ঢাকা: নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি ও সাবেক সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ বলেছেন, আমাকে বিদেশ থেকে আসার সময় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চাইলে পাঁচ-ছয় বছর শেষে না এসেও থাকতে পারতাম।
গত বছর ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশে যুবদল নেতা শামীম হত্যা মামলার রিমান্ড শুনানিতে এ কথা বলেন তিনি। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) তাকে আদালতে তোলা হয়।
এদিন সুলতান মনসুর আহমেদকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্টন মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তন্ময় কুমার বিশ্বাস।
রিমান্ড আবেদনের পক্ষে বিএনপিপন্থী আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, তিনি ডাকসুর সাবেক ভিপি। সারা জীবন বেঈমানির রাজনীতি করেছেন। শেখ হাসিনা ৪০ বছর বয়সে তাকে ডাকসুর ভিপি করেন। হাসিনার সঙ্গে তিনি বেঈমানি করেন। লাস্ট বেঈমানি করেছেন ২০১৮ সালে। তাকে ধানের শীষ দেওয়া হয়। নির্বাচিত হওয়ার পর আরেক বেঈমানি করেন। আবার চলে যান শেখ হাসিনার কাছে।
তিনি আরও বলেন, গত বছর ২৮ অক্টোবর বিএনপির বৃহৎ মহাসমাবেশ হয়। সেখানে যুবলীগ, ছাত্রলীগ, পুলিশ গুলি চালায়। হাজার হাজার নেতাকর্মী আক্রান্ত হন। যুবদল নেতা শামীম মারা যান। এ ঘটনায় এ আসামি প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। তার ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।
এ সময় সুলতান মনসুরের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। একপর্যায়ে আদালত তার বক্তব্য জানতে চান। তখন সুলতান মনসুর আদালতকে বলেন, আমি গতকাল টরন্টো থেকে ঢাকায় আসি। আমার বড় মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে ঢাকা শাহিন কলেজের টিচার। মেজ মেয়ে কানাডার অটোয়াতে থাকে। আর ছোট মেয়ে ব্যারিস্টার। আমার মেজ মেয়ে সন্তান সম্ভবা। তাকে দেখতে গত ১০ মে কানাডা যাই। সেখান থেকে নিকটবর্তী দেশ আমেরিকায় আমার ভাইয়ের দুই ছেলে থাকে। সেখানে যাই তাদের দেখতে।
আমি ১৯৬৮ সালে আইয়ুব বিরোধী থেকে আন্দোলন থেকে রাজনীতি শুরু করি। রাজনীতির ৫৫ বছর হতে যাচ্ছে। ১৯৭০ এর নির্বাচন, ৭১ এ স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছি। স্বাধীনতার পর এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের প্রার্থী হিসেবে ডাকসুর নির্বাচনে জয়ী হই। এ সময় দুইবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গেও আমার বৈঠক হয়। তখন ছাত্রদল সভাপতি ছিলেন শামসুজ্জামান দুদু ও সেক্রেটারি ছিলেন আসাদুজ্জামান রিপন, আমরা একসঙ্গে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করি।
তিনি আরও বলেন, ১৯৯৬ সালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মৌলভীবাজার-২ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হই। ২০০৮ সালের পর থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যিনি নেতাকর্মীদের রেখে দেশত্যাগ করেছেন, তিনি গত ২০ বছর আমাকে আওয়ামী লীগের কোনো পদ-পদবিতে রাখেননি। ২০১৮ সালে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিই। তখন ঐক্য প্রক্রিয়ার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে জয়ী হই। যেই প্রক্রিয়ায় কাদের সিদ্দিকী, আ স ম আব্দুর রবদের সমর্থন ছিল। আমাদের সব প্রোগ্রাম কামাল হোসেন ঠিক করে দিতেন। সংসদে যোগ দেওয়ার বিষয়েও কামাল হোসেন আমাকে ফোন দিয়ে যোগ দিতে বলেন।
আন্দোলন প্রসঙ্গে ডাকসুর সাবেক ভিপি বলেন, যে সময় কোটা আন্দোলন তখন দেশের বাইরে ছিলাম। আর ২০১৮ সালে কোটা বাতিলের পক্ষে সংসদে ইতিবাচক বক্তব্য রাখি, যা সংসদের রেকর্ড থেকে আপনারা দেখতে পারবেন। তখন আমার বক্তব্যের বিরোধিতা করে মতিয়া চৌধুরী বক্তব্য দেন।
নিজেকে অসুস্থ উল্লেখ করে সুলতান মনসুর আদালতকে বলেন, আমি হার্টের রোগী। ২০১২ সালে হার্টে তিনটি রিং বসানো হয়। দুই বেলা ওষুধ খেতে হয়। আর আমাকে বিদেশ যাওয়ার সময় নয়, আসার সময় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চাইলে আমি চার-পাঁচ বছর দেশে না এসেও থাকতে পারতাম। আমি খুন, দুর্নীতি, অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত নই। সবাই যেভাবে দেশ নিয়ে ভাবে আমিও ভাবি। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাকে গ্রেপ্তার করানো হয়েছে। এর আগে ৫৪ বছরের রাজনীতির ইতিহাসে আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। মাননীয় আদালত যেন আমার প্রতি সুবিচার করেন এবং আমাকে মুক্তি দেন।
এরপর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাগীব নূরের আদালত তার ৫ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
এর আগে ভোরে কানাডা থেকে দেশে ফেরার পর ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন থেকে তাকে হেফাজতে নেয় পুলিশ।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪
কেআই/এমজে