ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

আপিল করতে পারবেন আদালত অবমাননায় অভিযুক্তরাও

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৫
আপিল করতে পারবেন আদালত অবমাননায় অভিযুক্তরাও

ঢাকা: আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন’১৯৭৩ এর দু’টি ধারায় আদালত অবমাননা বিষয়ক বিধানকে চ্যালেঞ্জ করে ১২ বিশিষ্ট নাগরিকের দায়ের করা একটি রিটের নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। ট্রাইব্যুনালে আদালত অবমাননায় অভিযুক্ত যে কেউ ইচ্ছা করলে আপিল বিভাগে আপিল করতে পারবেন বলে উল্লেখ করেছেন নিষ্পত্তির আদেশে আদালত।

 

বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার (২৯ এপ্রিল) শুনানি শেষে পযবেক্ষণসহ রিটটির নিষ্পত্তি করে দেন।

শুনানিতে অংশ নেন আবেদনকারীদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আখতার ইমাম ও রাশনা ইমাম এবং রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।  

আবেদনকারীদের আইনজীবী রাশনা ইমাম সাংবাদিকদের বলেন, ট্রাইব্যুনালে আদালত অবমাননায় দণ্ডপ্রাপ্ত যে কেউ চাইলে সম্পূর্ণ ন্যায়বিচারের স্বার্থে আপিল বিভাগে যেতে পারেন। তখন সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে আপিল বিভাগ দেখবেন আপিল চলবে কি-না।

ব্রিটিশ নাগরিক ও সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে ট্রাইব্যুনালের জরিমানার রায়ের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দেওয়ায় কেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে ২৩ বিশিষ্ট নাগরিকের বিরুদ্ধে গত ১ এপ্রিল রুল জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। বুধবারই তারা রুলের জবাবও দিয়েছেন। আগামী ৬ মে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে ট্রাইব্যুনালে।

অভিযুক্ত ২৩ জনের মধ্যে ১২ জন রিটটি দায়ের করেছিলেন হাইকোর্টে। তারা হচ্ছেন- নারী অধিকারকর্মী শিরিন পারভিন হক), সাংবাদিক ও লেখক আফসান চৌধুরী, আলী আহম্মেদ জিয়াউদ্দিন, আলোকচিত্রী ড. শহীদুল আলম, সঙ্গীতশিল্পী আনুশেহ আনাদিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ড. সি আর আবরার (রফিকুর আরবার), নারী গ্রন্থ প্রবর্তনার নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আক্তার, সংস্কৃতিকর্মী লুবনা মারিয়াম, মাসুদ খান, নৃ-বিজ্ঞান গবেষক রেহনুমা আহমেদ, অ্যাডভোকেট এ এ জিয়াউর রহমান ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

রিটে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন’১৯৭৩ এর ১১(৪) ও ২১ ধারা দু’টি ধারায় বর্ণিত আদালত অবমাননাকারীদের আপিলের অধিকার নিশ্চিত না করাকে কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না- সে মর্মে রুল চাওয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে ট্রাইব্যুনাল-২ এর আদালত অবমাননার মামলাটি স্থগিত করার আবেদন জানানো হয়েছিল।   

আরও যে ১১ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল আদালত অবমাননার অভিযোগে রুল জারি করেছেন, তারা হলেন- অধিকারকর্মী হানা শামস আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মোহাম্মাদ, অধিকারকর্মী মুক্তাশ্রী চাকমা সাথী, অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গবেষক ড. বিনা ডি কস্টা, সংস্কৃতিকর্মী লিসা গাজী, ড. জরিনা নাহার কবির, আলাল ও দুলাল ব্লগের সম্পাদক তীব্র আলী, লেখক শবনম নাদিয়া, লেখক মাহমুদ রহমান, নৃ-বিজ্ঞানী দেলোয়ার হোসেন ও চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসরিন সিরাজ এ্যানি।

ডেভিড বার্গম্যানকে ট্রাইব্যুনালের জরিমানার রায়ের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে ওই বিবৃতি দিয়েছিলেন ৫০ বিশিষ্ট ব্যক্তি। তাদের মধ্যে মানবাধিকার কর্মী ও নারীনেত্রী খুশি কবির পরে জানিয়েছিলেন, বিবৃতিটিতে তিনি স্বাক্ষর করেননি বা এর সঙ্গে তার সম্পর্ক নেই। বিবৃতি প্রকাশ করা প্রথম আলোও সেটি নিশ্চিত করে। এ কারণে খুশি কবিরকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে বাকি ৪৯ জনের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে না- সে মর্মে ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল।
 
পরে নি:শর্ত ক্ষমা চাওয়ায় চার দফায় ২৬ জনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। বাকি ২৩ জনের বিরুদ্ধে রুল জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।
 
ক্ষমা পাওয়া ২৬ বিশিষ্ট নাগরিক হলেন- লেখক তাহমিমা আনাম, ড. সেঁউতি সবুর, মানবাধিকার আইনজীবী ড. ফস্টিনা পেরেইরা, প্রকাশক মহিউদ্দিন আহমেদ, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক মো. নুর খান লিটন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষক ড. ফিরদৌস আজিম, যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেইট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের শিক্ষক  ড. আলী রিয়াজ, ড. পারভিন হাসান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. সামিয়া হক, তসলিম সারাহ শাহাবুদ্দিন, রেজাউর রহমান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী  ড. শাহদীন মালিক, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান, সুজনের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ, আমেনা মহসীন, পরিবেশ আন্দোলনকর্মী  সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক  ড. আসিফ নজরুল, বাংলাদেশ শিশু বিকাশ কেন্দ্রের ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেটর ডা. নায়লা জামান খান, ড. শাহনাজ হুদা, মানবাধিকারকর্মী জাকির হোসেন, সংগীত শিল্পী অরুপ রাহী, লেখক শাহীন ‍আখতার, অধিকারকর্মী ইলিরা দেওয়ান এবং দিনা এম সিদ্দিকী।

ট্রাইব্যুনালে নিষ্পত্তি হওয়া মামলার বিষয়ে ব্যক্তিগত ব্লগে আপত্তিকর মন্তব্যের মাধ্যমে আদালত অবমাননার দায়ে ব্রিটিশ নাগরিক সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে গত বছরের ২ ডিসেম্বর ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ৭ দিনের কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল-২। তাকে ওইদিন ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম চলা পর্যন্ত এজলাসকক্ষে বসে থাকতেও হয়। রায়ে ডেভিড বার্গম্যান কিভাবে বাংলাদেশে সাংবাদিকতা করছেন, তা খতিয়ে দেখতে সরকারকে নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

পরে জরিমানা পরিশোধ করা ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান বর্তমানে ইংরেজি দৈনিক দ্য নিউএজের বিশেষ প্রতিনিধি। তিনি সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেনের জামাতা।

এরপর গত বছরের ২০ ডিসেম্বর দৈনিক প্রথম আলোয় ‘বার্গম্যানের সাজায় ৫০ নাগরিকের উদ্বেগ’ একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়, যেখানে বলা হয়েছিল, এ রায়ের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশের ৫০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি একটি বিবৃতি দিয়েছেন।

এ প্রতিবেদন নজরে এলে আদালত অবমাননার মামলাটির সূচনা করেন ট্রাইব্যুনাল-২।

বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৫
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।