ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

অপারেশন সার্চলাইট ও আমাদের স্বাধীনতা

মীম নোশিন নাওয়াল খান, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৫০ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৬
অপারেশন সার্চলাইট ও আমাদের স্বাধীনতা

১৯৭১ সালের মার্চ মাস থেকে টানা নয় মাসের যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর জন্ম হয় আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশের। কিন্তু আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসটা শুধু গৌরবের নয়, একইসঙ্গে গভীর বেদনা মিশে আছে এ ইতিহাসে।



১৯৭১ সালের মার্চ মাসের শেষে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। কীভাবে শুরু হয়েছিল যুদ্ধটা?

১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ ভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামক দু’টি দেশ গঠিত হয়। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ তখন থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানের শাসন ও শোষণের শিকার হয়। তখন থেকেই তারা একের পর এক আন্দোলন করতে থাকে নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত অনেক আন্দোলন করেছে বাঙালিরা।  

এরপর ১৯৭০ সালে পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে পূর্ব পাকিস্তানের দল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। কিন্তু তাদের সরকার গঠন করতে দেওয়া হয় না। এ বিষয়ে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করে আওয়ামী লীগ ও পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন, যা বাঙালির মনে স্বাধীনতা লাভের আকাঙ্ক্ষা আরো তীব্র করে।

পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ তখন স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিতেও প্রস্তুত। ক্ষোভে উত্তাল সারা দেশ। সেই উত্তপ্ত সময়ে ইয়াহিয়া খান পূর্ব পাকিস্তানে আসেন শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করার নামে। কিন্তু গোপনে পরিকল্পনা করতে থাকেন পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা চালানোর। ১০-১৩ মার্চ পর্যন্ত সরকারি যাত্রী রূপে সাদা পোশাকে পাকিস্তান এয়ারলাইন্সে করে ঢাকায় পাঠানো হয় সামরিক বাহিনীর অসংখ্য সেনা। চট্টগ্রাম বন্দরে ভেড়ে অস্ত্র বোঝাই জাহাজ।

এরপর ২৫ মার্চ রাতে ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে নিরস্ত্র নিরীহ বাঙালির উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী। এই নির্মম গণহত্যার পরিকল্পনাটির নাম তারা দেয় ‘অপারেশন সার্চলাইট। ’

সে রাতে ঢাকায় নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকা ছাত্র, অধ্যাপক, সামরিক বাহিনীর বাঙালি সেনাসহ অনেককে নির্বিচারে হত্যা করে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী। নিরস্ত্র বাঙালি সেনারা অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই গাছের গুঁড়িসহ বিভিন্ন জিনিস রাস্তায় ফেলে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। কিন্তু সেই প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে দিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যায় পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী।

এই সংবাদ যেন বিশ্ববাসী জানতে না পারে সেজন্য তারা আগেই পরিকল্পিতভাবে সরিয়ে দেয় বিদেশি সাংবাদিকদের। মধ্যরাতে ধানমন্ডিতে নিজ বাসভবন থেকে পাকিস্তানিরা গ্রেফতার করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। কিন্তু গ্রেফতার হওয়ার আগেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন। চট্টগ্রামের কালুরঘাটে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ঘোষণাটি প্রচার করা হয়।

এভাবেই শুরু হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, যে যুদ্ধে জয় করে বাঙালি বিশ্বের বুকে এঁকে দেয় স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্রটি।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৬
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।