ঢাকা: নাশকতার অভিযোগে পৃথক তিন মামলায় যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব ও জামায়াত নেতা শফিকুল ইসলাম মাসুদসহ ৩১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (১১ ডিসেম্বর) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দুজন বিচারক পৃথকভাবে এ রায় দেন।
এর মধ্যে ১০ বছর আগে পল্টন থানার নাশকতার মামলায় জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ ও বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম মজনুসহ ১০ জনকে আড়াই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মইনুল ইসলাম এ রায় দেন।
এ মামলার সাজাপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন- স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, যুবদল নেতা খন্দকার এনামুল হক এনাম, মো. এরশাদুল, জোনাইদ, আব্দুল কাদের খন্দকার, মো. দুলাল হোসেন, মো. হুমায়ুন কবির রওশন ও মিজানুর রহমান টিপু।
এ ছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এ মামলায় ৪৫ আসামিকে বেকসুর খালাস দেন আদালত।
জানা যায়, ২০১২ সালের ১ ডিসেম্বর বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা মিছিল বের করলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় তারা পুলিশের ওপর চড়াও হয়ে ইট-পাটকেল ও ককটেল নিক্ষেপ করেন। এ ছাড়া ঘটনাস্থলে থাকা গাড়ি ভাঙচুর করেন।
অপরদিকে ১০ বছর আগে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় করা নাশকতা ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগের মামলায় যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব ও ঢাকা সিটির সাবেক কাউন্সিলর আনোয়ারুজ্জামানসহ বিএনপির ১০ নেতা-কর্মীকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান এ রায় দেন।
এ মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন- লুৎফর রহমান, শাহীন ওরফে গান্ডু শাহীন, তরিকুল ইসলাম ওরফে ঝন্টু, আমিনুল ইসলাম জাকির, গোলাম কিবরিয়া শিমুল, বিল্লাল হোসেন, শহিদুল ইসলাম ও জাকির হোসেন।
দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে সাইফুল আলম নীরব ও আনোয়ার রায় ঘোষণার সময় আদালতে হাজির ছিলেন। রায় ঘোষণা শেষে সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। এ ছাড়া পলাতক ৮ আসামির নামে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, বাবুল নামে এক ট্যাক্সিচালক ২০১৩ সালের ২৬ মার্চ রাত সাড়ে ৭টার দিকে মহাখালী থেকে তিনজন যাত্রী নিয়ে কারওয়ান বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। রাত ৮টার দিকে কারওয়ান বাজারের ওয়াসা ভবনের সামনে পৌঁছালে কয়েকজন তার গাড়ি থামিয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেন। এ ঘটনায় ট্যাক্সিচালক বাবুল তেজগাঁও থানায় মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে তেজগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহবুবুর রহমান ২০১৪ সালের ১৪ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এদিকে পাঁচ বছর আগে গুলশান থানায় করা নাশকতার মামলায় বিএনপির ১১ নেতা-কর্মীকে পৃথক তিন ধারায় সাড়ে চার বছরের সাজা দিয়েছেন আদালত। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান এ রায় দেন।
রায়ে দণ্ডবিধির ১৪৩ ধারায় ৬ মাস, ১৪৭ ও ৪২৭ ধারায় দুই বছর করে চার বছরের সাজা দেন আদালত। সব ধারার সাজা একসঙ্গে চলবে বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়। ফলে আসামিদের দুই বছর কারাভোগ করতে হবে।
কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন- মো. মামুন চৌধুরী, বিল্লাল হোসেন, অসীম ওরফে অসীম আকরাম, নুরুল ওরফে নূর হোসেন, মো. শরীফ উদ্দিন ওরফে মামুন, আমিনুল ইসলাম, অহিদুল ইসলাম শাহীন, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. সিদ্দিকুর রহমান প্রান্ত, জয়নাল, মীর মোহাম্মদ স্বপন। তারা সবাই বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মী-সমর্থক।
রায় ঘোষণার সময় আসামিদের মধ্যে অসীম ওরফে অসীম আকরাম ও মো. শরীফ উদ্দিন ওরফে মামুন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাদের সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্যরা পলাতক থাকায় তাদের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৩ অক্টোবর অবরোধের সমর্থনে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ঢাকার গুলশান এলাকায় বেআইনিভাবে জনতাবদ্ধ হন। তারা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির লক্ষ্য ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে বলে মামলায় অভিযোগ করে পুলিশ। ঘটনার দিন ২৩ অক্টোবর পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ১ এপ্রিল ১১ জনের নামে চার্জশিট দেয় পুলিশ।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২৩
কেআই/আরবি