ঢাকা: আদালতের আদেশ অনুযায়ী ব্যাখ্যা না দেওয়ায় আইন, লেজিসলেটিভ ও ড্রাফটিং এবং সমাজকল্যাণ সচিবের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
সোমবার (৩১ অক্টোবর) বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ তিন সপ্তাহের এ রুল জারি করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ একেএম মনিরুজ্জামান কবির ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. শহীদুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।
সম্প্রতি ঢাকা, কক্সবাজার ও রংপুরে শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে দায়েরকৃত পৃথক চারটি মামলার আসামিরা হাইকোর্টে জামিনের আবেদন জানান। এসব মামলার সব আসামি প্রাপ্তবয়ষ্ক। শিশু আদালত এসব প্রাপ্তবয়ষ্ক আসামিদের জামিনের আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ করায় হাইকোর্ট রুল জারি করেন।
একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারকদেরকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। হাইকোর্টের নির্দেশ অনুসারে চারটি আদালতের বিচারকরা নিজ নিজ ব্যাখ্যা লিখিতভাবে আদালতে দাখিল করেন।
ব্যাখ্যায় ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘দ্য চিলড্রেন অ্যাক্ট, ১৯৭৪’ এর বিধান অনুযায়ী যেসব মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা ভিকটিম শিশু ওইসব মামলা বিচারের জন্য কিশোর আদালতে প্রেরণ করা হতো। আর যেসব মামলার কেবল অভিযুক্ত ব্যক্তি শিশু, ওই সব মামলার অপরাধ আমলে নেওয়ার পর মামলাটি বিচারের জন্য কিশোর আদালতে পাঠানো হতো। কিন্তু ‘শিশু আইন, ২০১৩’ এর ১৭(১) ধারার পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে অস্পষ্টতা দেখা দিয়েছে।
কারণ ওই ধারায় বলা হয়েছে, ‘আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত শিশু বা আইনের সংস্পর্শে আসা শিশু কোনো মামলায় জড়িত থাকলে যেকোনো আইনের অধীনেই হোক না কেন, ওই মামলা বিচারের এখতিয়ার কেবল শিশু আদালতের থাকবে’।
তবে আইনের ধারা ১৮, দফা-(ক) এ শিশু আদালতকে ফৌজদারি কার্যবিধির দায়রা আদালতের ক্ষমতা দেওয়া হলেও ওই আইনে শিশু আদালতকে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০’ এর কোনো ধারার অপরাধ আমলে নেওয়া কিংবা বিচারের সুনির্দিষ্ট এখতিয়ার দেওয়া হয়নি। শিশু আইনের ৩৩(১) ধারা অনুসারে শিশু আদালত অভিযুক্ত কোনো শিশুকে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিতে পারবেন না। আইনের ৩৪(১) ধারা অনুযায়ী কোনো শিশু মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় অপরাধে দোষী সাব্যস্ত প্রমাণিত হলেও তাকে অনুর্ধ্ব ১০ বছর এবং নিম্নে ৩ বছর মেয়াদে আটকাদেশ দেওয়ার বিধান রয়েছে।
কিন্তু এ আইনে অপরাধের শিকার বা সাক্ষী শিশু হলে এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রাপ্তবয়ষ্ক হলে তার সাজার বিধান সন্নিবেশিত করা হয়নি। ফলে অভিযুক্ত শিশু অপরাধীর অপরাধ প্রমাণিত হলে শিশু আদালতের বিচারক সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ড বা আটকাদেশ প্রদানের ক্ষমতা থাকলেও ভিকটিম বা সাক্ষী শিশু হলে এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রাপ্তবয়ষ্ক হলে ওই অপরাধীর সাজা কি হবে তা এই শিশু আইনে অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি।
ব্যাখ্যায় আরো বলা হয়, ‘শিশু আইনের অস্পষ্টতা বা সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় নিয়ে ন্যায়বিচারের স্বার্থে এ বিষয়ে হাইকোর্টের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা চাচ্ছি। এ নির্দেশনা পেলে ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সকল মামলায় তা অবশ্যই অনুসরণ করবো’।
রংপুরের ১ম আদালতের অতিরিক্ত দায়রা জজ ও শিশু আদলতের বিচারক মো. রোকনুজ্জামান ব্যাখ্যায় বলেছেন, যেকোনো মামলায় ভিকটিম শিশু এবং আসামি প্রাপ্তবয়ষ্ক হলে আসামির জামিন এবং বিচার প্রক্রিয়ার বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে ভিন্ন কোনো বিধান শিশু আইনে উল্লেখ করা হয়নি। মামলা দায়ের ও বিচারের ক্ষেত্রে ভিকটিম শিশু এবং আসামি প্রাপ্তবয়ষ্ক হলে ওই আসামির জামিন বা পুলিশ হেফাজতে গ্রহণের বিষয়ে শুনানি এবং বিচার পদ্ধতি কোন আদালতে কিভাবে অনুষ্ঠিত হবে সে বিষয়েও শিশু আইনে সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই। ফলে শিশু আইনের (৪), ১৭(১) এবং ৫২ ধারার উল্লেখিত অন্তনির্হিত বিধান অনুসারে জামিনের দরখাস্তটি গ্রহণ ও শুনানি করা হয়। তবে এ বিষয়ে মূল আইনে অস্পষ্টতা রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। ফলে এ বিষয়ে হাইকোর্ট কোনো নির্দেশনা প্রদান করলে বিদ্যমান অস্পষ্টতা দূর হতে পারে।
এ ব্যাখ্যা আসার পর গত ৯ আগস্ট হাইকোর্ট রায়ের জন্য ১৪ আগস্ট দিন ধার্য করেছিলেন। কিন্তু আদালত রায় ঘোষণা না করে এ বিষয়ে সচিবদের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন। আদালত বলেন, এ আইন প্রণয়নের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের ব্যাখ্যা প্রয়োজন।
কিন্তু আদালতের ওই আদেশের পর সচিবরা ব্যাখ্যা না দেওয়ায় সোমবার আদালত রুল জারি করেছেন বলে জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ একেএম মনিরুজ্জামান কবির।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১,২০১৬/আপডেট: ১৫৩০ ঘণ্টা
ইএস/জেডএস/এএসআর