ঢাকা, বুধবার, ২৩ পৌষ ১৪৩১, ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭ রজব ১৪৪৬

আইন ও আদালত

যে প্রেক্ষাপটে দেশ ছেড়েছিলেন ব্যারিস্টার রাজ্জাক

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০২৫
যে প্রেক্ষাপটে দেশ ছেড়েছিলেন ব্যারিস্টার রাজ্জাক

ঢাকা: ২০১৩ সালে দেশের খারাপ পরিস্থিতি এবং বাসায় থাকতে না পেরে দেশ ছেড়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক।

১১ বছর পর ইংল্যান্ড থেকে দেশে ফেরা উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সোমবার এমন তথ্য জানিয়েছেন তিনি।

 

সোমবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাবেক ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার।

সভায় বক্তব্য রাখেন, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বদরুদ্দোজা বাদল, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার বেলায়েত হোসেন প্রমুখ।

অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক অ্যাসোসিয়েটস। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ব্যারিস্টার ইশরাক সিদ্দিকী।

সভাপতির বক্তব্যে ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, এখানে যারা আইনজীবী আছেন তারা প্রশাসনে যাবেন। আপনারা যদি শক্তশালী হয়ে থাকেন আজ হোক কাল হোক দেশ ভালো হতে বাধ্য। তিনি বলেন, আমরা সমাজকে দিয়ে যাব, কি দিয়ে যাব। আমরা যদি আমাদের সন্তানদের জ্ঞান দিয়ে যেতে পারি। তিনি বলেন, ব্রিটিশরা আমাদের শাসন-শোষণ করেছে কিন্তু তারাও আইনকে সম্মান করত। কিন্তু একজন রাজনীতিক রাস্তা দিয়ে যাবে আর তাকে উধাও করে দেওয়া হবে। এমন উধাও করে দেওয়াটা অতীতে ছিল না।

জয়নুল আবেদীন বলেন, ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক খুবই অসুস্থ ছিলেন। মহান আল্লাহ তাকে আবারও আমাদের মাঝে ফিরিয়ে এনেছেন। আমরা আশা করব তিনি আবারও আইন পেশায় ফিরে আসবেন। বিগত দিনে তিনি জ্ঞানের আলো দান করেছেন। তাকে আমরা আবার ফিরে পাব।

মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের ১১ বছর আগে চলে যাওয়া আবার ফিরে আসা আমার কাছে আলৌকিক মনে হয়। তিনি বলেন, ৫ আগস্টের আগে কেউ মনে করেনি শেখ হাসিনার মত দুর্দান্ত প্রতাপশালী শাসক এভাবে পালিয়ে যাবে। বাংলাদেশের মানুষের জীবনে এর চেয়ে বড় অর্জন আর কিছু হতে পারে না। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া এইদিন তিনি মানুষকে দেখিয়েছেন।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ১১ বছর কেন আমি বাইরে থাকলাম? ২০১৩ সালে আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি হলো। দেশের অবস্থা বেশি খারাপ। আমাদেরকে বেশি ঘরের বাইরে থাকতে হচ্ছে। চিন্তা করলাম মাত্র মাত্র দুই সপ্তাহের জন্য লন্ডন যাবো। ১৮ (ডিসেম্বর) তারিখ সকালে আমি লন্ডনে নামলাম। হঠাৎ করে দুপুরে জানতে পারলাম আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আমি নাকি ঢাকার রাস্তায় ছিলাম। পুলিশের ওপর বোম মেরেছি। এর কিছুদিন পরে আমি জানতে পারলাম উচ্চ পর্যায়ের এক দেশের কূটনৈতিক সোর্স থেকে। শেখ হাসিনা আমাকে গ্রেপ্তার করার অনুমতি দিয়েছেন, আইসিটির অধীনে (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে)। কিছুই আমি জানতাম না। সুতরাং এটা আল্লাহর মেহেরবানি। ৫ বছর পুলিশ আমাকে অত্যন্ত জ্বালাতন করেছে। ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর (২০১৩) পুলিশ আমার বাসায় গিয়েছে। কিন্তু আল্লাহর সিদ্ধান্ত বিদেশে চলে গেলাম। ফিরতে ১১ বছর লেগেছে। ১১ বছর আমি ইংল্যান্ডে থেকে প্র্যাকটিস করেছি।

তিনি বলেন, একটা জিনিস যদি রক্ষা করতে পারতাম, জুডিসিয়ারি; অনেক লিডারকে দেশ ছাড়তে হতো না। অনেকের জেলে যেতে হতো না। ১৯৩৫ সালের ব্রিটিশ সরকার থেকে গত সরকার পর্যন্ত অলমোস্ট আমাদের জুডিসিয়ারি স্বাধীন ছিলো, প্রেস স্বাধীন ছিলো। মানুষের স্বাধীনতা ছিলো। কিন্তু এই স্বাধীনতাকে গত সরকার হরণ করেছিলো। সুতরাং জুডিসিয়ারিকে যদি আমরা বাঁচাতে পারতাম, পারতাম কিনা আমি জানি না, তাহলেও এই জাতি অনেক আগে এই ডিক্টেটরশিপের হাত থেকে রক্ষা পেতো।

আইনজীবী ও জনসাধরণের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আজকে বার (সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি) ও  বেঞ্চ (আদালত), আপামর জনসাধারণ সবার একটা লক্ষ্য হওয়া উচিত, আমরা আমাদের জুডিসিয়ারিকে কোনো সময়ই পরাধীন হতে দিবো না। সঙ্গে সঙ্গে আমরা একটা স্বাধীন বার গড়ে তুলবো ।

ব্যারিস্টার রাজ্জাক আরও বলেন, আমরা যদি সত্যিকারার্থে এই বাংলাদেশকে তার নিজের জায়গায় নিয়ে যেতে চাই, তাহলে সব ধরনের ইন্টারেস্ট থেকে বারকে মুক্ত করতে হবে। আমরা স্বাধীন বার চাই । আমরা স্বাধীন জুডিসিয়ারি চাই। যদি এগুলো নিশ্চয়তা প্রদান করতে পারি তাহলে সত্যিকারার্থে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হবে। মানুষের ঋণ শোধ করতে পারবো। আমার আহ্বান হবে আমরা বাইরে রাজনীতি করবো। কিন্তু এখানে মেম্বারস অব দ্য বার। আমরা ভাগ্যবান যে আমরা একজন শিক্ষিত, সৎ এবং দক্ষ প্রধান বিচারপতি পেয়েছি। তিনি যাতে সত্যিকার অর্থে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে আলাদা করতে পারে সে লক্ষ্যে আমাদের তার হাতকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করতে হবে।  

আপনি ইংল্যান্ডে একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রভাবিত করতে পারবেন না। কোনো উপায় নেই। আর এখানে কি চলছে আমরা সবাই জানি। আসুন সবাই একমত হই।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০২৫
ইএস/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।