ঢাকা: অর্থপাচার (মানিলন্ডারিং) মামলায় তারেক রহমানের খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা আপিল আবেদনের শুনানি শুরু হবে আগামী ০৪ মে।
দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে বুধবার (০৬ এপ্রিল) এ দিন ধার্য করেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আমির হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এ মামলায় তারেক রহমান বিচারিক আদালতেও পলাতক ছিলেন। এখনো তিনি আইনের দৃষ্টিতে পলাতক। কারণ, আদালতের আদেশে নোটিশ জারি এবং পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরও তিনি হাজির হননি বা আদালতের আদেশ প্রতিপালন করেননি।
তিনি জানান, আদালত শুনানির জন্য ৪ মে দিন ধার্য করেছেন। ওইদিন দুপুর দুইটায় এ মামলার শুনানি শুরু হবে। সঙ্গে সাজাপ্রাপ্ত গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের আপিলেরও শুনানি হবে।
অর্থপাচার মামলায় তারেক রহমানের খালাস পাওয়ার রায়ের বিরুদ্ধে দুদকের করা আপিলের পর ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। কিন্তু তিনি আজ পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করেননি।
এরপর মামলাটি দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কার্যতালিকায় এলে গত ১২ জানুয়ারি ফের বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
এরপর তারেক রহমানকে আত্মসমর্পণ ও আপিলের বিষয়ে অবহিত করতে গত ২০ ও ২১ জানুয়ারি দু’টি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেন হাইকোর্ট বিভাগ। চার্জশিটে থাকা দুই ঠিকানায় (লন্ডন ও ঢাকা) সমনের নোটিশও পাঠিয়েছেন বিচারিক আদালত।
২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস দিয়ে তার বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে অর্থপাচার মামলায় ৭ বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষজজ আদালত।
রায়ে কারাদণ্ডের পাশাপাশি মামুনকে ৪০ কোটি টাকা জরিমানাও করা হয়। পাচার করা ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৬১৩ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করারও নির্দেশ দেন আদালত।
এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর আপিল করে দুদক। ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি এ আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে তারেক রহমানকে বিচারিক আদালতে আত্মসমপর্ণের আদেশ দেন বিচারপতি নিজামুল হক ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
এরপর গত ০৩ জানুয়ারি হাইকোর্টে শুনানির দিন ধার্যের আবেদন জানায় দুদক। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ১২ জানুয়ারি তারেকের বিরুদ্ধে সমন নোটিশ জারির আদেশ দেন।
এরপর বিভিন্ন সময়ে আদালতের আদেশে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে নোটিশ জারি করা হয়েছে। এরপরও তিনি আদালতের আদেশ প্রতিপালন করেননি।
২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় এ মামলাটি করে দুদক। এরপর ২০১০ সালের ৬ জুলাই তারেক রহমান ও গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করা হয়।
২০১১ সালের ০৮ আগস্ট এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন আদালত।
২০১১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। মামলাটিতে ১৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়, যাদের মধ্যে চার্জশিটের বাইরে সাক্ষী হিসেবে ছিলেন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) এজেন্ট ডেবরা লেপরোভেট।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, টঙ্গীতে প্রস্তাবিত ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য নির্মাণ কন্সট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের মালিক খাদিজা ইসলামের কাছ থেকে গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৮৪৩ টাকা নেন। সিঙ্গাপুরে এ টাকা লেনদেন হয়।
এরপর মামুন ওই অর্থ সিঙ্গাপুরের ক্যাপিটাল স্ট্রিটের সিটি ব্যাংক এনএতে তার নামের ব্যাংক হিসাবে জমা করেন। এ টাকার মধ্যে তারেক রহমান তিন কোটি ৭৮ লাখ টাকা খরচ করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১৬
ইএস/এএসআর