ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যার দায়ে ছয়জনের ফাঁসি বহাল

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২২ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৬
আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যার দায়ে ছয়জনের ফাঁসি বহাল

ঢাকা: গাজীপুরের জনপ্রিয় শ্রমিক নেতা ও আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যার দায়ে বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকারসহ ছয়জনের ফাঁসির আদেশ বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।

বিচারিক আদালতে দণ্ড পাওয়া জীবিত ২৬ আসামির মধ্যে ৮ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ এবং ১১ জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

আগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত একজন পলাতক থাকায় তার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি আদালত।  

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ৮ জনের মধ্যে ৭ জনকে বিচারিক আদালতের দেওয়া ফাঁসির সাজা কমেছে এবং বাকি একজনের আগের সাজাই বহাল রয়েছে।     

মারা যাওয়া দুই আসামির আপিলের নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন আদালত।  

আর মামলাটির মোট ৩০ আসামির মধ্যে ২ জন বিচারিক আদালতেই খালাস পেয়েছিলেন।

সাজা ও খালাসপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে ১৭ জন কারাগারে, বাকি ৯ জন পলাতক রয়েছেন। অন্য কোনো মামলা না থাকলে খালাসপ্রাপ্ত  যারা কারাগারে আছেন, তাদেরকে মুক্তি দিতে বলেছেন আদালত।

বুধবার (১৫ জুন) দুপুরে আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যার ঘটনায় ডেথ রেফারেন্স ও আপিল মামলার এ রায় ঘোষণা করেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা ছয়জন হলেন- নুরুল ইসলাম সরকার, নুরুল ইসলাম দিপু (পলাতক), মাহবুবুর রহমান মাহবুব, শহীদুল ইসলাম শিপু, হাফিজ ওরফে কানা হাফিজ এবং সোহাগ ওরফে সরু।    

মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাতজন হলেন- মোহাম্মদ আলী, সৈয়দ আহমেদ হোসেন মজনু (পলাতক), আনোয়ার হোসেন ওরফে আনু (পলাতক), রতন মিয়া ওরফে বড় রতন, ছোট জাহাঙ্গীর (পলাতক), আবু সালাম ওরফে সালাম ও মশিউর রহমান ওরফে মশু (পলাতক)। যাবজ্জীবন বহাল থাকা আসামি হলেন নুরুল আমিন।

ফাঁসির আদেশ থেকে খালাস পাওয়া সাতজন হলেন- আমির হোসেন, জাহাঙ্গীর ওরফে বড় জাহাঙ্গীর, ফয়সাল (পলাতক), লোকমান হোসেন ওরফে বুলু, রনি মিয়া ওরফে রনি ফকির (পলাতক),  খোকন (পলাতক) ও দুলাল মিয়া। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড থেকে খালাস পাওয়া অন্য চারজন হলেন- রাকিব উদ্দিন সরকার পাপ্পু, আইয়ুব আলী, জাহাঙ্গীর ও মনির।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অহিদুল ইসলাম টিপু পলাতক থাকায় তার সাজার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি আদালত। ।

বিচারিক আদালতে ফাঁসির দণ্ডাদেশ পাওয়ার পর মারা যাওয়ায়  আল আমিন ও রতন ওরফে ছোট রতনের আপিলের নিষ্পত্তি করে দেন হাইকোর্ট।

৩০ আসামির বাকি দু’জন কবির হোসেন ও আবু হায়দার ওরফে মিরপুরইয়া বাবু বিচারিক আদালত থেকেই খালাস পেয়েছিলেন।

উচ্চ আদালতে ব্যতিক্রম হিসেবে এ মামলার রায় দেওয়া হয় বাংলায়। রায়ের প্রথম অংশ পড়েন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। এরপর সাজার অংশ পড়েন বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ, যেখানে একমত পোষণ করেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।

এ মামলায় নূরুল ইসলাম সরকারসহ ২২ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ ও ২ জনকে খালাস দিয়েছিলেন গাজীপুরের বিচারিক আদালত। দণ্ডপ্রাপ্ত ২৮ জনের মধ্যে ২ জন মারা যাওয়ায় তাদের আপিলের নিষ্পত্তি করে ২৬ জনের বিষয়ে রায় দেন হাইকোর্ট।  

রায় শুনতে হাইকোর্টে এসে এজলাসকক্ষে যান নিহত আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে জাহিদ আহসান রাসেল এমপি। আর আদালত চত্বরে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী। আহসান উল্লাহ মাস্টার ও জাহিদ আহসান রাসেলের এলাকা থেকে আসেন তারা।  

২০০৪ সালের ৭ মে গাজীপুরের টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক জনসভায় আহসান উল্লাহ মাস্টারকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ঘটনার পরদিন আহসান উল্লাহ মাস্টারের ভাই মতিউর রহমান টঙ্গী থানায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০/১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

এ মামলায় ওই বছরের ১০ জুলাই ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। একই বছরের ২৮ অক্টোবর ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। রাষ্ট্রপক্ষে ৩৪ জন এবং আসামিপক্ষে দু’জন সাক্ষ্য দেন।

এরপর বিচার শেষে ২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল বিচারিক আদালত নূরুল ইসলাম সরকারসহ ২২ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ ও ২ জনকে খালাস দেন।

পরে বিচারিক আদালতের রায়ের বিষয়ে হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও জেল আপিল হয়।

গত ২১ জানুয়ারি থেকে এ আপিল মামলার শুনানি শুরু হয়।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রোনা নাহরীন ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মনজু নাজনিন।

আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ কয়েকজন আইনজীবী।

গত ০৮ জুন চূড়ান্ত শুনানি শেষে ১৫ জুন রায়ের এ দিন ধার্য করা হয়।

১৯৫০ সালের ৯ নভেম্বর গাজীপুরে জন্মগ্রহণ করেন আহসান উল্লাহ মাস্টার। ১৯৬৫ সালে এসএসসি পাস করে তৎকালীন কায়েদে আযম কলেজে (বর্তমান শহীদ সোহরাওয়ার্দী সরকারি কলেজ) একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন তিনি। ১৯৭০ সালে ডিগ্রি পাস করার পর তিনি টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া হাইস্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।
 
এর আগে ছয় দফা ও ১১ দফাসহ বাঙালির মুক্তির আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন তিনি।
 
১৯৮৩ ও ১৯৮৮ সালে দু’বার পুবাইল ইউপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আহসান উল্লাহ মাস্টার। পরে ১৯৯০ সালে গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি।
 
জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

আহসান উল্লাহ মাস্টার গাজীপুর-২ আসন থেকে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় ২০০৪ সালের ৭ মে সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে নিহত হন আহসান উল্লাহ মাস্টার।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২১ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৬
ইএস/এএসআর

** আপিল মামলার রায় দেওয়া হচ্ছে বাংলায়
** হাইকোর্টে এমপি রাসেল, বাইরে আ’লীগের হাজারো নেতাকর্মী
** হাইকোর্টে আপিল মামলার রায় দুপুরে

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।