ঢাকা: রাজধানীতে বাড়িওয়ালাদের মাধ্যমে ভাড়াটিয়ার তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে পুলিশের বিধিমালার বৈধতা চ্যালেঞ্জ নিয়ে জারি করা রুল পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করেছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশিষ রঞ্জন দাসের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ২৭ মার্চ বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম সাহিদুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেন।
রুলে ‘ঢাকা মহানগর পুলিশ (নিয়ন্ত্রণ ও নির্দেশনা) বিধিমালা-২০০৬’ এর ৪ এর খ ধারার একটি অংশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চান আদালত। এ বিধিমালা দেখিয়ে ঢাকা মহানগর এলাকায় সব বাড়িওয়ালা-ভাড়াটিয়ার তথ্য সংগ্রহ করছে পুলিশ।
গত ০৮ আগস্ট এ বিষয়ে শুনানি শেষ হয়। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।
ভাড়াটিয়ার তথ্য চাওয়া নিয়ে একটি রিট এর আগে খারিজ হয়েছিলো। পরে আরেকটি বেঞ্চ রুল দেন। একই বিষয়ে দুই রকম আদেশ চলতে পারে না। এ কারণে রাষ্ট্রপক্ষ সে রুলের আদেশ বাতিল চেয়ে আবেদন করেন। পরে আপিল বিভাগ ২৭ মার্চের রুলটি নিষ্পত্তির জন্য বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।
আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তার সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক টুটুল। রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রফিকুর রহমান ও ব্যারিস্টার অনীক আর হক।
রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী অনীক আর হক বলেন, বাড়িওয়ালা-ভাড়াটিয়ার তথ্য সংগ্রহের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে দায়ের হওয়া একটি রিট খারিজ হয়েছিলো। ওই রিটের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ ডিএমপি’র ওই বিধিমালা অধীনে তথ্য সংগ্রহ করছেন বলে উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘ঢাকা মহানগর পুলিশ (নিয়ন্ত্রণ ও নির্দেশনা) বিধিমালা-২০০৬’ এর ৪ এর খ ধারায় বলা হয়েছে, ‘মহানগরীর কোনো এলাকাতে কোনো অপরাধ ঘটলে পুলিশ দ্রুত যেকোনো পদক্ষেপ নিতে পারে’। আমরা এ উপ ধারার ‘যেকোনো’ শব্দটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করি। এ বিধান বলে বাড়ির মালিকের মাধ্যমে ভাড়াটিয়ার ব্যক্তিগত যাবতীয় তথ্য চেয়ে ফরম বিলি করছে পুলিশ। কিন্তু এ বিধানের ক্ষমতা বলে একজন ব্যক্তির সব ব্যক্তিগত তথ্য পুলিশ চাইতে পারে না। কারণ, ওই ধারায় বলা হয়েছে, কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে পুলিশ দ্রুত যেকোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে। ব্যক্তিগত তথ্য নেওয়ায় নাগরিকের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, যা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক'।
হাইকোর্টে রিট আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী আইনুন নাহার সিদ্দিকা, এস এম এনামুল হক ও অমিত দাশগুপ্ত।
গত ১৩ মার্চ ঢাকা মহানগর এলাকায় নাগরিকদের তথ্যভাণ্ডার তৈরিতে পুলিশের পক্ষ থেকে সব বাড়িওয়ালা-ভাড়াটিয়ার তথ্য সংগ্রহে বন্ধে করা অন্য একটি রিট আবেদন খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। গত ০৩ মার্চ ওই রিটটি দায়ের করেছিলেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বিট পুলিশিং নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সংবাদমাধ্যম কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ১৫ মার্চের মধ্যে নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। রাজধানীর সব বাসায় ফরম পাঠানো হয়েছে। পুলিশ ইতোমধ্যে অনেক ফরম ফেরত পেয়েছে, অনেক ফরম পায়নি। যা ১৫ মার্চের মধ্যে শেষ হবে। পরে অবশ্য আরো সময় বাড়ানো হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৬
ইএস/এএসআর