প্রথম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
শুনে গ্রামের সবাই বলাবলি শুরু করলো- ইশ্ গিল্টু বিল্টুর কপালই খুলে গেলো! সত্যিই ওরা ভাগ্যবান! বাকি ১৭ প্রতিযোগী গিল্টু বিল্টুর সাফল্যে আফসোস করতে করতে ঈর্ষায় ফেটে পড়লো। কিন্তু গিল্টু বিল্টুর মধ্যে এ নিয়ে তেমন কোনো আনন্দ-উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা গেলো না।
যাইহোক দুপুরের কড়া রোদে সাঁতার শেখানোর কাজ শুরু হলো। নদীর পাড়জুড়ে তখন সারি সারি দর্শনার্থী। রাজপুত্র এসেছে সুন্দর চকচকে সাঁতারের পোশাক পরে। গিল্টু বিল্টুর গায়ে সাধারণ জামা-কাপড়। মানে হাফ প্যান্ট ও স্যান্ডো গেঞ্জি। রাজপুত্রের গায়ে সাঁতারের পোশাক দেখে প্রথমেই দুই ভাই বাধ সাধলো- ওসব জামা-কাপড় পরলে চলবে না। সাঁতার শিখতে হবে গিল্টু বিল্টুদের মতো পোশাক পরে! অগত্যা রাজপুত্র তাড়াতাড়ি পোশাক বদলে এলো। নতুন পোশাক হাফ প্যান্ট ও গেঞ্জি। এবার তিনজনকে দূর থেকে দেখে আলাদা করে আর চেনার উপায় রইলো না কে রাজপুত্র আর কে রাজপুত্র নয়!
রাজা এলেন পুত্রের কাছে। কপালে চুমু খেয়ে বললেন, ‘ভয় পেয়ো না! আমি পাড়েই দাঁড়িয়ে আছি। ’
রাজপুত্র বাবাকে আশ্বস্ত করলো- ঠিক আছে আব্বাজি! গিল্টু বিল্টু খুব ভালো। ওরা আমাকে সুন্দরভাবে সাঁঁতার শিখিয়ে দেবে। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন।
রাজা নিশ্চিন্তে রইলেন বটে কিন্তু রাজাও তো বাবা! বাবার মন বলে কথা!
গিল্টু বিল্টুর পেছন পেছন রাজপুত্র পানিতে নামতে শুরু করলো। পাড়ে দাঁড়ানো দর্শনার্থীরাও আস্তে আস্তে পানির কাছাকাছি এসে দাঁড়াতে লাগলো। মানুষের এলোমেলো ছুটোছুটি বেশি মাত্রায় বেড়ে গেলে রাজ প্রহরী মাইকে ঘোষণা দিলো দর্শনার্থীদের সারিবদ্ধভাবে থাকতে। মাইকের ঘোষণায় ছুটোছুটি হই-হুল্লোর কিছুটা কমলো।
শুরুতেই নিজেদের অদ্ভুত ভাষায় গিল্টুর কানের কাছে মুখ নিয়ে বিল্টু ফিসফিস করে বললো, ‘ধাকাকাং দিবং?’ (ধাক্কা দেবো নাকি?)
গিল্টু বললো, ‘না না! কাইন্দ্যাং দিবোং!’(না না! কেঁদে ফেলবে!)
হাঁটু পানিতে নামার পর রাজপুত্র ভয়ে শিউরে উঠলো। কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো, ‘গিল্টু ভাই, গিল্টু ভাইÑতোমরা আমাকে ধরো! বেশি পানিতে গেলে আমি ডুবে যাবো!’
রাজপুত্রের ভয় পাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে দুই ভাই মিটিমিটি হাসলো। কী যেন বললো, ইঙ্গিতের ভাষায়। ঠিক বোঝা গেলো না।
ততক্ষণে রাজপুত্র গলা পানিতে। গিল্টু আস্তে করে রাজপুত্রের দুই পা ধরে ফেললো। আর বিল্টু কৌশলে তাকে পানিতে ভাসিয়ে দিলো। থরথর করে কাঁপতে লাগলো রাজপুত্র।
বিল্টু বললো, ‘কং, মজাং মজাং!’ (বলো, মজা লাগছে মজা লাগছে!)
রাজপুত্রের তখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। বললো, ‘পানি খেয়ে ফেলেছি! ভীষণ ভয় লাগছে!’
বিল্টু বললো, ‘পানি না খাইলেং সাঁতার শিখং যায়নাং রাজপুত্রং!’ তারপর পানিতে পুরোপুরি ছেড়ে দিয়ে বললো, ‘কং মজাং মজাং!’
পড়িমরি করে আর একবার পানি গিলে ফেলেও রাজপুত্র বাধ্য হয়ে বললো, ‘মজাং মজাং!’
গিল্টু এবার দুই হাত নাড়াতে বললো, ‘পাখনা নাড়াং! পাখনা নাড়াং!’
রাজপুত্র পাখির মতো দুই হাত নাড়ানোর চেষ্টা করার সাথে সাথে পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা লোকের মধ্যে হাততালির রোল পড়ে গেলো। ভেসে এলো উল্লসিত মানুষের চিৎকার : ‘শিখ্যা গ্যাছে! শিখ্যা গ্যাছে!’
সাঁতাররত ছেলের দিকে তাকিয়ে আনন্দে উদ্বেল রাজা তার বন্ধুবর নীতিশাস্ত্রবিদকে বললেন, দেখেছো? আমার ছেলেÑহা হা...আমার ভীষণ ভালোলাগছে! গিল্টু বিল্টুদের আরো বেশি পুরস্কার দেওয়া হবে!’
নীতিশাস্ত্রবিদ বললেন, ‘আগে শেষ হোক!’
ওদিকে রাজপুত্র বললো, ‘আর না, আর না!’
বিল্টু বললো, ‘ক্যালাং ক্যালাং?’
রাজপুত্র কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো, ‘পানি খেয়ে ফেলেছি! পেট ফুলে গেছে!’
গিল্টু বললো, ‘বেশ করেছেন। আরো খাইতে অইবো! যতো খাইবেন ততো শিখবেন!’
সে এবার ইশারায় রাজপুত্রকে কাতুকুতু দেওয়ার ইঙ্গিত করলো। বিল্টু হুকুম পালন করতে দেরি করলো না। রাজপুত্র কাঁদতে কাঁদতে হেসে ফেললো। রাজপুত্র যতোই বললো, সে আর পারছে না, গিল্টু বিল্টু ততোই তাকে কাতুকুতু দিতে লাগলো। অবশেষে সাড়ে তিন ঘণ্টা চেষ্টার পর গিল্টু বিল্টু যখন নিশ্চিত হলো এবার রাজপুত্র একাই সাঁতার কাটতে পারবে তখন ওরা রাজপুত্রকে ফেলে সোজা পাড়ে উঠে এলো। রাজপুত্র এবার নিজেই সাঁতরে এলো গিল্টু বিল্টুর কাছে। পাড়ে তখন হাততালির ধুম!
রাজপুত্র তখন থরথর করে কাঁপছিলো।
রাজা এলেন ছেলের কাছে। রাজপুত্রকে থরথর করে কাঁপতে দেখে বললেন, ‘ছি বাবা! কাঁপছো কেন? বীর পুরুষদের কাঁপতে নেই! বীর পুরুষরা কোনো কিছুকে পরোয়া করে না। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৬
এএ