আদালতই মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল। ন্যায়বিচার মানুষের সর্বনিম্ন প্রাপ্তি।
সাধারণভাবেই আদালতের প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস থাকে বলেই আদালতের দারস্ত হয়। আদালত যদি স্বাধীনভাবে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে তবে সেখানে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
আইন ও সংবিধানের আলোকেই আদালত পরিচালিত হয়। আদালতের বিচারকগণ সংবিধানানুযায়ী শপথ গ্রহণ করেছেন যে তারা রাষ্ট্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন। কারো প্রতি কোনো অনুরাগ বা বিরাগ পোষণ করবেন না।
কিন্তু বিচারকদের শপথই শেষ কথা নয়। রাষ্ট্র বিচারকদের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্য যথাযথ সুযোগ দিয়েছে কিনা সেটি গুরুত্বপূর্র্ণ।
সংবিধানই একটি দেশের সর্বোচ্চ আইন। আর ন্যায়বিচার একটি ধারণা। এটি বাস্তবায়িত করতে গেলে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
আদালত বা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বিষয়টি আমাদের দেশে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। সংবিধানের মাধ্যমে সেই স্বাধীনতাকে নানাভাবে পরিবর্তিত করেছে।
আমাদের সংবিধান পর্যালোচনা করলে বলতে পারি বাংলাদেশের বিচারপতিরা ১৯৭২ সালের গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী (৯৪ অনুচ্ছেদের ৪ দফা) বিচারকাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে বিশেষ স্বাধীনতা ভোগ করে থাকেন।
এখানে বলা হয়েছে এ সংবিধানের বিধানাবলী সাপেক্ষে প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারকগণ বিচার পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বাধীন হবেন।
বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা বিষয়ক নীতিটিকে ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী এবং ১৯৭৯ সালে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে একধরণের পরিবর্তন করা হয়েছে। বাংলাদেশের বিচারকদের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য সংবিধানে চতুর্থ সংশোধনীতে ১১৬(ক) নামে একটি নতুন অনুচ্ছেদ সংযোজন করা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সংবিধানে চতুর্থ সংশোধনীর ১১৬(ক) নামে এ নতুন অনুচ্ছেদটি বিচার বিভাগীয় কর্মচারীগণকে বিচারকাজ পরিচালনার ক্ষেতে বিশেষ স্বাধীনতা প্রদান করা হয়েছে।
এতে বলা আছে, এ সংবিধানের বিধানাবলী সাপেক্ষে বিচারকাজে নিযুক্ত ব্যক্তিগণ এবং ম্যাজিস্ট্রেটগণ বিচারকাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বাধীন হবেন।
বিচারকাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ্যের বিচারকদের এ স্বাধীনতা শেষ পর্যন্ত ১৯৭৭ সালের ২৭ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট কর্তৃক তার দ্বিতীয় ঘোষণা (দশম সংশোধনী) জারীর মাধ্যমে বিশেষভাবে সংরক্ষিত হয়েছে।
বাংলাদেশর বিচারকদের স্বাধীনতা সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে এবং মূল সংবিধানের মাধ্যমেই বিশেষভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে।
২০০৫ সালে হাইকোর্ট পুরান ঢাকার মুন সিনেমা হলের মালিকানা নিয়ে দায়ের করা একটি রিট আবেদনের ওপর শুনানি শেষে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে রায় দেন। পরে প্রধান বিচারপতি তাফাজ্জাল ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কিছু পরিমার্জন ও সংশোধন সাপেক্ষে হাইকোর্টের দেয়া রায়ই বহাল রাখেন। এই রায়ের আলোকেই সংবিধানের পঞদশ সংশোধনী প্রণয়ন করা হলো।