ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে অংশ নিলে যাবজ্জীবন

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০১ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৬
রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে অংশ নিলে যাবজ্জীবন

ঢাকা: ইলেকট্রনিক মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডে অংশ নিলে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রেখে নতুন একটি আইনের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার (২২ আগস্ট) সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৬’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।


 
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের জানান, আইনে ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠান এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সাইবার অপরাধের সংজ্ঞা এবং শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
 
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৪, ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ ধারা এ আইনে স্থানান্তর করা হয়েছে।
 
বিষয়গুলো পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষণ করে আইনমন্ত্রীকে চূড়ান্ত করতে বলেছে মন্ত্রিসভা, বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
 
নতুন আইনে সাইবার ক্রাইমকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
 
রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধের জন্য আইনের ১৫ এর ২, ৩, ৪ ও ৫ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি ইলেকট্রনিক মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা আদালত কর্তৃক মীমাংসিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বিষয়াবলী বা জাতির পিতার বিরুদ্ধে যেকোনো প্রকার প্রচার, প্রোপাগাণ্ডা বা এতে মদদ দেন তাহলে তার শাস্তি হবে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড, সর্বনিম্ন ৩ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।
 
তিনি বলেন, অতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোর ব্যাপারে অপরাধ করলে সর্বনিম্ন ২ বছর এবং সর্বোচ্চ ১৪ বছর কারাদণ্ড এবং এক কোটি টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
 
‘কোনো ব্যক্তি অতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো- যেমন: বিমান পরিচালনার জন্য যে সাইবার ম্যানেজমেন্ট আছে, এটার মধ্যে কেউ হামলা বা হ্যাক করে তাহলে এ দণ্ড কার্যকর হবে। ’
 
ডিজিটাল বা সাইবার সন্ত্রাসরোধ করার জন্য সর্বোচ্চ ১৪ বছর এবং সর্বনিম্ন ২ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

 

তিনি বলেন, বাংলাদেশের অখণ্ডতা ও সংহতি ইফেক্ট করে এমন কোনো বিষয়; অন্য কোনো রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত বা সম্পদ ক্ষতি বা বিনষ্ট করে- এমন কোনো বিষয়; সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত, সহায়তা বা প্ররোচিত করা; কোনো সশস্ত্র বা বৈরী পরিস্থিতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেনি এমন কেনো বেসামরিক ব্যক্তি বা অন্য কোনো দেশ বা প্রতিষ্ঠানের কোনো কম্পিউটার, প্রোগ্রামিং ইত্যাদি নেটওয়ার্কের মারাত্মক ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে কোনো কিছু করা-এগুলো সবই সাইবার সন্ত্রাস।
 
কম্পিউটার, মোবাইল এবং ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে অপরাধ করলেও রয়েছে শাস্তি।
 
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব জানান, কম্পিউটার, মোবাইল এবং ডিজিটাল ডিভাইস সংক্রান্ত জালিয়াতি করলে শাস্তি হবে সর্বনিম্ন ১ বছর ও সর্বোচ্চ ৫ বছর এবং অর্থদণ্ড ৩ লাখ টাকা বা উভয় দণ্ড।
 
কম্পিউটার ও মোবাইল সংক্রান্ত প্রতারণা বা হুমকি প্রদানের শাস্তি সর্বনিম্ন ১ বছর ও সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড ৩ লাখ টাকা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
 
প্রতারণা বা প্রতারণার উদ্দেশ্যে অপর কোনো ব্যক্তির পরিচয় ধারণ করে বা অন্য কোনো ব্যক্তির তথ্য নিজের দেখালে সর্বনিম্ন ১ বছর ও সর্বোচ্চ ৫ বছর জেল এবং অর্থদণ্ড হবে ৩ লাখ টাকা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
 
সচিব জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করা হবে। এর প্রধান হবেন সরকার নির্ধারিত মহাপরিচালক। আইনে জরুরি পরিস্থিতিতে মহাপরিচালকের নির্দেশ প্রদানের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

জরুরি পরিস্থিতিতে মহাপরিচালক সরকারের কোনো আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে কোনো কম্পিউটার রিসোর্সের মাধ্যমে কোনো তথ্য সম্প্রচারে দ্রুত বাধা দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করতে পারবেন।
 
‘সম্ভাব্য লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে মহাপরিচালকের নিষেধাজ্ঞামূলক আদেশ দেওয়ার ক্ষমতা থাকবে। কোনো ব্যক্তি এমন কাজ করতে উদ্যোগী হলে বা হয়েছেন যার ফলে এ আইন বা বিধি-প্রবিধান বা লাইসেন্সের কোনো বিধান বা শর্ত বা মহাপরিচালকের কোনো শর্ত লঙ্ঘিত হচ্ছে, তাহলে মহাপরিচালক পর্যবেক্ষণ করে তা বন্ধ করে দিতে পারবেন। এটা না মানলে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হবে। ’
 
গোপনীয়তা লঙ্ঘনের জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে।
 
কোনো ব্যক্তি অসৎ উদ্দেশ্যে ইচ্ছাক‍ৃত বা জ্ঞাতসারে অন্য কোনো ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া তার ব্যক্তিগত ছবি তুলে এবং প্রকাশ করে বা প্রেরণ করে বা বিকৃত করে তাহলে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। এর শাস্তি হবে ২ বছরের কারাদণ্ড বা ২ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড।
 
পর্নোগ্রাফির জন্যও শাস্তি সর্বনিম্ন ২ বছর এবং সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড, সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
 
মানহানি, মিথ্যা, অশ্লীল বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের জন্য কোনো ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে অপরাধ করলে শাস্তি হবে সর্বোচ্চ ২ বছর ও সর্বনিম্ন ২ মাস জেল অথবা সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।
 
শত্রুতা সৃষ্টি বা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর মতো কাজ ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে অপরাধ করলে শাস্তি সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড, কমপক্ষে ১ বছরের কারাদণ্ড এবং ৭ লাখ অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।
 
কম্পিউটার ব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধ সংঘটনের সহায়তা করলে মূল অপরাধী যে দণ্ড তিনিও সেই একই দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। কোম্পানির ক্ষেত্রে ব্যক্তির পর্যায়ের দণ্ড কার্যকর হবে। তবে নেটওয়ার্ক সেবা প্রদানকারী তৃতীয় কোনো পক্ষ অপরাধে জড়িত না থাকার প্রমাণ করতে পারলে তাহলে তারা শাস্তি পাবেন না।
 
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে কয়েকটি ধারায় শাস্তির বিধান থাকলেও তা অর্পযাপ্ত। পূর্ণাঙ্গ আইন পৃথিবীর অনেক দেশে আছে, পার্শ্বর্তী দেশ ভারতেও আছে, সেটার আদলে এ আইন করা হয়েছে।
 
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আইসিটি আইনের ৫৪, ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ ধারা স্থানন্তর করে এই আইনে যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে আইসিটি আইনের মামলাগুলো সংরক্ষিত থাকবে, আগের আইনে চলবে।
 
মন্ত্রিসভায় আইনের খসড়া প্রাথমিকভাবে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হলেও আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আইনমন্ত্রীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব। তিনি বলেন, আইনমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে বৈঠক করে আর একটু পরিশিলিত করবেন।
 
এই আইনে অনেকগুলো ক্রস-কাটিং বিষয় জড়িত উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব বলেন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, তথ্য মন্ত্রণালয়সহ আরও অনেকগুলো মন্ত্রণালয়ের ওভারলেপিং আছে। এজন্য আইনটি পরিমার্জনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।  
 
এছাড়া শাস্তিগুলোর বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে ঠিক করার জন্য আইনমন্ত্রীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কোনটা বেশি করা বা কমানোর প্রয়োজন করা।
 
**সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গাছ কাটায় নিষেধাজ্ঞা বাড়ল সাত বছর
**হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানদের প্রয়োজন অনুযায়ী অনুদান দিতে আইন
**নতুন আবহাওয়া আইনে যুক্ত ভূমিকম্প সংকেত

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৬/আপডেট: ১৬০১
এমআইএইচ/আরএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।