ঢাকা: ইঁদুর মারা বিষ-তেলাপোকা মারা বিষ থেকে আইনের বই-পুস্তক, সাদা শার্ট, কোট-গাউন, চা-বিস্কুট, কাটা পেঁপে-শশা-আনারস, প্রেসার-ডায়াবেটিস মাপার স্বাস্থ্যকর্মী, মোবাইল কোম্পানির সিম নিবন্ধন কী নেই!
আর এ সবই পাবেন মাত্র একটি চত্বরেই। সেটি হলো ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত চত্বর।
গুণে দেখা গেছে, জুতা পলিশ, চায়ের দোকান, ফল বিক্রেতা, শার্ট-কোট-গাউন বিক্রেতা, বিভিন্ন ফলের দোকান, ঝাল মুড়ি, বাদাম, বিড়ি-সিগারেট বিক্রেতাসহ ৬১ জন হকার ঢাকার মহানগর দায়রা আদালত চত্বরে কোনো বাধা ছাড়াই অবাধে বিচরণ করছেন।
তাদের অনেকেই স্থায়ী আসন গেঁড়ে বসেছেন। আদালত চত্বরেই থাকে তাদের অস্থায়ী দোকানপাট। আর এ কারণেই আদালতের বিচারক, আসামি, বিচারপ্রার্থী মানুষদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকার পুরাতন জেলা ও দায়রা জজ এবং ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে প্রতিদিন হাজার হাজার বিচারপ্রার্থী মানুষের আনাগোনা। আদালত চত্বরে যত্রতত্র হকারের দোকান ও আনাগোনা। এর মাঝেই প্রিজন ভ্যান থেকে নামানো হচ্ছে চাঞ্চল্যকর মামলার আসামি, বিভিন্ন জঙ্গি হামলা মামলার আসামি, ভিআইপি আসামিদের। অনেকটা পথ হাটিয়ে তাদের নিতে হয় মহানগর দায়রা আদালতের হাজতখানায়।
এছাড়াও স্পর্শকাতর মামলার বিচারকসহ কোনো বিচারকের গাড়িই আদালত ভবনের ভেতরে ঢুকে তাদের নামানোর ব্যবস্থা নেই। ভবনের কাছাকাছি চত্বরে তাদের নেমে ভবনে ঢুকতে হয়।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের আইনজীবী নেতা অ্যাডভোকেট কাজী নজিবউল্লাহ হিরু বাংলানিউজকে বলেন, হকারের সংখ্যাধিক্য ও বাধাহীন প্রবেশ আদালতের বিচারক, আসামি ও বিচারপ্রার্থী মানুষদের নিরাপত্তার বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। বেশ কিছুদিন আগে শীর্ষ সন্ত্রাসী মুরগি মিলনের হত্যাকারীরা আদালতে হকারের ছদ্মবেশেই ছিলেন। কিছুদিন আগে এক আইনজীবীর ছেলেকেও আদালতে চত্বরে হত্যা করা হয়েছে। খুনিরা আদালতে হকারের বেশেই এসেছিলেন। তাই হকারদের নিয়ন্ত্রণ করা না হলে সন্ত্রাসীরা সে সুযোগটি নিয়ে নিরাপত্তার বিঘ্ন ঘটাতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, সব সময় প্রয়োজন হয় বলে কিছু জুতা পলিশওয়ালাদের ছবি ও জীবন-বৃত্তান্ত নিয়ে তাদের পরিচয়পত্র দিয়ে আদালত চত্বরে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। অন্যথায় সুযোগ নিতে পারেন দুস্কৃতকারীরা। যেকোনো সময় ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা।
আদালতে কর্মরত পুলিশের ডিসি (প্রসিকিউশন) ড. এএইচএম কামরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, কোর্ট পুলিশের কাছে অস্ত্র থাকে না। তারা নিরস্ত্র পুলিশ। এজলাসে বিচারক ও বিচারপ্রার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়া তাদের দায়িত্ব। এজলাসের বাইরে কোনো বিষয়ে তার হস্তক্ষেপ করতে পারেন না।
আদালতের নিরাপত্তার বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ওসি আবুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, আদালতের নিরাপত্তার বিষয়টিকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকি। হকারদের সময় সময় উচ্ছেদও করি। তারপরও পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিছু কিছু হকার সেখানে থাকতে পারেন। আমরা এ বিষয়ে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেবো।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৬
এমআই/এএসআর