ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘সাত খুন অপরাধ জগতের মাইলফলক, সাজা বহাল থাক’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৭
‘সাত খুন অপরাধ জগতের মাইলফলক, সাজা বহাল থাক’

ঢাকা: অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, ‘যেখানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ হলো- আমাদের রক্ষা করা, সেখানে তারাই হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন বলে বিচারিক আদালত রায় দিয়েছেন। তাই নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনা অপরাধ জগতের মাইলফলক হয়ে থাকবে’।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যারা অপরাধে যুক্ত হবেন, তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আলোচিত সাত খুনের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানির পর রোববার (২৩ জুলাই) এসব কথা বলেন তিনি।

অ্যাটর্নি জেনারেল এদিন রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি শেষ করেন। তিনি আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি অর্থাৎ, বিচারিক আদালতের রায় বহাল রাখার আরজি জানান।
 
এরপর শুনানি করবেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।

শুনানিতে মাহবুবে আলম বলেন, এ ঘটনাটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত। র‌্যাবের তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মাসুদ রানা ও আরিফ হোসেন পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত করেছেন।    

অ্যাটর্নি জেনারেল পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ শুনানি বেশ কিছুদিন আগেই শুরু হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষে সমাপনী বক্তব্য শেষ করেছি। আমার বক্তব্যে বলেছি, এটি একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য যুক্ত থাকায় জনমনে বিষন্নতা দেখা দিয়েছে।   আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে এবং সাজা বহাল রাখকে এই মামলায় বিচারিক আদালতে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হয়েছে’।

‘এ শাস্তি বহাল থাকা উচিত বলে আমি বক্তব্য রেখেছি। তার কারণ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজ হলো, আমাদের রক্ষা করা। এই বাহিনীর কেউ যদি হত্যাকাণ্ডের মত জঘন্য কাজে যুক্ত হয়ে যান, তার চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না’।

মাহবুবে আলম বলেন, ‘সাত খুনের পেছনে যারা আছেন, অর্থাৎ নুর হোসেন, তারেককে সরাসরি হত্যাকাণ্ডের স্থানে না দেখা গেলেও তাদের আদেশ-নির্দেশে ও প্ররোচনায়ই ঘটনা ঘটেছে। অপরাধমূলক কাজের ষড়যন্ত্রের তাদের যুক্ত থাকার কারণেই এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে’।

‘তাদের বিচারিক আদালত যে সাজা দিয়েছেন, তা সঠিক। এ সাজা বহাল থাকার পক্ষেই বক্তব্য দিয়েছি। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আমাদের বক্তব্য শেষ হয়েছে। এখন আসামিপক্ষের যদি প্রতি উত্তর দেওয়ার থাকে, তা তারা দেবেন। অতি শিগগিরই মামলার শুনানি শেষ হয়ে যাবে বলে আমি আশা করি’।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমি বলেছি, দেশে যতো অপরাধ ঘটেছে, সে সমস্ত অপরাধের পরিসংখ্যান যদি নেওয়া হয়, তার মধ্যে এই অপরাধটি অপরাধজগতের মাইলফলক হয়ে থাকবে। এর কারণ, যেখানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ হলো আমাদের রক্ষা করা, সেখানে তারাই হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন বলে আদালত রায় দিয়েছেন’।

‘আরেকটি ঘটনা এই নব্য ধনী, ঠিকাদার বা এ ধরনের যারা অতি তাড়াতাড়ি বড়লোক হয়ে যাচ্ছেন, তারা নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকেন, অঢেল টাকা ঢালেন। এ মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণে এসেছে, একজন ঠিকাদার এ হত্যাকাণ্ড ঘটাতে সমস্ত টাকা-পয়সা দিয়েছেন’।

‘কাজেই টাকার বিনিময়ে মানুষকে হত্যা করানো জঘন্য অপরাধ। এজন্যই আমি বলেছি, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকা ও বাইরের লোকের প্ররোচনা বা টাকার বিনিময়ে হত্যাকাণ্ড ঘটানো- এটিও দুর্ভাগ্যজনক। এজন্যই আমি এটিকে মাইলফলক বলেছি’- বলেন মাহবুবে আলম।

তিনি বলেন, ‘হাইকোর্টকে বলেছি- এ ঘটনার পর থেকেই আমাদের উচ্চ আদালত জুডিশিয়াল নোটিশে নিয়েছিলেন ও আদেশ-নির্দেশ দিয়েছিলেন। সঠিকভাবে যেন এ মামলার তদন্ত হয়- সে নির্দেশ দিয়েছিলেন’।

‘আদালতের উদ্দেশ্য ছিল, প্রথম থেকেই এখানে যেন কেউ অপরাধ করে না পার পেয়ে যান। আজকে যদি কোনো ধরনের অজুহাতে কারো সাজা কমানো হয়, তাহলে আইন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আদালতের যে  ভূমিকা- সেটি ব্যাহত হবে বলেও মনে করি’।

মাহবুবে আলম বলেন, ‘সাক্ষীদের সাক্ষ্যে পেয়েছি- নুর হোসেনই মাসে মাসে একজন সেনা কর্মকর্তাকে ১০ লাখ টাকা করে দিতেন। তার অফিসে একজন সেনা কর্মকর্তা ঘটনার আগের দিন রাত দশটা পর্যন্ত ছিলেন। এ ঘটনায় মনে হয়েছে- এ রকমভাবে যদি তারা অর্থ ব্যয় না করতেন, প্রভাবান্বিত না করতেন, তাহলে হয়তো এমন ঘটনা ঘটতো না’।

‘মারার জন্য তারা ইট-বালুর বস্তা- যাকে আমি বলবো, মরণ সামগ্রী তৈরি করেছিলেন। এ মরণ সামগ্রীর টিমে যারা ছিলেন, তাদের মধ্যে দু’জনকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আমি বলেছি, সব ক’জনের মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত ছিল। তবে যেহেতু রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আপিল করা হয়নি, সেহেতু আমি তাদের সাজা বাড়ানোর কথা বলতে পারি না’।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা আছে কি-না- জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘বিভিন্ন দেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকেরা অপরাধে জড়িত হয়ে যান। পৃথিবীর সব দেশেই এটি আছে। কিন্তু এ ব্যাপারে রাষ্ট্রকে সব সময় হুশিয়ার থাকতে হবে, দৃষ্টি রাখতে হবে। যারা অপরাধে যুক্ত হবেন, তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি’।

গত ১৬ জানুয়ারি চাঞ্চল্যকর সাত খুনের দুই মামলার রায়ে নূর হোসেন ও র্যাবের বরখাস্তকৃত তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালত। ৩৫ জন আসামির মধ্যে বাকি ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

পরে ডেথ রেফারেন্স আসে হাইকোর্টে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২৬ জনের মধ্যে গ্রেফতার ও আত্মসমর্পণ করে কারাগারে থাকা ২০ জন নিয়মিত ও জেল আপিল করেন। গত ২২ মে থেকে বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চে আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি একসঙ্গে চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৭
ইএস/এএসআর
**
সাত খুনের ডেথ রেফারেন্স-আপিলে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি শেষ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।