অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্জিত বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়ে অনুসন্ধান ও বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আমাদের দেশে আইন আছে। ২০১২ সালে প্রণীত এ আইনটি অপরাধ সম্পর্কিত বিষয়ে পারস্পরিক সহায়তা আইন নামে পরিচিত।
এ আইনের মাধ্যমে অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের কোনোভাবে সহায়তা দিলে বা আন্তঃরাষ্ট্রীয় সহায়তা প্রদান বা গ্রহণ করা হলে তাদেরও বিচার করা যাবে।
অপরাধ তদন্তে সহযোগিতা ও বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্যই এ আইন। অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য অন্য দেশের সঙ্গে সহায়তা আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে এ আইনের প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরি ।
এ আইন প্রয়োগোর আগে দেশে অপরাধ সম্পর্কিত পারস্পরিক সহায়তা প্রদান সংক্রান্ত কোনো আইন আমাদের ছিল না। বর্তমানে যেভাবে অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস ও আন্ত:রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের ব্যাপ্তি ঘটেছে তাতে এ সংকট থেকে মুক্তির জন্য আন্ত:রাষ্ট্রীয় সহায়তা অত্যন্ত জরুরি। সন্ত্রাসের বিশ্বায়ন ঘটেছে। সন্ত্রাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত ও ইন্ধনদাতা তথা আর্থিক পৃষ্ঠপোষকরা ছড়িয়ে আছে বিশ্বব্যাপী। তাই তাদেরকে আইনের আওতায় ও নজরদারির মধ্যে আনতে হলে আন্ত:রাষ্ট্রীয় সহায়তার ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি।
তাই অপরাধ বিষয়ে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সহায়তার প্রয়োগ ও বিস্তার সময়ের দাবী।
অপরাধীদের শনাক্ত করা, কোনো ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণ বা বক্তব্য গ্রহণ করা, বিদেশি আদালতের প্রসেস জারি করা ইত্যাদি বিষয়ে অপর রাষ্ট্রের সহায়তা প্রয়োজন। আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হলে অপর রাষ্ট্রের সহায়তা প্রয়োজন।
এছাড়া নানাভাবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত অপর দেশের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বা ব্যক্তির বিচার করার জন্যও আন্ত:রাষ্ট্রীয় সহায়তা প্রয়োজন।
এ আইনের ৮ ধারা অনুযায়ী কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের অপরাধ সম্পর্কিত বিষয়ে পারস্পরিক সহায়তার চুক্তি থাকুক বা না থাকুক, অপরাধ সংঘটনের বিষয়ে অনুসন্ধান, তদন্ত, বিচারিক বা অন্যান্য কার্যধারার বিষয়ে কোনো রাষ্ট্র সহায়তা চাইলে এবং উক্ত অপরাধ ঐ দেশের আইনে শাস্তিযোগ্য হইলে উক্ত বিষয়ে সর্বোত্তম পারষ্পরিক সহযোগিতা প্রদান করবে।
তবে এক্ষেত্রে একটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে, তা হচ্ছে, উক্ত অনুরোধকারী রাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশ সহায়তা চাইলেও ওই রাষ্ট্রকেও একইভাবে সহায়তা প্রদান করতে হবে। অর্থাৎ সহযোগিতাটি হবে পারস্পরিক। উভয় রাষ্ট্রই উভয় রাষ্ট্রকে সহায়তা করবে।
আইনের ৯ ধারায় আছে, যেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সহায়তার চুক্তি আছে, তাদের নির্ধারিত বিধি মোতাবেক কাজ করতে হবে। কিন্তু যেসব দেশের সঙ্গে চুক্তি নেই, তাদের কূটনৈতিক মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
১০ ধারায় আছে, সহায়তার অনুরোধটি উপযুক্ত না হলে, তা প্রত্যাখ্যান করা যেতে পারে। অর্থাৎ কোনো অনুরোধে সহায়তা প্রদান করা বাধ্যতামূলক না। রাষ্ট্র যদি মনে করে তবে তা প্রত্যাখ্যান করতে পারে।
একইসঙ্গে অনুরোধকারী রাষ্ট্রকে সহায়তা প্রদানের জন্য শর্তও আরোপ করা যেতে পারে। সে শর্ত পুরণ না হলে এ জাতীয় সহায়তা প্রদান স্থগিত রাখারও বিধান আছে।
১৯ ধারা মতে, বাংলাদেশে তল্লাশি বা আটক কাজ পরিচালনার জন্য কোনো বিদেশি রাষ্ট্র অনুরোধ করলে এবং আদালতের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হলে আদালত ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী তল্লাশি পরোয়ানা জারি করতে পারবে।
আবার ২০ ধারামতে, বাংলাদেশে আটক রয়েছে এমন কোনো ব্যক্তিকে কোনো বিদেশি রাষ্ট্র সাক্ষী হিসেবে হস্তান্তরের অনুরোধ করলে সেই ব্যক্তির সম্মতিতে কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে পারবে। সেক্ষেত্রে হস্তান্তর করা ব্যক্তি বিদেশি রাষ্ট্রের হেফাজতে থাকার মেয়াদকাল বাংলাদেশে আটক আছেন বলে গণ্য হবে। হেফাজতে থাকা অবস্থায় সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন, শাস্তি প্রদান বা তার স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করে এমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে না।
আইনের ২২ ধারায় আছে, অপরাধমূলক কাজের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ বা অপরাধে ব্যবহৃত উপকরণ বা সন্ত্রাসী কাজের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ আটক করার জন্য বিদেশি রাষ্ট্র অনুরোধ করলে তা আটক করতে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া করা যাবে।
আইনের ৪ অধ্যায়ের বিধান অনুযায়ী বাংলাদেশও অন্য রাষ্ট্রের কাছে সহায়তা চাইতে পারবে। তাই এ আইনের সঠিক ও যথাযথ প্রয়োগ হলে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসীদের বিচার আরো সহজ হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৬