জলবায়ু বিপর্যয়ের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে বিপজ্জনক অবস্থানে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য গঠন করা হয়েছে জলবায়ু তহবিল।
জলবায়ু পরিবর্তন কোনোভাবেই রোধ করা যাবেনা। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু এর নেতিবাচক প্রভাবকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। টেকসই প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও প্রয়োগ করার মাধ্যমে উন্নয়ন ও পরিবেশের মধ্যে একটি সমন্বয় সাধন সম্ভব। উন্নয়নকে আমরা এড়িয়ে চলতে পারবোন। কিন্তু পরিবেশে বিপর্যয়ের মাধ্যমে অর্জিত উন্নয়ন আদতে আমাদের জন্য সুফল বয়ে আনবেনা। পরিবেশের ক্ষতি না করে বা যথাসম্ভব কম করে উন্নয়ন করাই টেকসই উন্নয়ন।
টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিবশে ও উন্নয়নের মাঝে সমন্বয় সাধন করতে হবে। এজন্য সরকারি উদ্যোগ, বেসরকারি সংগঠন ও স্থানীয় সরকার প্রতিনিধির সমন্বয়ে জলবায়ু পরিবর্তনরোধ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। শুধু সরকারি বা বেসরকারি পযায়েই এই কার্যক্রম সীমাবদ্ধ থাকলে কাজ হবে না। প্রয়োজন জনসচেতনতা ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে যৌথ কার্যক্রম।
জলবায়ু পরিবতনের ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে সবাইকে। এর কোনো রাষ্ট্রভেদ নেই। তবে দক্ষিণ এশিয়া তথা ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর দরিদ্র জনগোষ্ঠীই বেশি এই ক্ষতির মুখোমুখি হবে। বৈশ্বিক পর্যায়েও এটি স্বীকৃত। ফলে কেবল সরকারি পর্যায়েও কার্যক্রম গ্রহণ করলেই চলবেনা। স্থানীয় পর্যায়ে জনগণের সম্পৃক্ততা জরুরি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সচেতনতা আবশ্যক। সচেতন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সচেতন স্থানীয় নাগরিক সৃষ্টি করতে পারেন। স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি তার এলাকার জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণ সম্পর্কে যদি জ্ঞান না রাখেন তবে তাকে দিয়ে ওই অঞ্চলের জলবায়ুর উন্নয়ন সম্ভব নয়।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোর জন্য ২০২০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল গঠনের চুক্তি হয়। কিন্তু আজ অবধি উন্নত দেশগুলো প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ দেয়নি। এর পর বিভিন্ন ফোরামে এ তহবিল নিয়ে কথা হয়েছে। উন্নত দেশগুলো বিভিন্ন অজুহাতে অর্থ বরাদ্দ দেয়নি। ফলে, আমাদের মতো চরম ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলো আরো বেশি ঝুকির মধ্যে পড়বে।
পরিবেশবান্ধব সবুজ শিল্পকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কারণ এ বিশাল জনগোষ্ঠীর জীবিকা সংস্থানের জন্য কৃষির পাশাপাশি শিল্পায়নকেও এগিয়ে নিতে হবে। কাজটি করতে হলে আমাদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতাও লাগবে। জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের সবার জন্যই এক বিশাল হুমকি। জলাবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য পর্যাপ্ত অভিযোজন কার্যক্রম গ্রহণ করা সময়ের দাবী। যথাসময়ে অভিযোজন কার্যক্রম গ্রহণ করা গেলে ভবিষ্যতে ভয়াবহতা আরো বাড়বে। এক পরিসংখ্যান বলছে, অভিযোজন কার্যক্রম গ্রহণ না করলে দেশের চার কোটিরও বেশি মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত ভয়াবহ বিপযয় সৃষ্টি করতে পারে। তাই ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি অভিযোজনকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৬