ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

জেল খাটায় আয়নাবাজি: বিচারক-আইনজীবী-জেলারের কাছে ব্যাখ্যা তলব

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২৪
জেল খাটায় আয়নাবাজি: বিচারক-আইনজীবী-জেলারের কাছে ব্যাখ্যা তলব যুবলীগ নেতা নাজমুল ও মিরাজুল: ফাইল ফটো

ঢাকা: রাজধানীর উত্তরায় যুবলীগ নেতা নাজমুল হাসানের মাদক মামলায় ৭ বছরের জেল খাটার পরিবর্তে অর্থের বিনিময়ে মিরাজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির জেল খাটার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট বিচারক, আইনজীবী ও কারা কর্মকর্তার কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছেন হাইকোর্ট।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

জালিয়াতির বিষয়ে নজরে এনে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। আসামিকে পক্ষে যারা আইনজীবী ছিলেন তারা নাম প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন।

জানা যায়, ২০২০ সালের আগস্ট মাসে উত্তরার একটি বাসায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল ও গাঁজাসহ আনোয়ার হোসেন নামে একজনকে আটক করে। তবে পালিয়ে যান চক্রের হোতা যুবলীগ নেতা নাজমুল হাসান। এ ঘটনায় দুজনকে আসামি করে মামলা করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। বিচারে অপরাধ প্রমাণ হওয়ায় পলাতক নাজমুল হাসানকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন নিম্ন আদালত।

নাজমুল ঢাকার উত্তরার ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের নেতা; কিন্তু এ পরিচয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করে যিনি জেল খেটেছেন তার প্রকৃত নাম মিরাজুল ইসলাম। এর মধ্যে সাত বছরের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। ওই আপিল শুনানির শেষ পর্যায়ে বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ চেয়ে বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তখন আদালতে আবেদন জানালে ১৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন। এ অবস্থায় নিম্ন আদালতের এক আইনজীবী বিষয়টি প্রধান বিচারপতির নজরে আনেন। তখন প্রধান বিচারপতি আপিল নিষ্পত্তির জন্য বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের বেঞ্চে পাঠান।

শুনানিতে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তাতে স্পষ্ট প্রকৃত ব্যক্তির পরিবর্তে অন্য একজন জেলে গিয়ে জামিনের পর আপিল দায়ের করে, যার মাধ্যমে প্রকৃত আসামি ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।

আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, শুনানির সময় আপিলকারীর পক্ষের নিয়োজিত আইনজীবী সিনিয়র অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান ও রমজান খান মামলা থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করার আবেদন জানান। আদালত শুনানি শেষে কয়েকটি আদেশ দিয়েছেন। এক. ২০২৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর আসামি আত্মসমর্পণ করাকালীন তার প্রকৃত পরিচয় কিভাবে সনাক্ত করা হয়েছিলেন সে বিষয়ে অষ্টম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ঢাকার বিচারক মো. মোরশেদ আলমকে সাত কার্য দিবসের মধ্যে লিখিতভাবে জবাব দিতে বলেছেন।

দুই.নিম্ন আদালতে আসামিপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও আরিফুল ইসলামকে আগামী সাত কার্য দিবসের মধ্যে ঘটনার বিষয়ে তাদের বক্তব্য হলফনাম আকারে আদালতে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

তিন. কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার আসামিকে কি প্রক্রিয়ায় গ্রহণ করেছেন তার প্রমাণপত্রসহ হলফনামা সহকারে লিখিত জবাব আগামী সাত কার্য দিবসের মধ্যে জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

চার. ডেপুটি জেলার সৈয়দ হাসান আলী কেরানীগঞ্জ ঢাকাকে, আসামির স্বাক্ষর কিভাবে সত্যায়িত করেছেন তা হলফনামা আকারে সাত কার্য দিবসের মধ্যে আদালতে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

পাঁচ.সাজাপ্রাপ্ত আসামি নাজমুল হাসানকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত অভিযোগের বিষয় তার লিখিত বক্তব্য তার আইনজীবী রমজান খানের মাধ্যমে সাত কার্য দিবসের মধ্যে আদালতে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

আদালত মামলাটি পরবর্তী শুনানির জন্য ৭ মে  নির্ধারণ করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২৪
ইএস/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।