[পূর্ব প্রকাশের পর]
অনেকক্ষণ ধরে কলিং বেল দিচ্ছে, দরজা খোলার কোনো নাম নেই। কিছুক্ষণ পর দরজার ওপাশে পায়ের আওয়াজ পাওয়া গেলো।
কপালের বাম পাশে একটা কাঁটা দাগ। দাগটাও পরিচিত। কিন্তু এখন মনে পড়ছে না। এটা একটা সমস্যা। অত্যন্ত প্রয়োজনের সময় আমাদের সহজ জিনিসগুলো মনে পড়ে না।
-আপনি কে?
-আমি রফিক, ফয়সালের বন্ধু। ফয়সাল বাসায় নেই ?
-হ্যাঁ ,খালু বাসায় আছে। আপনি ভিতরে আসেন।
মনে হয় ফয়সাল আগেই তার আসার কথা মেয়েটিকে বলে রেখেছিল। নাহলে এতো সহজভাবে ঢুকতে দিতো না।
রফিক ভিতরে ঢুকলো। ঘরের মধ্যে একটা আলো আঁধারির পরিবেশ। এর আগে কখনো এমন অন্ধকার করে রাখতে দেখেনি বাসা। মনে হয় প্ল্যানচেট করার আগে এমন পরিবেশ তৈরি করার নিয়ম। ফয়সাল তার বাল্যকালের বন্ধু। এই বাসায় তার অবাধ যাতায়াত। কেমন অচেনা লাগে পরিবেশটা। আগে এমন লাগেনি কখনো। মনে হচ্ছে অনেকগুলো মৃত মানুষের আত্মা তার দিকে চেয়ে আছে। একজন অন্যজনের সঙ্গে ফিস
ফিসিয়ে কথা বলছে। সে দেখছে না, শুধু অনুভব করতে পারছে , কিন্তু তাকে ঠিকই দেখছে আত্মাগুলো। কেমন গা শিউরানো অনুভূতি।
মেয়েটা ড্রইং রুমে দাঁড়িয়ে আছে, যায়নি।
ফয়সাল কি করে ?
খালু গোসল করে।
ভাবি কি করে?
খালাম্মাও গোসল করছে।
ফয়সাল এই মেয়েটার কথাই মনে হয় বলেছিল আজ সকালে ফোনে। রত্নাদের গ্রামের মেয়ে। রত্না ফয়সালের স্ত্রী। তার স্ত্রী নাকি মেয়েটাকে ওর বাবা মাকে বুঝিয়ে অনেক কষ্টে ঢাকায় এনেছে। মেয়েটার তুলারাশি। আর আত্মা তুলারাশি ছাড়া কারও উপরে ভর করে না। যাদের উপরে ভর করে তাদের বলা হয় মিডিয়াম। মিডিয়ামের বয়স হতে হয় বারো বছরের নিচে।
তোমার নাম কি ?
মরিয়ম।
তুমি কি লেখাপড়া যান?
না, খালাম্মা বলছে স্কুলে ভর্তি করে দেবে।
ও আচ্ছা।
মেয়েটা ভিতরে গেলো। এলো একটু পর। একগ্লাস ঠাণ্ডা শরবত নিয়ে। লাল টকটকে শরবত। রুহ আফজা দিয়ে বানালে এমন কালার হয়। কিন্তু খেতে ভালো হয়েছে।
রুহ আফজার স্বাদ এমন না। আরও কিছু মিক্সড করেছে মেয়েটি। বরফ কুচি ভাসছে।
শরবত দিয়ে আবার চলে গেলো কোথায় যেন। দেওয়ালে একটা ছবি টাঙানো। নতুন কিনেছে। আগে দেখেনি এটা রফিক। এন্টিক কালেকশন। একজন বৃদ্ধ। ফ্যাকাসে মুখ। মনে হয় যেন জীবন্ত। যে এঁকেছে তার মেধার প্রশংসাই করতে হবে। একটুকরো বাঁকা হাসি লোকটার মুখে । রফিকের মনে হলো তার দিকেই তাকিয়ে হাসছে লোকটা। উপহাসে হাসি। রফিকের অস্বস্তি লাগছে। মনে হচ্ছে ভয়ংকর কিছু অপেক্ষা করছে
তার জন্য। কোনো ভয়ংকর ঘটনা। আর সেটা ঘটবে আজ রাতেই।
চলবে....
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৬
এএ
** প্ল্যানচেট | শোয়েব হাসান
ইচ্ছেঘুড়ি
ধারাবাহিক গল্প (পর্ব-২)
প্ল্যানচেট | শোয়েব হাসান
গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।