ঢাকা: অবসরে যাওয়ার ৬ মাস পরও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের যে সকল শিক্ষক সুযোগ-সুবিধা পাননি তাদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে ওই তালিকা অনুসারে তাদের পাওনা কতো হবে তার পরিমাণও জানতে চেয়েছেন উচ্চ আদালত।
এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
আগামী তিনমাসের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বেসরকারি শিক্ষক অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত বোর্ডের (ব্যানবেইস) সদস্য সচিব ও এ সংক্রান্ত ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস।
পরে মনজিল মোরসেদ জানান, ‘জীবন সায়াহ্নে ৭৬ হাজার শিক্ষকের আহাজারি’ শিরোনামে একটি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর ওই বিষয়ে জানতে চেয়ে ১৭ অক্টোবর সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়।
ওই নোটিশের জবাব না পেয়ে জনস্বার্থে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে চার আইনজীবী রিট দায়ের করেন। রিটে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করা হয়।
মনজিল মোরসেদ বলেন, আদালত অবসরে যাওয়ার ৬ মাস পরও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের যে সকল শিক্ষক সুযোগ-সুবিধা পাননি, তাদের তালিকা চেয়ে রুল জারি করেছেন। রুলে বেসরকারি শিক্ষকদের অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা দিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না- তাও জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
চার সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব, অর্থসচিব, শিক্ষাসচিবসহ সংশ্লিষ্ট ১৫ জনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সারা জীবন শিক্ষকতা করে অবসর গ্রহণের পর জীবন সায়াহ্নে এসে প্রায় ৭৬ হাজার শিক্ষক আহাজারি করছেন কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধার অর্থ না পেয়ে। শিক্ষকদের এমপিও’র (মান্থলি পে অর্ডার) ২ শতাংশ অর্থ কেটে রাখা হয় বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট তহবিলে’।
‘আর ৪ শতাংশ কেটে রাখা হয় অবসর সুবিধা বোর্ড তহবিলে। মাসিক বেতনের অংশ থেকে কেটে রাখা অর্থ এই খাতে জমা রাখলেও চাকরি শেষে তা পাওয়ার জন্য পোহাতে হচ্ছে অশেষ ভোগান্তি। বার্ধক্যে উপনীত শিক্ষকরা জীবনের শেষ সময়গুলোয় একটু ভালো থাকতে, সুস্থ থাকতে এই টাকার জন্য রাজধানীর নীলক্ষেতে ব্যানবেইস ভবনে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। এদের কেউ রোগাক্রান্ত। অর্থাভাবে চিকিৎসা করতে পারছেন না। প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনতেও পারছেন না। শিক্ষকদের অনেকেই মারা গেছেন অবসর ভাতার অর্থ হাতে না পেয়েই। এ অর্থের জন্য আবেদন করলেও তাদের অর্থ ছাড় হচ্ছে চার থেকে ছয় বছর পর’।
‘জানা গেছে, কল্যাণ ট্রাস্টে ৩১ হাজারের বেশি শিক্ষকের অর্থপ্রাপ্তি পেন্ডিং অবস্থায় রয়েছে। আর অবসর সুবিধা বোর্ডে টাকা পেতে বিলম্বের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ৪৫ হাজারের বেশি শিক্ষককে’।
‘শিক্ষকরা বলছেন, কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ে অবসর সুবিধা বোর্ডের অর্থপ্রাপ্তিতেই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বেশি’।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৬
ইএস/এএসআর