ঢাকা, বুধবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

আমরা বিচারকরাও ভুলের ঊর্ধ্বে নই: প্রধান বিচারপতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২৩
আমরা বিচারকরাও ভুলের ঊর্ধ্বে নই: প্রধান বিচারপতি

ঢাকা: প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, আমরা বিচারকরাও ভুলের ঊর্ধ্বে নই এবং বিচারকরাও কিন্তু ভুল করেন। সেই ভুলভ্রান্তিগুলো শোধরানোর দায়িত্ব কিন্তু আমরা যারা সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি তাদেরই।

শনিবার (১১ নভেম্বর) ঢাকা আইনজীবী সমিতির জিল্লুর রহমান অডিটোরিয়ামে ২০২১ ও ২০২৩ ব্যাচের আইনজীবীদের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, এ অনুষ্ঠানে এসে জুডিসিয়াল অফিসারদের বক্তব্য শুনে আমার মনে হচ্ছিল এ ক্লাসগুলো এখনো আমাদের হওয়া দরকার। কারণ আমরা বিচারকরাও কিন্তু ভুলের ঊর্ধ্বে নই এবং বিচারকরাও কিন্তু ভুল করেন। আমি ও আমার সহকর্মীরা যে পর্যায়ে আছেন এর ওপরে যেহেতু কোনো আপিল নেই, রিভিউ শেষ। সেজন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে হাত তুলে বলা ছাড়া আর কিছু নেই। আমরা সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক। আমাদের এক ধরনের পজিশন আছে। যারা কথা বললেন আপনাদের সামনে তাদেরও অনেক সময় ভুলভ্রান্তি হয়। সেই ভুলভ্রান্তিগুলো শোধরানোর দায়িত্ব কিন্তু আমরা যারা সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি তাদেরই।

তবে আইনজীবীর ভুলের কারণে বিচারপ্রার্থীর ক্ষতি হলে তা পূরণের পথ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিন্তু আইনজীবীদের যদি ভুলভ্রান্তি হয়, সেই ভুলভ্রান্তির কারণে যে ক্ষতি মোয়াক্কেলের হয়, সেই ক্ষতি পোষাবেন কেমনে?

বিচারকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের একজন বিচারক বলেছেন একদিন যদি দেখি রিলিফ (প্রতিকার) দিতে পারলাম না, আরেকদিন দেই। কিন্তু রিলিফটা কাকে দিচ্ছেন? রিলিফ তো দিচ্ছেন আপনি উকিলকে, উকিলের পকেট ভারী হবে। আপনি এ ভুলটা করবেন না। ভুল করার আগে বারবার চিন্তা করবেন। একই ধরনের আরেকটি মামলায় যদি তিনি আসেন তখন আপনি শোধরাবেন। অন্য কোনো মামলায় যদি ভুল সাবমিশন তিনি রাখেন রিলিফ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। রিলিফ তখনই দেবেন যখন ক্লায়েন্টের মামলাটি সঠিকভাবে আপনার সামনে উপস্থাপন হবে। একই ধরনের মামলায় আপনি যে ভুলটা করেছেন সেই ভুলটা আর পুনরাবৃত্তি করবেন না। একবার ভুল করেছেন সেজন্য অন্য একটি মামলায় ওই অ্যাডভোকেটকে রিলিফ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটা ফেভারেটিজম (আনুকূল্য) হয়ে যাবে।  

আইনজীবী হিসেবে নিজের ক্যারিয়ারের বর্ণনা দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমি এ বারের সদস্য ছিলাম। ১৯৮৬ সালে আমি এ বারের সদস্য হই। আমি যখন অ্যাডভোকেট হবো তখন অ্যানরোলমেন্টের জন্য যে কন্ট্রাক্ট (চুক্তিপত্র) করতে হয় সিনিয়রের সঙ্গে সেজন্য এসেছিলাম এ বারে। তখন সৈয়দ রেজাউর রহমানের সঙ্গে কন্ট্রাক্ট করার সময় হয়নি। তিনি আবু সাঈদ সাগরকে বললেন আমার পিউপিলাইজেশনের জন্য। আমি আবু সাঈদ সাগরের পিউপিলাইজ ছিলাম। আর আমার বন্ধু অ্যাপিলেট ডিভিশনের বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম ছিলেন গোলাম মাইনুদ্দিনের পিউপিলাইজ। তবে আমি যখন অ্যাডভোকেট হলাম, তখন সৈয়দ রেজাউর রহমানের চেম্বারে জয়েন করলাম। আমার শুরুটা ক্রিমিনাল প্র্যাকটিস দিয়ে। আর বন্ধু ইনায়েতুর রহিমের শুরুটা ছিল সিভিল দিয়ে। এখানে আব্দুল ওয়াহহাব নামে একজন ভালো সিভিল অ্যাডভোকেট ছিলেন তিনি মারা গেছেন। ইনায়েতুর রহিম তার চেম্বারে কাজ করতেন। আজ আমার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত যে, আমি আজ বিচারালয়ের সর্বোচ্চ আসনে আসীন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে লাখো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। একই মঞ্চে আজ আমার সিনিয়র সৈয়দ রেজাউর রহমানও উপস্থিত।

আইন পেশার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস বর্ণনা করে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা যাদের বিভিন্ন পর্যায়ে আইনজীবী হিসেবে অনুমতি দেই এবং বার কাউন্সিল যে অনুমতি দেয় তাদের দায়িত্ব আদালতকে ন্যায়বিচারে সহযোগিতা করা। আদালতের ভুল হলে সেই ভুল ধরিয়ে দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করা। আমরা যদি দেখি কোনো আইনজীবী বার কাউন্সিলের নৈতিকতাগুলো মানছেন না, তাদের এ সনদ স্থগিতের বিষয়টি বিবেচনা করার সময় এসেছে।

ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান মামুনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক খন্দকার গোলাম কিবরিয়া জোবায়েরের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া, মহানগর দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ রেজাউর রহমান, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিম চৌধুরী, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মাশফিকুল ইসলাম, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক কাজী নজিবউল্ল্যাহ হিরু প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২৩
কেআই/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।