ঢাকা, বুধবার, ২৪ পৌষ ১৪৩১, ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭ রজব ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট: ভাষাচর্চার প্রাণকেন্দ্র

রাজীব কুমার সাহা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৩
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট: ভাষাচর্চার প্রাণকেন্দ্র

ফেব্রুয়ারি ভাষার মাস। এ মাসেই আমরা অর্জন করেছিলাম আমাদের মাতৃভাষা বাংলা।

আমাদের প্রাণের ভাষা, চিন্তার ভাষা, আবেগের ভাষা সবকিছুরই কেন্দ্রবিন্দু এই মাতৃভাষা। তাই বাংলা ভাষার প্রসারে আমাদের দেশে চর্চা, ভাষা সংরক্ষণ, ব্যবহারবিধি প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজন হয় একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। এমনই একটি প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট।

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি বুকের রক্ত ঝরিয়ে মায়ের ভাষার অধিকার পেয়েছিল। আর সেই পথ বেয়ে ১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বাঙালির ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতীক বাংলা একাডেমী। এর প্রায় ৫০ বছর পর ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর বাঙালির ভাষার জন্য ত্যাগ আর অহংকারের বিশ্বস্বীকৃতি মিললো ইউনেসকোর একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণার মাধ্যমে।

বাংলা ভাষার বিশ্বজয়ের এই বিরল সম্মান, গৌরব ও আনন্দকে স্থায়ী রূপ দিতে তৎকালীন বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৯ সালের ৭ ডিসেম্বর পল্টনের এক উৎসব সমাবেশে ঘোষণা দেন ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট’ স্থাপনের।

এই ইনস্টিটিউট স্থাপনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মাতৃভাষা বাংলাকে সমুন্নত রাখা এবং বাংলাসহ পৃথিবীর সকল মাতৃভাষার গবেষণা, উন্নয়ন, সংরক্ষণ এবং সমন্বয় সাধন করা।

পরে ২০০১ সালের ১৫ মার্চ সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমীর পাশে ১.০৩ একর জায়গায় ও ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব কফি আনান।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মূল ভবনের স্থাপত্য ও কাঠামোগত নকশাসংশ্লিষ্ট কার্যাদি সমাপ্ত করে প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে বাংলার অহংকারদীপ্ত বাঙালির জন্য বাংলা ভাষা ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা গবেষণাগার প্রতিষ্ঠার নতুন স্বপ্ন।

এরই মধ্যে ভবন নির্মাণ, গ্রন্থাগার স্থাপন, আর্কাইভ (সংগ্রহশালা) আধুনিকীকরণ, নৃ-ভাষাতাত্ত্বিক জরিপসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে লোকবল নিয়োগ এবং পরিপূর্ণ কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি।

বাংলাদেশ এবং বিশ্বের ভাষাবিষয়ক নানা তথ্যসমৃদ্ধ আর্কাইভ (সংগ্রহশালা)  প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে (যদিও অসম্পূর্ণ) এখানে। উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরিদর্শনের জন্য এটি উন্মুক্ত করে দেওয়ার। তোমরা তখন জানতে পারবে কীভাবে ভাষার জন্ম, কীভাবে ভাষা পরিবর্তিত হয়, তথা বাংলাসহ পৃথিবীর অপরাপর ভাষার ইতিবৃত্ত।

তবে এখানে একটি ব্যাপার বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো সেটি হলো ভাষামেলা। ভাষামেলায় আমাদের বাংলা ভাষাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বর্ণমালা, কীভাবে রূপের পরিবর্তন হলো তার ধারাবাহিকতা, ভাষাচিন্তার বিভিন্ন উপাদান, বিভিন্ন ভাষার লেখকদের বই এবং ভাষাবিষয়ক নানান উপকরণের এক প্রদশর্নী করা হয়। এতে বাদ যায়নি আমাদের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী তথা চাকমা, মারমা, সাঁওতালী ভাষাও।

ভাষা যেমন পরিবর্তনশীল তেমনি ভাষার পরিবর্তনকে চিহ্নিত বা সংরক্ষণ করার জন্য চাই ভাষা গবেষণা প্রতিষ্ঠান। তাই এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট-ই রাখবে প্রধান ভূমিকা। সর্বোপরি এর নামের সাথে মিল রেখে এর মানকেও নিয়ে যেতে হবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এমনটাই সবার প্রত্যাশা।

বাংলাদেশ সময়: ২২২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৩
বাংলাদেশ সময়: আসিফ আজিজ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইচ্ছেঘুড়ি[email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।