সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার ষষ্ঠ দিন। কলকাতার সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কে পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ড’র আয়োজনে ১২ দিনের এ মেলা শুরু হয়েছে গত ২৮ জানুয়ারি থেকে।
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) মেলা প্রাঙ্গণের প্রবেশ মুখেই স্বাগত জানিয়েছিলো রাশিয়ার বিখ্যাত নাট্যমঞ্চ বলশয় থিয়েটার। এর আদলেই এবারের মেলার মূল প্রবেশপথটি সাজানো হয়েছে।
সোমবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় রাশিয়ার বলশয় থিয়েটারের আদলে গড়া মেলার প্রবেশ পথ। তা পেরিয়ে রাশিয়ার প্যাভিলিয়নে গিয়ে দেখা যায় নজরকাড়া ভিড়।
বাংলা আর ইংরেজিতে অভ্যস্ত পাঠকরা নেড়েচেড়ে দেখছেন রুশ ভাষায় লেখা বিভিন্ন বই। এদেরই একজন উল্টোডাঙা থেকে যাওয়া পাঠক স্নেহাশীষ ঘোষ।
রুশ সাহিত্য বা রাশিয়ার ব্যাপারে আগ্রহের কারণ জানতে চাইলে স্নেহাশীষ বলেন, বাম রাজনীতি করার কারণে রাশিয়ার প্রতি একটু টান রয়েছে। সে টান থেকেই এখানে এসেছি। রুশ ভাষা জানি না, তারপরও বইগুলো দেখেই শান্তি লাগছে।
তবে স্নেহাশীষের মতো পাঠকদের জন্য সুখবর, মেলায় রুশ সাহিত্যের অনেক কালজয়ী ও গুরুত্বপূর্ণ বইয়েরই অনুবাদ পাওয়া যাচ্ছে। লিও লস্তয়, চেকভ, গোগল থেকে শুরু করে অনেকেরই বই পাওয়া যাচ্ছে মেলায়। সে সঙ্গে সমকালীন সাহিত্যিকদেরও লেখা মিলছে বাংলায়।
বইমেলা ঘিরে রুশ সাহিত্যিকদের একটি প্রতিনিধি দলও কলকাতায় এসেছে। এদের মধ্যে আছেন রাশিয়ান অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস’র বিশ্ব সাহিত্য বিভাগের অধিকর্তা ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অধীনস্থ ভাষা ও সাহিত্য কাউন্সিলের অন্যতম সদস্য ভাদিম পোলোনস্কি।
কলকাতার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তার একটি মন্তব্য আশা জাগানিয়া। সেখানে তিনি বলেন, সুযোগ পেলে সরাসরি পুতিনকে বাংলায় অনুবাদের ব্যাপারে জানাবেন। মাঝখানে অনেক বছর এ ধরনের অনুবাদের কাজ বন্ধ ছিল। এই সময়ের মধ্যে বড় পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে রাশিয়াকে। তবে এখন আবারও অনুবাদের কাজ শুরু হয়েছে। ভারতীয় ভাষাকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
মেলায় যে শুধু রুশ সাহিত্যের বই-ই মিলছে তা নয়। রুশ ভাষা শিক্ষার বিশেষ ক্লাস, রাশিয়া ঘোরার গাইড বই থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় আরও অনেক বইই পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে মেলার থিম কান্ট্রি হওয়ায় প্রায় প্রতিদিনই রাশিয়ান ন্যাশনাল স্ট্যান্ড প্যাভিলিয়নে রুশ সংস্কৃতি তুলে ধরে থাকছে দিনভর অনুষ্ঠান। সোমবার সেখানেই প্রকাশিত হয় রুশ সাহিত্যিক আন্দ্রেই গেলাসিমভের গল্পগ্রন্থ ও আলিসা জেনিয়েভার উপন্যাসের বাংলা অনুবাদ।
এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি ‘ভিজিট মস্কো ইন সেপ্টেম্বর’ শিরোনামের বহুমাত্রিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে ‘নতুনদের জন্য রুশ ভাষা’ শিরোনামের এক আয়োজনে রুশ ভাষা শেখান পুশকিন ইনস্টিটিউটের ইলিনা বেলিখিনা।
এরপর গত ৩১ জানুয়ারি ‘রুশ সাহিত্য অনুবাদের জন্য অনুদান মিলবে কী ভাবে?’ শিরোনামের আয়োজনে বক্তা ছিলেন মস্কোর ইনস্টিটিউট অফ লিটারারি ট্রান্সলেশনের অধিকর্তা ইউজিন রেজনিশেঙ্কো। এছাড়া ১ ফেব্রুয়ারি ‘ভারতে রুশ সাহিত্যের প্রত্যাবর্তন’ শিরোনামের আয়োজনে রুশ এবং ভারতীয় প্রকাশনা সংস্থার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ২ ফেব্রুয়ারি দারিয়া কুজিনার উপস্থিতিতে ছিল কুইজ প্রতিযোগিতা ‘রাশিয়া সম্পর্কে আমরা কী জানি?’
রাশিয়াকে থিম কান্ট্রি করার ব্যাপারে পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক সুধাংশু শেখর দে বাংলানিউজকে বলেন, একটা সময় ছিল রুশ সাহিত্য আমাদের জন্য সহজলভ্য ছিল, কিন্তু অনেক বছর ধরে সে বইগুলো আর মিলছিল না। কিন্তু আমরা চাই আবারও রুশ সাহিত্য ফিরে আসুক। ফলে সব দিক বিবেচনায় এবার রাশিয়াকে থিম কান্ট্রি ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই এ মেলায় রুশ ভাষা থেকে পাঁচটি বই বাংলায় অনুবাদ হয়েছে। রাশিয়া আমাদের কথা দিয়েছে সামনের দিনগুলোতে আরও অনেক বই রুশ থেকে বাংলায় অনুবাদ করা হবে।