্রতিযোগিতা করতে যাচ্ছি। হারজিত বড় কথা নয়। শিল্পের বিচার তো আসলে জয়-পরাজয় দিয়ে হয় না বা পুরস্কারেও হয় না। শিল্পের ফলাফলটা মানুষ পছন্দ করলেই তা সফল হয়। 'অজ্ঞাতনামা' নিয়ে আরও অনেক উৎসবে যাওয়ার ইচ্ছা আছে আমার।

বাংলানিউজ : বাংলাদেশের দর্শকরা 'অজ্ঞাতনামা' কবে দেখতে পারবে?

তৌকীর: সামনে রোজা চলে আসছে। তারপর ঈদ। এরপর আড়াই মাস পর কোরবানির ঈদ। এ দু’টি উৎসবে সাধারণত বাণিজ্যিক ছবিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। আমার মনে হয় দুই ঈদের পরে কোনো একটা সুবিধাজনক সময়ে 'অজ্ঞাতনামা' মুক্তি দেবো। আমাদের লক্ষ্য থাকবে, বাংলাদেশের মানুষ যেন ছবিটা দেখে। এটা আর্ট ফিল্ম বা উৎসবের জন্য নির্মিত, বিষয়টা এরকম কিছু না। সিনেমা হিসেবেই যেন তারা এটা দেখে এবং আমি আশ্বস্ত করতে চাই, এখানে তাদের গল্প আছে। তাদের ভালোলাগার গল্প আছে।

বাংলানিউজ : পরিচালক তৌকীরের প্রিয় পরিচালক কারা?
তৌকীর : আমি আসলে যে কোনো ভালো ছবিই দেখেই অনুপ্রাণিত হই। সেটা নতুন নির্মাতা হোক বা পুরনো নির্মাতা হোক। ইনারিতু, কুরোসাওয়া, বার্গম্যান, ঋত্বিক ঘটক, সত্যজিৎ রায়, ফাতি আকিন, ওঙ কার ওয়াই আমার পছন্দের। ইরানি ছবিগুলো আমার ভালো লাগে।

আসলে ভালো আমাদের চতুর্দিকে ছড়িয়ে আছে। সেটাকে খুঁজে পেলে মনে হয় একটা ভালো কিছু দেখলাম। চলচ্চিত্রের অভিজ্ঞতাটাই তা-ই। যখন একটি ছবি দেখে মানুষ বলে যে, আহ! বাহ! তাই তো! এরকম তো ভাবিনি। বা আমার ভাবনার সঙ্গে তো মিলে গেলো। এর মানে হচ্ছে, চলচ্চিত্র মানুষকে উপলব্ধি দেয়।

আবারও ঘুরে বলি, চলচ্চিত্র জীবনের উদযাপন দেয়। জীবন যেখানে জয়ী হয়, জয়ী মানে শুধু বিজয় না, পরাজয়ের মধ্যেও জীবনের জয়ের গল্প বেরিয়ে আসে। সেই জায়গাটা মানুষ দেখতে চায়। আমিও দেখতে চাই। জীবনকেই দেখতে চাই, জীবনের গল্প বলতে চাই।

বাংলানিউজ : আপনার স্বপ্ন কী?
তৌকীর : আমি মনে করছি, আমারও একটা ম্যাচিউরিটির জায়গা আসছে ধীরে ধীরে। বয়স বাড়ছে! হাতে সময়ও কমছে! আমি চাই ভালো কাজ করতে এবং সেই কাজগুলোকে নিয়ে বিশ্বের দরবারে যেতে। একটা সময় শুধু আমি না, আরও দশজন ফিল্ম মেকার বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে ইরানের ছবির মতো গুরুত্বপূর্ণ করে ফেলবে, এই স্বপ্ন আমি দেখি।

 

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৯ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৬
জেএইচ/

***সোনালি-রূপালি ক্রিস্টেনকে দেখে...

***ছক্কা হাঁকানোর দিনে!

***কান হয়ে উঠলো বাংলাদেশময়
** মল্লিকার উড়ন্ত চুম্বন
**
সোনমের পোশাক নিয়ে হাসাহাসি
** রাসেল ক্রো ও রায়ান গসলিংয়ের সঙ্গে সেলফি

** চলচ্চিত্রের মহাযজ্ঞে তুমুল ব্যস্ত দিন
** মারিয়ন ছড়ালেন ফরাসি সৌরভ

** কান ক্ল্যাসিকসে খান আতার ছবি
**
নতুন নতুন ও ধ্রুপদী ছবির মিলনমেলা
**বৃষ্টিভেজা কান...
**ঐশ্বরিয়া পেলেন লাল গোলাপের তোড়া

**স্টিভেন স্পিলবার্গের খুব সামনে
** লালগালিচায় তৌকীর-বিপাশা
**প্রস্তুতি ছাড়াই কান মাতালেন ঐশ্বরিয়া
** পাগলা হাওয়ার তোড়ে...
** এই রাত ক্লুনি-আমালের!
***আরাধ্যকে নিয়ে কানে ঐশ্বরিয়া

***জুলিয়া রবার্টসের পায়ে জুতা নেই!
***তোমরা ভুলে গেছো মল্লিকার নাম!
***জুলিয়েট বিনোশকে দেখে চোখ ফেরানো দায়!
***এক প্যাকেট বাদাম দুই ইউরো
**মন কেড়ে নেওয়া গল্পগুলো
**কান উৎসবের বাজেট ২ কোটি ইউরো!
**বাংলানিউজের ক্যামেরাবন্দি জুলিয়া রবার্টস ও জর্জ ক্লুনি
**দেখুন কানে কি না হয়!

** পর্দা উঠলো কান উৎসবের
** হেঁটেছি স্বপ্নের লাল গালিচায়
** শুরুর আগেই জমে উঠেছে লড়াই!
** বিচারকদের সামনে বাংলানিউজ
** সারারাত বৃষ্টির পর ‘ক্যাফে সোসাইটি’
** ইস্তাম্বুলে আইসক্রিম কিনলে ওয়াইফাই ফ্রি!
** ব্যাজের সঙ্গে ব্যাগভর্তি কাগজপত্র দিলেন আয়োজকরা
** কান উৎসবের পর্দা ওঠার অপেক্ষা

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৬ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৬
জেএইচ/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

কান উত্সব ২০১৬ এর সর্বশেষ