ঢাকা: সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির পদে দায়িত্ব নেওয়ায় ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (২০ এপ্রিল) খোকনকে এ বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এবারের নির্বাচনে ১৪টি পদের বিপরীতে সভাপতিসহ চারটি পদে বিজয়ী হয়েছিল বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল। অপরদিকে সম্পাদকসহ ১০টি পদে বিজয়ী হয়েছে সরকার সমর্থিত বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ। গত ৬ ও ৭ মার্চ নির্বাচন শেষে ৯ মার্চ রাতে ভোট গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করেন নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক সিনিয়র অ্যাডভোকেট বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের (নীল প্যানেল হিসেবে পরিচিত) বিজয়ীরা হচ্ছেন- সভাপতি পদে এ এম মাহবুব উদ্দিন (খোকন) এবং সদস্য পদে সৈয়দ ফজলে এলাহী, ফাতিমা আক্তার ও মো. শফিকুল ইসলাম শফিক।
বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ (সাদা প্যানেল হিসেবে পরিচিত) বিজয়ীরা হচ্ছেন- সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক, সহ-সভাপতি পদে রমজান আলী শিকদার ও দেওয়ান মো. আবু ওবাঈদ হোসেন সেতু, কোষাধ্যক্ষ পদে মোহাম্মদ নুরুল হুদা আনসারী, সহ-সম্পাদক পদে মো. হুমায়ুন কবির ও মোহাম্মদ হুমায়ন কবির। সদস্য পদে মো. বেলাল হোসেন শাহীন, খালেদ মোশাররফ রিপন, মো. রায়হান রনি ও রাশেদুল হক খোকন।
এরপর বিএনপি সমর্থিত বিজয়ী সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ চারজনকে দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে গত ২৭ মার্চ চিঠি দিয়েছিল জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।
মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ চারজনকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, বিগত দুই বছরের মতো এবারের নির্বাচনেও ক্ষমতাসীনরা নজিরবিহীনভাবে ভোট জালিয়াতি, কারচুপি ও মনগড়া ফলাফল ঘোষণা করেছে। এমনকি সম্পাদক পদে আওয়ামী লীগ দলীয় দুজন প্রার্থী, প্রথমে নাহিদ সুলতানা যুথী ও পরে শাহ মঞ্জুরুল হককে তথাকথিত বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ক্ষমতাসীন দলের বহিরাগত সন্ত্রাসীরা নির্বাচনের অব্যবহিত পরে সমিতির অডিটোরিয়ামে হামলা চালিয়ে আইনজীবীদেরকে মারধর ও ব্যালট পেপার ছিনতাই করে নিয়ে যায়। ওই ঘটনা আওয়ামী লীগের দুজন সম্পাদক পদপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘটিত হলেও সরকারের একজন বেতনভুক্ত আইন কর্মকর্তা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ও আরও তিনজন আইনজীবী ফোরামের নেতাকে আসামি করে শাহবাগ থানায় একটি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক ফৌজদারি মামলা দায়ের করেন।
এ মামলায় ওসমান চৌধুরী, সম্পাদক পদেপ্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুসকে (কাজল) গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়। তারা দুই সপ্তাহের মতো কারাভোগ করেছেন। তাদের কারাগারে রেখে গত ১০ মার্চ লুট হয়ে যাওয়া ব্যালট পেপার গণনার নাটক সাজিয়ে তথাকথিত ফলাফল ঘোষণা করা হয়। যে নির্বাচনে আমাদের পুরো প্যানেলেরই বিজয় সুনিশ্চিত ছিল, সেখানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভোট ডাকাতি জায়েজ করতে আপনাদের (বিএনপির বিজয়ী চারজন) নামকাওয়াস্তে বিজয়ী দেখানো হয়েছে। আইনজীবী সমাজ ও দেশের আপামর জনগণ নির্বাচনের এ ফলাফলকে প্রত্যাখ্যান করেছে। ইতোমধ্যে আমাদের সভাপতি পদপ্রার্থী, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব, ব্যারিস্টার এ এম মাহবুবউদ্দিন খোকন পুনঃনির্বাচন দাবি করেছেন, যা দেশের সব গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে ২৪ মার্চ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র কেন্দ্রীয় নেতা, উপদেষ্টামণ্ডলী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এবং সম্পাদকদের এক যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনের পর গত মার্চ ঘোষিত ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে পুনঃনির্বাচনের দাবিতে ন্যায়সংগত যৌক্তিক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আপনাদের এ মর্মে জানানো যাচ্ছে যে, আপনারা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ এর মেয়াদকালের দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিরত থাকবেন। দলের দায়িত্বশীল নেতা হিসেবে দলীয় এ সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে পালন করবেন।
কিন্তু ৪ এপ্রিল অপর তিনজন দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিরত থাকলেও দায়িত্ব নেন মাহবুব উদ্দিন খোকন।
এটাকে চরম দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি উল্লেখ তাকে ফোরাম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২৪
ইএস/আরবি