ঢাকা: আইন অনুযায়ী কোনো আসামির নথি এক বছরের বেশি সংরক্ষণ না করায় সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর কারাবাসকালীন সময়ে হিস্ট্রি কার্ড, রেয়াত কার্ড এবং রক্তদান সংক্রান্ত কোনো নথি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বৃহস্পতিবার (০৩ নভেম্বর) বিচারপতি মো. এমদাদুল হক ও বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসানের বেঞ্চে উপস্থাপিত কারামহাপরিদর্শকের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আমিনুর রহমান চৌধুরী টিকু প্রতিবেদনটিআদালতে উপস্থাপন করেন। পরে এ প্রতিবেদনের বিষয়ে শুনানি করেন নিজাম হাজারীর আইনজীবী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ও নূরুল ইসলাম সুজন এবং রিটকারীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট কামরুল হক সিদ্দিকী।
পরবর্তী শুনানির জন্য ১৪ নভেম্বর দিন ধার্য করেন আদালত।
এর আগে ৩০ আগস্ট ফেনী-২ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর পদ থাকবে কি-না সে বিষয়ে রায় দিতে শুরু করেছিলেন হাইকোর্ট।
কিন্তু এর মধ্যে কারাগারে রক্তদানের বিষয়ে কতোদিন রেয়াত পেয়েছিলেন সে প্রশ্নওঠায় আদালত এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন। সে নির্দেশ অনুসারে বৃহস্পতিবার প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৫৯ সালের ২১ মে পূর্ব পাকিস্তান সরকারের জারি করা স্মারকের আলোকে এবং পরবর্তীকালে ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ সরকারের এক মেমোর ভিত্তিতে রক্তদানের বিনিময়ে বিশেষ রেয়াত সুবিধা প্রদানের নিয়ম বহাল ছিলো। এ কার্যক্রম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা আধুনিক হাসপাতাল সন্ধানী ব্লাড ব্যাংক ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মাধ্যমে পরিচালিত হতো। এ সুবিধার আওতায় বন্দিরা রক্তদান করে বিশেষ রেয়াতপ্রাপ্ত হতেন। যা পরে ২০০৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি এক সার্কুলারের মাধ্যমে রহিত করা হয়। রক্তদানের বিনিময়ে আসামির বিশেষ রেয়াত সুবিধার বিস্তারিত কারাবিধি ৭৬৭ এর বিধান মোতাবেক বন্দির রেয়াত কার্ড ও হিস্ট্রি টিকেট রেয়াত প্রদানের কারণ ও প্রাপ্ত রেয়াতের পরিমাণ উল্লেখ থাকত।
উল্লেখ্য, রেয়াত কার্ড ও হিস্ট্রি টিকেট সংরক্ষণের মেয়াদ কারাবিধির ৭৮০(৮) ও ৫৫৮ এর বিধান মোতাবেক এক বছর। ফলে চট্টগ্রাম কারাগারে এ সংক্রান্ত তথ্য না পেয়ে কারা কর্তৃপক্ষ সন্ধানীর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ইউনিটে যোগাযোগ করে। সন্ধানী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এক চিঠির মাধ্যমে জানান যে পর্যাপ্ত আর্থিক স্বচ্ছলতা, জনবল, অবকাঠামোগত সুবিধা না থাকায় এ সংক্রান্ত রেকর্ড পত্র দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সংরক্ষণ করা দুষ্কর। ফলে ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর থেকে ২০০৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ের রেকর্ড পত্র ১০-১২ বছরের পুরনো। বিধায় সন্ধানী কার্যালয় স্থানান্তরের সময় নষ্ট হয়ে গেছে। এজন্য সন্ধানী দুঃখ প্রকাশ করেছে।
তবে সন্ধানী কর্তৃপক্ষের দেওয়া সনদ অস্বীকার করেননি বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।
শুনানিতে নিজাম হাজারীর আইনজীবী বলেন, নিজাম হাজারী ১৩ ইউনিট রক্তদান করে ৪৮৬ দিন বিশেষ রেয়াত পেয়ে কারা মুক্তি পেয়েছেন।
‘সাজা কম খেটেই বেরিয়ে যান সাংসদ’ শিরোনামে ২০১৪ সালের ১০ মে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়৷
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০০ সালের ১৬ আগস্ট অস্ত্র আইনের এক মামলায় নিজাম হাজারীর ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়। কিন্তু দুইবছর ১০ মাস কম সাজা খেটে কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।
পরে ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে নিজাম হাজারীর সংসদ সদস্য পদে থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেন ফেনী জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া।
রিট আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালের ৮ জুন রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
৩ আগস্ট এ রুলের শুনানি শেষে ১৭ আগস্ট রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেছিলেন হাইকোর্ট। তবে বিচারিক আদালতের একটি নথি না আসায় রায়ের দিন পিছিয়ে ২৩ আগস্ট ধার্য করা হয়। অস্ত্র মামলায় বিচার শুরুর আগে নিজাম হাজারী কতোদিন জেল খেটেছেন সে বিষয়ে নথি না পাওয়ায় সেদিন রায় দেননি আদালত। ২৩ আগস্টের আগেই সেটি দাখিল করবেন হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার এবং এর ভিত্তিতে ওইদিন রায় দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্ট ২৩ আগস্ট ওই নথিটি দাখিলের পর সেটি নিয়ে শুনানি শেষে ৩০ আগস্ট রায়ের দিন পুনর্নিধারণ করেন। পরে রায় দেওয়া শুরু হলেও তা স্থগিত করে আবার শুনানি শুরু হয়।
রিট আবেদনে বলা হয়, সংবিধানের ৬৬(২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুসারে, কোনো ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার এবং সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবেন না, যদি তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কমপক্ষে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হয়ে থাকে। সে হিসেবে নিজাম হাজারী ২০১৫ সালের আগে সংসদ সদস্য হতে পারেন না। অথচ তিনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সংসদ সদস্য হয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১৬
ইএস/এসআই