ঢাকা: অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় ঠিকাদার যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা জি কে শামীমকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বাতিল করেছেন আপিল বিভাগ।
আর ১০ বছরের দণ্ডিত অর্থপাচার প্রতিরোধ আইনের মামলায় হাইকোর্ট থেকে পাওয়া জামিন স্থগিত করা হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপক্ষের পৃথক আবেদনের শুনানি শেষে সোমবার (০৪ নভেম্বর) আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে দুদকের আবেদনে শুনানি করেন আইনজীবী মো. আসিফ হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ।
জিকে শামীমের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আব্দুর রেজাক খান ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
অবৈধ সম্পদ
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযোগের মধ্যে ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর গুলশানের নিকেতনে শামীমের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও অভিযান চালায় র্যাব। এ সময় ওই ভবন থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা, এফডিআর, আগ্নেয়াস্ত্র ও মদ উদ্ধার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অভিযানের সময় জি কে শামীম ও তার সাত দেহরক্ষীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাদের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা করা হয়। এর মধ্যে দুই মামলায় (অর্থ পাচার ও অস্ত্র) তার সাজা হয়েছে।
২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর শামীম ও তার মা আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে ২৯৭ কোটি ৮ লাখ ৯৯ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এ মামলা করেন দুদকের উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন।
২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি এ মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ২০২২ সালের ১৮ অক্টোবর আদালত তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
গত বছর ৯ জানুয়ারি ঢাকার ৪ নম্বর বিশেষ জজ শেখ নাজমুল আলমের আদালতে দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিনের সাক্ষ্য রেকর্ড করার মধ্য দিয়ে আলোচিত এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। বর্তমানে মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।
গত ৪ জানুয়ারি অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় বিতর্কিত ঠিকাদার জি কে শামীমকে জামিন দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। পরে এ জামিনের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে দুদক।
অর্থ পাচার
গত বছরের ১৭ জুলাই মানি লন্ডারিং আইনের মামলায় জি কে শামীমকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। বাকি সাত আসামিকে (জি কে শামীমের দেহরক্ষী) চার বছর করে কারাদণ্ডা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তাদের সম্মিলিতভাবে তিন কোটি ৮৩ লাখ ৩৫ হাজার ৮১৪ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত।
চার বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত সাত আসামি হলেন মো. দেলোয়ার হোসেন, মো. মোরাদ হোসেন, মো. জাহিদুল ইসলাম, মো. শহীদুল ইসলাম ওরফে শরীফ, মো. কামাল হোসেন, মো. সামসাদ হোসেন ও মো. আনিছুল ইসলাম।
রায়ে আদালত তার জব্দকৃত সব ব্যাংক হিসাব ও অস্থাবর সম্পত্তি অবমুক্ত করার আদেশ দেন। এরপর হাইকোর্টে আপিল করে জামিন পান জি কে শামীম। পরে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে জামিনাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে।
আইনজীবী মো. আসিফ হাসান জানান, অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলাটি দুদকের এ মামলায় জি কে শামীমকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বাতিল করেছেন আপিল বিভাগ। আর অর্থপাচারের মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি)। এ মামলায় বিচারিক আদালত জি কে শামীমকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে জামিন নিয়েছিলেন জি কে শামীম। এ জামিনটা স্থগিত করে আপিল নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০২৪
ইএস/আরআইএস