ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত,  ৮ বছর পর হত্যা মামলা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৪
‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত,  ৮ বছর পর হত্যা মামলা

বরিশাল: বরিশালের মুলাদীতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগে ৮ বছর পর মামলা হয়েছে। মামলার বাদীর অভিযোগ, প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হলেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভয়ে এলাকা ছেড়ে আত্মগোপন করায় তখন মামলা করতে পারেননি।

তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, সলিমের আতঙ্ক শুধু মুলাদীতে নয়, আশপাশের এলাকায়ও ছিল। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় হত্যা, ডাকাতিসহ একাধিক মামলা ছিল। ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হাওয়ার আগে তাকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। এছাড়া এর আগেও ২০১৬ মামলা করা হয়েছিল তবে তা মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন হওয়ায় খারিজ করে দেওয়া হয়।

সর্বশেষ আদালতে দাখিল করা এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বরিশালের মুলাদীতে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির কর্মী সলিম হাওলাদার হত্যার অভিযোগে আট বছরের অধিক সময় পর অজ্ঞাত নামধারীসহ ৩৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগে আনা হয়েছে। যে অভিযোগে গত ১৯ সেপ্টেম্বর বরিশালের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে নালিশি মামলা করেন নিহতের ভাই মোস্তফা হাওলাদার। জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম সুমাইয়া রেজবী মৌরি নালিশি অভিযোগ এজাহার হিসেবে রুজু করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য মুলাদী থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. ফেরদৌস।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে মুলাদী উপজেলার সফিপুর ইউনিয়নের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বীকে সমর্থন করে বিএনপি কর্মী সলিম হাওলাদার। এতে এলাকার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ক্ষিপ্ত হয়। নির্বাচনের পর ২০১৬ সালের ১ জুন সলিম ঢাকা থেকে নিজ গ্রামে আসে। সফিপুর লঞ্চঘাট থেকে সকালে বাড়ি ফেরার পথে সফিপুর গ্রামের ৪০-৪৫জন দুর্বৃত্ত তার ওপর হামলা করে। পরে সলিমকে কুপিয়ে ও গুলি করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে চলে যায়। পথচারীরা সলিমকে উদ্ধার করে মুলাদী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

যদিও তৎকালীন মুলাদী ওসি মতিউর রহমানের গণমাধ্যমে প্রকাশিত বক্তব্যের সূত্র বলছে, র‌্যাব-১০ এর একটি দল মঙ্গলবার (২০১৬ সালের ৩১ ম) ভোরে ঢাকার কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন খোলামোড়া বাজার থেকে সলিমকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর ঢাকা থেকে সলিমকে মুলাদীতে নিয়ে আসা হয়। পরদিন বুধবার ভোর পৌনে ৩টার দিকে সলিমের স্বীকারোক্তি মতে উত্তর পাতারচর এলাকায় অস্ত্র উদ্ধারে গেলে তার সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছুঁড়ে। এক পর্যায়ে গোলাগুলি বন্ধ হয়ে গেলে সলিমের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।

সেখান থেকে পাইপগান, গুলি ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এ সময় পুলিশেরএসআই ফারুক হোসেন, এসআই কমল ও কনস্টেবল পারভেজসহ ৩ জন আহত হন। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।

এ বিষয়ে মোস্তফা হাওলাদার গণমাধ্যমকে জানান, ইউপি নির্বাচনের জেরে বন্দুকযুদ্ধের নামে সলিমকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হয়েছিল। ঘটনার পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভয়ে এলাকা ছেড়ে আত্মগোপন করায় মামলা করতে পারেননি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাড়ি ফিরেছেন এবং আদালতে ভাই হত্যার মামলা করেন।

তবে মামলার বাদীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকায় সে আত্মগোপেন ছিল বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ও মামলার অভিযুক্তরা। সে সঙ্গে যারা আসামি হয়েছেন তাদের অনেকেই কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না থেকে চাকরিসহ বিভিন্ন পেশায় রয়েছেন।

মামলায় অভিযুক্তদের স্বজন ইব্রাহিম, ইমরানসহ স্বজনরা জানিয়েছেন, সলিমের বিরুদ্ধে বরিশাল, মাদারীপুর, শরিয়তপুরসহ একাধিক থানায় মামলা থাকায় এ আত্মগোপনে ছিল। তাকে ধরিয়ে দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে পুরস্কার ঘোষণাসহ নানান উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছিল। এরপর সে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয় এবং  বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। আর এতবছর বিষয়টিকে ভিন্নখাতে নিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে মাঠে নেমেছে সলিমের স্বজনরা। এখন তারা দাবি করছে সলিম বিএনপির কর্মী আর সলিমকে হত্যা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, আদালতের নির্দেশনা পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিনা অপরাধে কাউকে হয়রানি করার সুযোগ নেই। তদন্তে যা আসবে সেই অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৪
এমএস/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।